1006jingji
|
১. যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান একতরফা নেতিবাচক সিদ্ধান্ত ও চাপ চীনের অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে পারবে না এবং চীনা জাতিও এতে ভীত নয়। সম্প্রতি চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাও ফেং বেইজিংয়ে নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ-মন্তব্য করেন।
মুখপাত্র বলেন, তাঁর দেশ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও বাইরের চাপকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তিতে রূপান্তরিত করবে। পাশাপাশি, চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সবধরনের বাণিজ্য-বিরোধ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলতেও প্রস্তুত থাকবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নীতিমালা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য-বিরোধ মিটিয়ে ফেলার মধ্যেই দু'দেশের এবং বিশ্বের কল্যাণ নিহিত। তবে, দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্য-আলোচনা নতুন করে শুরু হবে কি না, তা সম্পূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করছে।
মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করা এবং চাপিয়ে-দেওয়া-সংকট মোকাবিলায় চীনের সামর্থ্যের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ না-করা। চীন আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মেটাতে চায়; আবার, যে-কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যও প্রস্তুত।
মুখপাত্র আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক আচরণ চীনকে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পথ থেকে সরাতে পারবে না।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন চীনের আরও ২০,০০০ কোটি ডলার মূল্যের রফতানিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করে এবং চীনের সকল রফতানিপণ্যের ওপর আরও অধিক হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দেয়।
২. চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য-বিরোধের ওপর সম্প্রতি বেইজিং যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে, সেটিকে 'খুবই কার্যকর' বলে আখ্যায়িত করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, শ্বেতপত্রে চীনের অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নেতিবাচক আচরণ তুলে ধরা হয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক 'ইনস্টিটিউট ফর চায়না-আমেরিকা স্টাডিজ'-এর সিনিয়র ফেলো সৌরভ গুপ্ত বলেন, চীনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগনীতিমালা আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বলে শ্বেতপত্রে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, চীন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতি ও সকল পক্ষের কল্যাণের নীতির ভিত্তিতে সমঝোতায় বিশ্বাসী।
সম্প্রতি সিনহুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌরভ গুপ্ত আরও বলেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না এবং একতরফাবাদ, সংরক্ষণবাদ ও স্বার্থপরতার চর্চা করে যাচ্ছে। এতে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের শৃঙ্খলা হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি প্রকাশিত চীনা শ্বেতপত্রকে 'সমযোপযোগী' বলেও আখ্যায়িত করেন।
বাকনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক চু চিছুন বলেন, চাপিয়ে-দেওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে শ্বেতপত্রটি প্রকাশ করে চীন সরকার জরুরি একটি কাজ করেছে। এতে চীনের অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে। একে চীন-যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী দফা বাণিজ্য-আলোচনার দৃঢ় ভিত্তি বলা যেতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্র কি যুক্তি ও সমতার ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য-বিরোধ মেটাতে আগ্রহী, নাকি একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার নেতিবাচক পথে এগিয়ে যেতে আগ্রহী?
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যাকসন ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র ফেলো স্টিফেন রোচ দু'দেশের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের বিরুদ্ধে শ্বেতপত্রটি একটি জরুরি জবাব।
৩. চলতি বছরের পয়লা নভেম্বর থেকে চীন ১৫৮৫টি শুল্কযোগ্য পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক কমাবে। এ-সিদ্ধান্ত কার্যকর হবার পর এসব পণ্যের ওপর থেকে গড়ে শুল্ক ১০.৫ শতাংশ থেকে কমে ৭.৮ শতাংশে দাঁড়াবে। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের কাস্টমস্ ট্যারিফ কমিশন সম্প্রতি এ-তথ্য জানায়।
কমিশনের তথ্যানুসারে, এই ১৫৮৫টি পণ্য চীনে মোট শুল্কযোগ্য পণ্যের ১৯ শতাংশ। আর নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকরের পর চীনে সকল শুল্কযোগ্য পণ্যের ওপর গড় শুল্কের হার দাঁড়াবে ৭.৫ শতাংশে, যা গত বছর ছিল ৯.৮ শতাংশ।
