জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশন: রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
  2018-09-23 19:08:55  cri
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর শুরু হবে সাধারণ পরিষদের অধিবেশন। ১ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় এ অধিবেশনে যোগ দেবেন বিশ্বের ১৯৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং প্রতিনিধিরা।

সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার তিনি নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যান। দুদিন লন্ডনে যাত্রা বিরতি শেষে রোববার যাত্রা করে সেইদিনই তিনি নিউইয়র্কে পৌঁছবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। তাতে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরবেন রোহিঙ্গা পরিস্থিতির সর্বসাম্প্রতিক অবস্থা।

প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানে বিষয় নিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। তিনি জানান, এবারের অধিবেশনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুটি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া ও পাশাপাশি এ সংকট মোকাবেলায় দূরদর্শী ভূমিকার জন্য দুটি পুরস্কার গ্রহণ করবেন শেখ হাসিনা। এছাড়া টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেশ কিছু উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। অধিবেশন চলাকালে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসসহ বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

এদিকে শুক্রবার জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান নিয়ে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি জানান, অধিবেশনে ভাষণে শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন লাভের চেষ্টা করবেন। গত অধিবেশনে এ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী উত্থাপিত ৫ দফা প্রস্তাবের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু সাফল্যের কথা তুলে ধরবেন তিনি।

এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরদিন বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সভায় অংশ নেবেন। মাসুদ বিন মোমেন জানান, ২৬ সেপ্টেম্বর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের অবস্থান এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসা অর্জন করেছে। নিজেদের নানা সমস্যা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষ নানা অসুবিধা স্বীকার করে ১১ লাখ বাস্তুহারা রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ তার দায়িত্ব পালন করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বজুড়ে রোহিঙ্গাদের পক্ষে জনমত তৈরি হলেও মানবিক সহায়তা ও রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। যদিও মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে

বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে । কিন্তু দেশটি এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উপরন্তু কিছু দিন আগে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি উল্টো অভিযোগ করেন যে বাংলাদেশ প্রস্তুত নয় বলেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি।

মিয়ানমার নেত্রীর এ মিথ্যা বক্তব্যের জবাব দেয়ার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের এ অধিবশনকে কাজে লাগাতে পারবেন। মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করা সম্ভব হতে পারে। জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিশ্বনেতাদে সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়টি তিনি ভালোভাবেই তুলে ধরতে পারবেন বলে সবাই আশাবাদী।

এদিকে রোহিঙ্গা সংকট: বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাড়া শিরোনামে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় একট গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অনেক বিশ্লেষক অভিযোগ করেন, রোহিঙ্গা সমস্যায় বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে অনেক বেশি নমনীয় আচরণ করেছে। কিন্তু কঠোর না হলে মিয়ানমার কখনো রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।

তবে, পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক এ অভিমতের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে বল প্রয়োগের চেয়ে প্রতিবেশিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে সব সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয়েছে। সরকার সে পথ ধরেই এগুচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পথেই মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করবে বাংলাদেশ।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040