উগান্ডার কারুমা পানিবিদ্যুতকেন্দ্র: চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার নিদর্শন
  2018-09-17 15:12:27  cri

২০১৫ সালে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের জোহানেসবার্গ শীর্ষসম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীন-আফ্রিকা নতুন কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক সার্বিক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত করার কথা বলেছিলেন। এর পর চীন আফ্রিকার সঙ্গে শিল্পায়ন, কৃষির আধুনিকায়ন, অবকাঠামো, ব্যাংকিং, সবুজায়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, দারিদ্র্যবিমোচন, গণস্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়। চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উগান্ডার কারুমা পানিবিদ্যুতকেন্দ্র।

উগান্ডার উত্তরাঞ্চলে চীনা বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় কর্মীদের সহায়তায় বাস্তবায়ন করেন দেশটির বৃহত্তম প্রকল্প 'কারুমা পানিবিদ্যুতকেন্দ্র'। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ১৫ শতাংশ বহন করে উগান্ডার সরকার এবং বাকি ৮৫ শতাংশ ঋণ দেয় চীন। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাজ শেষ হবে চলতি বছরের শেষ দিকে। এটি পূর্ব আফ্রিকার বৃহত্তম পানিবিদ্যুতকেন্দ্র।

মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহারের দিক দিয়ে উগান্ডা বিশ্বের সবচেয়ে নিচের দিকের একটি দেশ। দেশটির শহুরে বাসিন্দাদের মাত্র ৪০ শতাংশ বিদ্যুতের আওতায় আছেন। আর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মাত্র ৬ শতাংশ বিদ্যুত ব্যবহার করার সুযোগ পান। বিদ্যুত কেনার মতো সামর্থ্য উগান্ডার অধিকাংশ মানুষের নেই। তবে দেশটিতে সহজে পানিবিদ্যুত উত্পাদনের মতো প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে। কারুমা প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার দেং ছাং ই বলেন, উগান্ডার সংশ্লিষ্ট নদীতে পানির প্রবাহ স্থিতিশীল। বছরের সবসময় এই নদীতে যথেষ্ট পানি থাকে; থাকে পানির প্রবাহ। তিনি বলেন, "দু'দেশের নেতৃবৃন্দ যৌথভাবে কারুমা প্রকল্প হাতে নেন। প্রকল্পটি উগান্ডাকে সমৃদ্ধ ও উন্নত করার শত বছরের স্বপ্ন পূরণের বাহন হতে পারে। এটি উগান্ডার 'উন্নয়ন পরিকল্পনা, ২০৪০'-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারুমা পানিবিদ্যুতকেন্দ্র স্থিতিশীলভাবে বিদ্যুত সরবরাহ করতে পারবে। বিদ্যুতের দামও পড়বে কম। এই একটি কেন্দ্রের মাধ্যমে উগান্ডার বিদ্যুত-উত্পদানক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। এ থেকে উগান্ডার সরকার প্রতিবছর ২০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করবে। এটি হবে সেদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার অন্যতম হাতিয়ার এবং দেশটির শিল্পায়ন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য সহায়ক। উগান্ডা এর মাধ্যমে মধ্যম-আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারো।"

উগান্ডা বিদ্যুত উত্পাদন কোম্পানি কারুমা প্রকল্পের অন্যতম মালিক। কোম্পানির সহযোগিতাবিষয়ক ম্যানেজার সাইমন ক্যাসেটে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও স্থানীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ক্ষেত্রে চীনের পানিবিদ্যুত কোম্পানি খুবই যোগ্য। তিনি বলেন, "কারুমি পানিবিদ্যুতকেন্দ্রটির উত্পাদনক্ষমতা হবে ৬০০ মেগাওয়াট। এটি নির্মাণকালে চীনা কোম্পানি আমাদের মতামত শুনেছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিকল্পনা সংশোধন করেছে। চীনা কোম্পানি খুবই দায়িত্বশীল। আমরা বিশ্বাস করি, প্রকল্প বাস্তবায়নকাজ সময়মতো শেষ হবে। চীনা কোম্পানিটি আমাদের কর্মীদেরকে প্রশিক্ষণও দিয়েছে। আমার মনে হয়, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রকল্প বাস্তবায়নের পর আমাদের কর্মীদের বিদ্যুতকেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি মনে করি, ভবিষ্যতে দু'দেশের মধ্যে উচ্চমানের প্রযুক্তি এবং নবায়ন ও উদ্ভাবন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদার হবে।"

