বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া-ক্লাসে সংস্কার: প্রতি শিক্ষার্থীকে প্রতি সেমিস্টারে দৌড়াতে হবে অন্তত শতাধিক কিলোমিটার!
  2018-10-10 18:16:40  cri

চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোর একটির নাম জি চিন কাং। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাম্পাসে কোথায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পাওয়া যায়? লাইব্রেরিতে? পার্কে? না, এই ক্যাম্পাসে যেখানে সবচেয়ে বেশি ছাত্রছাত্রী দেখা যায়, সেটা হচ্ছে খেলার মাঠ।

দিন থেকে রাত পর্যন্ত—সব সময় এখানে কোনা-না-কোনো শিক্ষার্থীকে দৌড়াতে দেখা যায়। চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় চীনের হং চৌ শহরে অবস্থিত। এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত একটি দর্শনীয় স্থান সি হু বা পশ্চিম হ্রদ। তবে সিহুর চেয়ে অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকেই যেন ভিড় বেশি!

প্রশ্ন হচ্ছে: কেন? কেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে আসে? কারণ, ২০১৮ সাল থেকে চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। চলতি বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্রীড়া-ক্লাসে অংশগ্রহণের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এখন থেকে ক্রীড়া-ক্লাসে দুটি অংশ থাকবে। প্রতিটি সেমিস্টারে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৫৪টি ক্রীড়া-ক্লাসে অংশ নিতে হবে। তা ছাড়া, প্রতিদিন বিকেল চারটা ৪৫ মিনিট থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলবে ক্রীড়া-ক্লাস।

চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে একটি বিশেষ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করছে। এই অ্যাপ শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চার রেকর্ড সংরক্ষণ করবে। নতুন নিয়মে প্রতি সেমিস্টারে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে অন্তত ৪৮ দিন দৌড়াতে হবে। প্রতিবার প্রতিজন ছাত্রকে ৩.৫ কিলোমিটার এবং প্রতিজন মেয়েকে ২.৫ কিলোমিটার দৌড়াতে হবে। মোবাইল অ্যাপ এর হিসেব রাখবে।

চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক উ ইয়ে হাই সাংবাদিকদের জানান, এ-সংস্কার চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে উঠবে এবং তারা শারীরিকভাবে আরও সামর্থ্যবান হয়ে বড় হবে।

কোনো কোনো শিক্ষার্থীর পিতামাতা নতুন নিয়মে খুশী। তাদের আশঙ্কা ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ছেলেমেয়ারা শরীরচর্চা বাদ দিবে বা কম করবে। এখন নতুন নিয়ম তাদের চিন্তামুক্ত করেছে।

চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অন্তত একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। একটু আগেই বলেছি, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রতি সেমিস্টানে ৫৪টি ক্রীড়া-ক্লাসে অংশ নিতে হবে। এই ৫৪টি ক্লাসের মধ্যে রয়েছে ৩২টি পেশাদার শিক্ষাক্লাস, ১৬টি ট্যুর, ২টি শারীরিক পরীক্ষা, ২টি ক্রীড়া নিরাপত্তা ও তত্ত্ব পরীক্ষা এবং ২টি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ক্লাস।

উ ইয়ে হাই জানান, পেশাদার ক্রীড়াশিক্ষা দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি—এই দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা দীর্ঘমেয়াদি ক্লাসে অংশ নিবে। বাস্কেটবল, ভলিবল ও ফুটবলসহ ৩৬ ধরনের ক্লাসের মধ্যে অন্তত একটি বাছাই করতে হবে শিক্ষার্থীকে। ট্যুর ক্লাসও নিতে হবে তাদের। এতে চালু হবে ৮টি ক্লাব এবং ৩০টি বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া।

প্রশ্ন হচ্ছে: শিক্ষকের সংখ্যা কতো হবে? এর প্রসঙ্গে পরিচালক উ ইয়ে হাই বলেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রীড়াশিক্ষকের সংখ্যা ৬৪। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন পেশাদার ক্রীড়াবিদ। তারাও সহকারী হিসেবে কাজ করবেন।

এসব ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার উন্নয়ন করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি তাদের গড়ে তুলতে চায় চরিত্রবান হিসেবে। ক্লাসের বাইরে শিক্ষার্থীরা কতোটা ক্রীড়াচর্চা করবে, তা তাদের চূড়ান্ত স্কোরের উপর প্রভাব ফেলবে। আগে যেখানে চূড়ান্ত স্কোরে ক্রীড়ার অবদান থাকতো ১০ শতাংশ, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়াবে ১৫ শতাংশে।

উ ইয়ে হাই বলেন, গবেষণা অনুসারে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্রীড়ার চর্চা নাই বললেই চলে। তাই ক্লাসের বাইরে ব্যক্তিগত সময়েও বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়াচর্চাকে উত্সাহ দেয়।

একটু আগে আমরা বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশেষ মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী প্রতিদিন কতোটুকু দৌড়াল, তা রেকর্ড করা হয়। যদি তারা প্রতি সেমিস্টারে মোট ৪৮ বার এবং প্রতিবার ৩.৫ কিলোমিটার করে দৌড়ান, তবে সম্পূর্ণ মার্কস পাবেন। আমরা একটু হিসাব করি। যদি একজন ছেলে ৪৮ বার এবং প্রতিবার ৩.৫ কিলোমিটার করে দৌড়ায়, তবে একটি সেমিস্টারে সে মোট দৌড়াবে ১৬৮ কিলোমিটার। অন্যদিকে, একটি মেয়ে ৪৮ বার এবং প্রতিবার ২.৫ কিলোমিটার দৌড়ালে সে এক সেমিস্টারে মোট দৌড়াবে ১২০ কিলোমটার।

এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের কোনো নকল করার সুযোগ নেই। কারণ, প্রতিবার দৌড় শেষ করে তাদেরকে নিজের একটি ছবি অ্যাপ্লিকেশনে আপলোড করতে হবে। আর অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে দৌড়ের দূরত্ব রেকর্ড করে রাখবে।

শিক্ষার্থীদের আরও ক্রীড়াচর্চার ক্ষেত্রে সময় দেয়ার জন্য চলতি বছর থেকে প্রতিদিন বিকেলের শেষ ক্লাসটি হবে ক্রীড়াবিষয়ক। একে ডাকা হবে 'ক্রীড়া সময়' বলে এবং শিক্ষার্থীরা এ সময় নিজেদের ইচ্ছামতো লেখাধুলা করতে পারবে। নতুন সেমিস্টার শুরুর পর থেকেই নতুন নিয়মের সুফল পাওয়া যেতে শুরু করেছে। খেলার মাঠে এখন সবসময় শিক্ষার্থীদের পাওয়া যায়।

পদার্থবিদ্যা বিভাগের একজন নতুন ছাত্রী সাংবাদিককে জানিয়েছেন, উনি আগে দৌড় পছন্দ করতেন না। তবে নিয়মের ফলে তাকে দৌড়াতে হয়। কিছুদিন ক্রীড়াচর্চা করার পর তিনি আবিষ্কার করেন যে, এমন ব্যায়াম তার কল্পনার চেয়ে ভাল। ধাপে ধাপে তিনি নিয়মের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন। এখন প্রতিবার ২.৫ কিলোমিটার দৌড়ানো তাঁর জন্য সহজ। বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়াতে বা অন্যান্য ক্রীড়ায় অংশ নেওয়া এখন তার কাছে আনন্দের ব্যাপার।(শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040