এবার আমরা অর্থনীতির অন্যান্য উন্নয়নসূচকের দিকে নজর দেই। চীনের অর্থনীতি ১৯৭৮ সালের ৩৬৪.৫ বিলিয়ন থেকে ২০১৭ সালে ৮২.৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে দাঁড়ায়। বর্তমান চীনের অর্থনীতির মোট পরিমাণ বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ২০১৭ সালে সারা চীনে বাসিন্দাদের গড় আয় ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ: ২৫,৯৭৪ ইউয়ান আরএমবি।
১৯৭৮ সাল থেকে চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি বাস্তবায়নেরআ কাজ শরু হয়। এর পর থেকে শিল্প ও কৃষি খাতে দ্রুত উন্নতি ঘটতে থাকে। ১৯৯৩ সালের মার্চ মাসে অষ্টম জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে 'সংবিধান'-এর ১৫তম ধারায় 'চীনের পরিকল্পিত অর্থনীতি'-কে 'সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি'-তে রূপান্তরিত করা হয়।
১৯৭৮ সালে সারা চীনে শহরের বাসিন্দাদের গৃহের আয়তন ছিল গড়ে মাত্র ৩.৬ বর্গমিটার। ৮৬.৯ লাখ বাসিন্দার তখন কোনো গৃহ-ই ছিল না। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টাদশ জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলন আয়োজনের পর শহরের বাসিন্দাদের গৃহের গড় আয়তন ২০১২ সালের ৩২.৯ বর্গমিটার থেকে ২০১৬ সালে ৩৬.৬ বর্গমিটারে উন্নীত হয়।
৪০ বছরের আগে চীন 'সাইকেল রাজ্য' বলে পরিচিত ছিল। আর ১৯৯০ সালে প্রথম বেইজিংয়ে 'গাড়ি মেলা' আয়োজিত হয়। কিন্তু এখন চীনের শহর ও গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারের গাড়ি আছে।
১৯৭৮ সালে চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি চালুর পর দেশটির শিল্প খাতে দ্রুত উন্নতি হতে থাকে। এখন চীনের স্বাধীন ও সম্পূর্ণ শিল্পব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। তবে, চীনের পণ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশ্বমানের নয়। সেজন্য চীনের শিল্প খাতে সংস্কার ও কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি।
২০২৫ সালের মধ্যে চীন নিজের তৈরি পণ্যের মান বাড়াতে চায়। এর জন্য শিল্প-কারখানায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এমন কিছু চীনা ব্র্যান্ড সরকার তৈরি করতে চায়, যেগুলো কিনতে ঝাঁপিয়ে পড়বে বাকী বিশ্ব।
২০৩৫ সালের মধ্যে চীনা কোম্পানিগুলো বিশ্বের বাকী সব কোম্পানিকে প্রযুক্তিতে, পণ্যের মানে এবং সুনামে ছাড়িয়ে যেতে চায়। আর ২০৪৯ সালের মধ্যে আধুনিক চীন যখন তার প্রতিষ্ঠার একশ বছর উদযাপন করবে, তখন তারা ম্যানুফ্যাকচারিং এ বিশ্বের এক নম্বর শক্তি হয়ে উঠতে চায়। এজন্যে চীন দশটি গুরুত্বপূর্ণ খাত চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে আছে সেমিকন্ডাকটার চিপ থেকে শুরু করে উড়োজাহাজ, রোবটিক্স থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক কার, হাইস্পিড রেলওয়ে থেকে ওশেন ইঞ্জিনিয়ারিং। এই মহাপরিকল্পনায় সরকার বিপুল সহায়তা দিচ্ছে। এই উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যা যা দরকার, তার সবই করছে তারা। আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি গবেষণা এবং উদ্ভাবনেও সাহায্য করা হচ্ছে। সামরিক বাহিনী এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে বলা হচ্ছে।
চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি চালুর পর বিগত ৪০ বছর ধরে দেশটির অর্থনীতি অনেক এগিয়েছে। চীনা লোকসংখ্যা প্রায় সারা বিশ্বের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। সেজন্য বিশ্বের অর্থনীতির ওপর চীনের প্রভাব বিরাট। ৪০ বছর ধরে চীন নিজেকে উন্মুক্ত করার মৌলিক নীতিতে অবিচল থেকেছে এবং অর্থনীতির বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ায় নিজেকে সামিল করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
১৯৭৮ সালে চীনের আমদানি-রপ্তানির মোটি পরিমাণ ছিল ৩৫.৫ বিলিয়ন ইউয়ান আরএমবি। ২০১৭ সালে চীনা শুল্ক সাধারণ বিভাগের পরিসংখ্যানে বলা হয়, সে-বছরে চীনের আমদানি-রপ্তানির মোট পরিমাণ ছিল ২৭.৭৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা ১৯৭৮ সালের ৭৮২.৮২ গুণ। এর মধ্যে আমদানির পরিমাণ ১৯৭৮ সালের ১৮.৭৪ বিলিয়ন ইউয়ান থেকে ২০১৭ সালে ১৫.৩৩ ট্রিলিয়নে বৃদ্ধি পায়। আর রপ্তানির পরিমাণ ১৯৭৮ সালের ১৬.৭৬ বিলিয়ন ইউয়ান থেকে ২০১৭ সালে ১২.৪৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে বৃদ্ধি পায়।
২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট দেখা দেওয়ার পর বিশ্বে বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধির হার কমতে শুরু করে। কিন্তু চীনা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির অব্যাহত ছিল। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রকাশিত বার্ষিক বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে, যা সারা বিশ্বের মোট আমদানির ১২.৮ শতাংশ।