৪. চীনে চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে মোট ১০১,৭১৭ ইউনিট শিল্প-রোবট উৎপন্ন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়কালের চেয়ে ১৯.৪ শতাংশ বেশি। দেশটির শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ-তথ্য জানায়।
৫. সেবা-বাণিজ্যে বিদেশের সঙ্গে চীনের ঘাটতি অগাস্টেও বেড়েছে। চীনের 'স্টেট এডমিনিস্ট্রেশান অব ফরেন এক্সচেঞ্জ' (এসএএফই)-এর পরিসংখ্যান অনুসারে, অগাস্টে এ খাতে চীনের ঘাটতি ছিল ২৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। আগের মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে এই খাতে ঘাটতি ছিল ২৫৩০ কোটি ডলার।
অগাস্টে সেবা-বাণিজ্যে চীনের আয় হয় ১৮৪০ কোটি মার্কিন ডলার এবং ব্যয় হয় ৪৭৪০ কোটি মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, অগাস্টের পণ্যবাণিজ্যে চীনের উদ্বৃত্ত ছিল ৩৪০০ কোটি মার্কিন ডলার।
৬. চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে চীনের প্রধান প্রধান শিল্প-প্রতিষ্ঠানের আয় ১৬.২ শতাংশ বেড়েছে। জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এ-তথ্য জানিয়েছে। ব্যুরোর তথ্যানুসারে, শুধু গত অগাস্টে প্রধান শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় বাড়ে ৯.২ শতাংশ।
৭. চলতি বছর বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে ৩.৯ শতাংশ। আর আগামী বছর এ-হার দাঁড়াবে ৩.৭ শতাংশে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সম্প্রতি এই পূর্বাভাস দিয়েছে। এর আগে সংস্থাটি চলতি ও আগামী বছরে বৈশ্বিক বাণিজ্যে যথাক্রমে ৪.৪ ও ৪.০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক রবার্তো আজেভেদো জানান, বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধির হার পূর্ব-প্রত্যাশা পূরণ করে চলেছে। তবে, বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য-যুদ্ধ প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে দেবে। তিনি আরও বলেন, সংযম প্রদর্শন ও বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য-বিরোধ নিষ্পত্তি করা আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি জরুরি মনে হচ্ছে।
৮. চলতি বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়া প্রতি মাসে রফতানি করেছে ৫০০০ কোটি বা তারচেয়ে বেশি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে দেশটি রফতানি করেছে ৫০৫৮ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। রফতানি বৃদ্ধির কারণ হিসেবে স্থানীয়ভাবে তৈরি সেমিকন্ডাক্টর ও তৈলজাতীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য, শিল্প ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়।
৯. চলতি বছর ব্রুনেইয়ের অর্থনীতেতে ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। গত এপ্রিলে এক্ষেত্রে এডিবি'র পূর্বাভাস ছিল ১.৫ শতাংশ। ২০১৯ সালেও দেশটিতে ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি।
১০. আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আর্জেন্টিনাকে অতিরিক্ত ৭১০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে। সম্প্রতি নিউইয়র্কে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন লাগার্দে এবং আর্জেন্টাইন অর্থমন্ত্রী যৌথভাবে এই ঘোষণা দেন। পূর্ববর্তী চুক্তি অনুসারে, আর্জেন্টিনা আইএমএফের কাছ থেকে পাবে আরও ৫০০০ কোটি মার্কিন ডলার। আশা করা হচ্ছে, এই অর্থ দেশটিকে আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ও নিজস্ব আর্থিক নীতি বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করবে।
১১. আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন গীতা গোপীনাথ। তিনিই হবেন এ-পদে প্রথম নারী। সম্প্রতি তাঁর নিয়োগের কথা ঘোষণা করেন আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন ল্যাগার্দে। বিশ্ব ব্যাংক ও ওইসিডি'র প্রধান অর্থনীতিবিদও নারী।
আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ মরিস ওবস্টফেল্ডের স্থলাভিষিক্ত হবেন ৪৬ বছর বয়সী গীতা। চলতি বছরের শেষে অবসরে যাচ্ছেন মরিস। এর আগে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
গীতা গোপীনাথ ১৯৭১ সালে ৮ ডিসেম্বর ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতায় প্রাথমিক পড়াশুনা করেন। আর উচ্চশিক্ষা নেন দিল্লি ও আমেরিকায়। গীতার বাবা একজন কৃষক। আর মা গৃহকর্ত্রী।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন তিনি। এরপরেই শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০৫ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন।
১২. যুক্তরাষ্ট্রের ফটো-শেয়ারিং সাইট ইন্টাগ্রামের নতুন সিইও হিসেবে যোগ দিয়েছেন ফেসবুকের অ্যাডাম মোসেইরি। তিনি পয়লা অক্টোবর থেকে দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন। এর আগে ইনস্টাগ্রামের দুই কো-ফাউন্ডার কেভিন সিসট্রম ও মাইক ক্রিগার অপ্রত্যাশিতভাবে যথাক্রমে কোম্পানির সিইও এবং সিটিও'র পদ ছেড়ে দেন।
(আলিমুল হক)