প্রিয় শ্রোতা আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় শুনবেন বিস্তারিত।
নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিরোধী জোটের প্রার্থী ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ মালদ্বীপ গড়ে তুলার অঙ্গীকার করেন। একই সাথে আবদুল্লাহ ইয়ামিনকে জনগণের রায় মেনে নিয়ে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তর করার আহ্বান জানান।
বেশ কয়েক বছর ধরেই অস্থিরতা বিরাজ করছিল দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপে। ক্ষমতাবানদের সরাসরি বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। কখনও পুলিশের বিদ্রোহ, কখনও বিরোধী দল ও মতকে নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের বিরুদ্ধে।
এর আগে, ১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রায় তিন যুগ ধরে মালদ্বীপ মামুন আব্দুল গাইয়ুমের শাসন চলে। অবশ্য গাইয়ুমের ভোগবিলাসের সৌজন্যে দেশটির পর্যটন শিল্পের খ্যাতি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে তার আমলে প্রচণ্ড দুর্নীতিও দেখা যায়। ২০০৮ সালে দেশটির প্রথম সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে গাইয়ুমকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসেন সাবেক রাজবন্দি মোহামেদ নাসিদ।
নাসিদ দেশটিতে গণতন্ত্রের নতুন অধ্যায় সূচনা করেন এবং ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। কিন্তু বিভিন্ন বিতর্কের মুখে ২০১২ সালে নাসিদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং ইয়ামিন ক্ষমতায় থাকাকালে ২০১৫ সালে তাকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে, নির্বাচনে প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, মালদ্বীপে সফলভাবে সম্পন্ন হওয়া তৃতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনকে আমরা স্বাগত জানাই। এ নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহকে অভিনন্দন জানায় ভারত।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজস্ব প্রভাব বজায় রাখা চীনের জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধীদলের নেতা ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ জয়লাভের পর বৈদেশিক নীতিতে 'ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা' বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে চীন।
বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কেং শুয়াং বলেন, চীন মালদ্বীপের জনগণের পছন্দকে সম্মান জানায় এবং দুই দেশের মধ্যে চলমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বন্ধন আরো মজবুত করতে চায়।
"চীন সরকার চীনা কোম্পানিগুলোকে সব সময় মালদ্বীপে বিনিয়োগে উৎসাহ দিয়েছে। যাতে তারা দেশটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।"
উল্লেখ্য, মালদ্বীপে আবদুল্লাহ ইয়ামিনের শাসনামলে চীনের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কেং বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে সহযোগিতার মাধ্যমে উভয় দেশই লাভবান হয়েছে।
তিনি বলেন, বিনিয়োগের প্রসার এবং বাণিজ্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য চীন মালদ্বীপের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
মূলত ২০১৩ প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই মালদ্বীপের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উন্নত হতে থাকে। ২০১৪ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং মালদ্বীপ সফরে যান এবং হুলহুলে দ্বীপের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আধুনিকায়নে একটি চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় মালদ্বীপ। এ ছাড়া রাজধানী মালের সঙ্গে হুলহুলেকে সংযুক্ত করতে ১.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় চীন, যা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে প্রেসিডেন্ট সি'র উত্থাপিত 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের সমর্থনে বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে মালদ্বীপ।
২০১৭ সালে প্রায় তিন লাখ চীনা পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেন যা অন্য যে-কোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এ ছাড়া যৌথভাবে সাগর পর্যবেক্ষণকেন্দ্র স্থাপনসহ নানা বিষয়ে মালদ্বীপের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় চীন। আর এভাবেই ইয়ামিন সরকারের শাসনামলে চীন-মালদ্বীপের অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী হয়।
বর্তমান নতুন সরকারের শাসনামলে দু'দেশের জনগণের যৌথ কল্যাণে চীন-মালদ্বীপ সম্পর্ক আরো উন্নত হবে বলে আমরা আশা করি।