কোটা সংস্কার আন্দোলন, কোটা বাতিল এবং পুনর্বহালের দাবি
  2018-10-07 19:50:24  cri
সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে যারা নিয়োগ পান তারা থাকেন নবম ও ১৩তম গ্রেডের মধ্যে। এ সব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতবিন্ধীদের জন্যসহ মোট ৫৬ শতাংশ পদ সংরক্ষিত ছিল। কোটা সংস্কারের দাবিতে ফেব্রুয়ারিতে দেশব্যাপী চাকরি প্রত্যাশীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা বাতিল করা হবে বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে গঠন করা হয় উচ্চ পর্যায়ের সচিব কমিটি। সম্প্রতি সচিব কমিটি ৫৬ শতাংশ কোটা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে। সেই প্রস্তাবে গত ৩ অক্টোবর অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অর্থাৎ সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগে এখন থেকে আর কোটা থাকছে না।

তবে, সরকারি চাকরির তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগে কোটা পদ্ধতি বহাল রাখার সুপারিশ করে সচিব কমিটি। মন্ত্রিসভা এ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে। আর প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর শ্রেণির জন্য আইন অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া বহাল থাকবে। মন্ত্রিসভা অনুমোদনের পর দিন অর্থাৎ ৪ অক্টোবর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহাম্মদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে নিয়োগে নবম, দশম ১০ম এবং ১৩তম গ্রেড অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। এর মাধ্যমে এ গ্রেডগুলোতে কোটা পদ্ধতি আইনগতভাবে বাতিল হলো।

জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশনে যোগদান শেষ দেশে ফিরে ৩ অক্টোবর আহৃত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা পদ্ধতি বাতিলের প্রসঙ্গে বলেন, কোটা থাকলে যেহেতু সংস্কারের আন্দোলন হয় তাই কোটা বাতিল করে দেয়া হয়েছে। কাজেই কোটাও নেই আন্দোলনও নেই। কেউ কোটা চাইলে তাদের আন্দোলন করে তা আদায় করতে হবে বলে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে, কোটা বাতিলে মন্ত্রিসভার ঘোষণা ও প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল চেয়ে আন্দোলনে নামে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। ৪ অক্টোবর থেকে তারা রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। ৬ অক্টোবর তারা শাহবাগে সমাবেশ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে উল্লেখ করে আন্দোলনকারীরা বলেন, বংশ পরম্পপরায় তাদের সন্তান-সন্ততীদের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। বিএনপি-জামাতের শাসনামলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হাত দেয়া হয়নি উল্লেখ করে তারা জানান, স্বাধীনতার স্বপক্ষের একটি দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল মেনে নেয়া যায় না। দাবি না মানলে তারা কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলারও হুমকি দেন।

তবে, এর বিপরীত মতও রয়েছে। বহু মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তারা কোটা সুবিধা চান না। মুক্তিযোদ্ধার কোনো সুবিধার জন্য যুদ্ধ করেননি বলে দাবি করেন তারা। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হয় বলেও অভিমত কারো কারো।

এদিকে ৭ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তাদের নেতারা জানান ৫ দফা দাবির ভিত্তিতে তারা কোটা সংস্কার চেয়েছিলেন বাতিল নয়। তাই কোটা সংস্কার না করে বাতিলের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। তারা বলেন, শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতেই নয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও ৫ দফার আলোকে কোটা সংস্কার করতে হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নামে দায়ে মামলা প্রত্যাহার এবং আন্দোলনের সময় হামলাকারীদের বিচারের দাবিও জানান তারা। এছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধা নিশ্চিতেরও দাবি জানান কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।

কোটা পদ্ধতি বাতিলকে মোটের ওপর স্বাগত জানিয়েছেন বেশির ভাগ বিশ্লেষক ও বিশিষ্টজনেরা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বরাবরই কোটা সংস্কারের পক্ষে বলে এসেছেন। এ বিষয়ে সরকারের এবারের উদ্যোগকেও তিনি সাধুবাদ জানান। তবে কোটা পুরোপুরি বাতিল না করে সংস্কারের মাধ্যমে সমাজের অনুগ্রসর, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও নারীদের জন্য কিছু কোটা বহাল রাখা যেত বলে মনে করেন তিনি।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040