কারুমা প্রকল্প স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকাজে মোট ৬৩০০ স্থানীয় কর্মী নিয়োজিত আছেন। খামিসি সোনিকো হলেন তাদের একজন। তিনি পাঁচ বছর আগে একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে এখানে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি এইচআর-এর উপ-ব্যবস্থাপক। খামিসি কাজের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন কারুমা প্রকল্পে যোগ দেওয়ার পর।

২০১২ সালের নভেম্বরে খামিসি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার পর এই প্রকল্পে যোগ দেন। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি মূলত পড়াশুনা করেছেন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে। কিন্তু তিনি প্রকল্পে যোগ দেন একজন গাড়িচালক হিসেবে। পরে তিনি মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে যোগ দেন।

খামিসি চীনা কোম্পানিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, (রে ৩)

"কারুমা প্রকল্পে কাজ করার সময় আমি বিভিন্ন ধরনে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পেয়েছি। আমি শুধু একটি সহজ কাজ করতাম না। বর্তমান আমি যে-কোনো চ্যালেঞ্জ নিতে পারি। আমি বলতে চাই, চীনা কোম্পানি আমাকে সুযোগ দিয়েছে। আমার দক্ষতা বৃদ্ধিতে কোম্পানির ভূমিকা অনস্বীকার্য।"

খামিসি মনে করেন, কারুমা বিদ্যুতকেন্দ্র এর আশেপাশের এলাকার সমাজ ও অর্থনীতির উন্নয়নে বিরাট চালিকাশক্তির ভূমিকা পালন করছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "কারুমা প্রকল্প এর আশেপাশের এলাকার অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি ঘটিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের আয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানকার যে তরুণ আগে বাসে পানি বিক্রি করতেন, এখন তিনি জমি কিনেছেন ও ব্যবসা করছেন।"

চীনা কোম্পানি সামাজিক দায়িত্বও পালন করছে। চীনা কোম্পানিটি প্রকল্পস্থল থেকে চার ঘন্টার গাড়িদূরত্বে অবস্থিত একটি গ্রামে সেতু নির্মাণ করেছে এবং কাছাকাছি একটি স্কুলে বিনামূল্যে চিকিত্সাসেবা দিয়ে থাকে। গত ৮ মার্চ প্রকল্পের পক্ষ থেকে স্থানীয় দু'জন ছাত্রীকে চার বছরের টিউশন ফি ও যাতায়াত খরচ দেওয়া হয়েছে বৃত্তিস্বরূপ। কারুমা থানা কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াশিংটন ছায়া কোম্পানির জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমের সাক্ষী ও সুবিধাভোগী। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "কারুমা প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুর দিকে চীনা কোম্পানি উগান্ডা সরকারকে স্থানীয় সমাজ উন্নয়নে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল; প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চিকিত্সাকেন্দ্র ও স্কুল নির্মাণ এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সাহায্য দান করার ব্যাপারে। কোম্পানি প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে। আমরা চীনা কোম্পানির কর্মীদের সঙ্গে সুষ্ঠু সম্পর্ক বজায় রাখছি। কারণ, তাঁরা সত্যি সত্যিই আমাদেরকে অনেক সহায়তা করেছেন। চীনা কোম্পানি আমাদের অবকাঠামো নির্মাণে অংশ নেয়। তাঁদের সহায়তায় আমাদের পানীয় জলের অভাব পূরণ হয়েছে; আমরা নতুন গৃহে বাস করছি; নতুন সড়ক ব্যবহার করছি।"

কারুমা প্রকল্পের কার্যালয়ে একটি শ্লোগানসমৃদ্ধ বোর্ড আছে। শ্লোগানটি হচ্ছে: 'উন্নততর উগান্ডা গড়ে তুলতে চীনের পানিবিদ্যুতআ।' বলা বাহুল্য, উগান্ডার মতো আফ্রিকার অন্যান্য দেশেও চীনের বিভিন্ন প্রকল্প আছে এবং সেগুলো সেসব দেশের অর্থনীতি ও সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও জোরদার হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040