আপনি কি খুব ব্যস্ত?
  2018-09-20 09:17:02  cri

বর্তমানে চীনের শহর ও গ্রামের অধিকাংশ মানুষই খুব ব্যস্ত। কার বয়স কতো, কে কোন চাকরি করে, দিনে কাজ করেন নাকি রাতে—এগুলো বিষয় নয়। প্রায় সবাই ব্যস্ত। কেউ কেউ একাধিক চাকরি করেন। এরই মধ্যে যদি খানিকটা সময় পান, তখন আবার ছুটতে হয় জিমে শরীরচর্চার জন্য। কেউ কেউ সামান্য অবসর সময় কাটান বই পড়ে।

জীবনের গতি ক্রমাগত বাড়ছে। আপনি কখন কাজ শেষ করেন?

কেউ কেউ সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কাজ করেন; কেউ কেউ অতিরিক্ত সময় কাজ করেন; কেউ কেউ ভোর পর্যন্ত কাজ করেন। কোনো কোনো কোম্পানিতে কাজের নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই। যখন হাতের কাজ শেষ হবে, তখন মিলবে ছুটি।

তৃণমূল পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারাও খুব ব্যস্ত বলে জানিয়েছেন চিয়াংসু প্রদেশের চেন চিয়াং শহরের একটি কমিউনিটি অফিসের কর্মকর্তা হ্য ছেং। কয়েক সপ্তাহ আগে হ্য ছেং কমিউনিটি পরিবেশ অনাবিলকরণ গ্রুপে যোগ দেন এবং তখন থেকে টানা এক মাস তিনি কোনো ছুটি নেননি। তাদের কমিউনিটির ১৮০টি পরিবারকে স্থানান্তর করতে হয় এবং তাদের সঙ্গে এ-ব্যাপারে আলোচনা করা হ্য ছেংয়ের কাজ। দেখা গেল, একটি পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য দিনের সময় কাজের জন্য বাইরে থাকেন; কোনো পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য আছেন অন্য শহরে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে হ্য ছেংকে রাতে বা ছুটির দিনেও কাজ করতে হয়। তার অফিস শুরু হয় সকাল ৯টায়। কিন্তু রাত ১০টা পর্যন্ত তিনি কাজ শেষ করতে পারেন না।

জুং ইও একজন তৃণমূল পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা। তিনি বেইজিং শহরের মু লিন জেলার একজন কর্মকর্তা। ছুটির সময় তিব্বতে ভ্রমণ করার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু বেইজিং সম্প্রতি বন্যা-প্রতিরোধ সময়কালে প্রবেশ করায় তিনি তার ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হন।

অনেকে মনে করেন শিক্ষকতা একটা চমত্কার পেশা। কারণ, এই পেশায় প্রতিবছর লম্বা ছুটি পাওয়া যায়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, সকল শিক্ষক তাদের শিক্ষার্থীদের মতো লম্বা ছুটি উপভোগ করতে পারেন না। লি ছান সিছুয়ান প্রদেশের ছেং তু শহরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক শিক্ষক। অফিসের সাধারণ কাজ তাকে করতে হয়। পাশাপাশি তাকে শিক্ষার্থীদের কয়েকটি সাংস্কৃতিক দলের দায়িত্বেও রাখা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা দিনের বেলা ক্লাস করে। তাই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য রিহার্সাল ও প্রশিক্ষণ নিতে তাদের রাত ছাড়া গতি নেই। তাই রাত ৮টা থেকে ১১ টা লি ছান ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে থাকেন; তাদের প্রশিক্ষণ দেন, রিহার্সেল করান। তারপর তাদের নিরাপদে ডরমিটরিতে ফেরা নিশ্চিত করে হাতের বাকি কাজ শেষ করেন। সপ্তাহের দু-একটা দিন তাকে মধ্যরাত ১টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। তিনি জানান, বাসায় ফিরে আর কিছুই করতে ইচ্ছা করে না। তিনি এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার সময়ও কখনও কখনও কাজ করেন। তাই তার বন্ধুরা এখন তাকে আর কোনো আড্ডায় ডাকেন না!

কোনো কোনো কোম্পানির কর্মীদের কাজ প্রকল্প বাস্তবায়নকালে অনেক বেড়ে যায়। ইয়ান হুয়ে ফেং বেইজিংয়ের একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপক। প্রতিদিন রাত ১২টায় তিনি অফিসের কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরেন। গেল ৬ মাসে তিনি একবারও চলচ্চিত্র দেখতে সিনেমাহলে যেতে পারেননি। তার কোম্পানির অফিসে কাজের সময়সূচি নেই। হাতের কাজ শেষ না-করলে ছুটি নেই। এতো ব্যস্ততার মধ্যেও তাকে প্রতিদিন এক ঘন্টা দৌঁড়াতে হয়; শরীরচর্চা করতে হয়। শরীরটা ঠিক না-থাকলে কাজ করবেন কীভাবে!

কেন সবাই এতো ব্যস্ত?

চাও খাই নিজস্ব ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। নিজে বস হলেও, সহজে ছুটি নিতে পারেন না। তার কোম্পানি মাত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি প্রতিদিন ১০ ঘন্টা কাজ করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু আসলে তাকে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন অতিরিক্ত কাজ করতে হয়! তিনি বলেন, তার শরীরও বিশ্রাম চায়। কিন্তু বিশ্রাম নিলে কোম্পানি উন্নত হবে না!

৪০ বছর বয়সী লি সিয়াও লিয়ান একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরি পরিষ্কারের কাজ করেন। তিনি তার অন্য একজন সমকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন ৬ তলার ৭২টি টয়লেট এবং বাথরুম পরিষ্কার করেন এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে প্রতিদিন প্রতিটি টয়লেট এবং বাথরুম দুই থেকে তিন বার পরিষ্কার করতে হয়। দুপুরেও তারা বিশ্রাম নিতে পারেন না। ক্লান্ত হলে তারা সিঁড়িতে কিছুক্ষণের জন্য বসে থাকেন। তিনি জানান, পুরো বেতন পেতে তাকে এভাবে নিরলস কাজ করতে হয়। একটানা কাজ করে তিনি ক্লান্ত হলেও, অভিযোগ করেন না। কারণ, এই কাজের জন্য লোকের অভাব নেই।

চীনা রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের 'অবসর অর্থনীতি' গবেষণালয়ের পরিচালক ওয়াং ছি ইয়ান মনে করেন, মানুষের সময় কয়েকটি অংশে বিভক্ত থাকা উচিত: কাজ, বিশ্রাম,পারিবারিক কাজ, ও ঘুম। কাজ বেড়ে গেলে সবার আগে কমে যায় বিশ্রামের সময়।

বিশ্রাম মানুষের অধিকার। ওভারটাইম মে, পেইড লিভসহ বিভিন্ন বিষয় চীনের আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে; যেমন: প্রতিদিন অতিরিক্ত কাজের সময় ৩ ঘন্টার বেশি হতে পারবে না, ইত্যাদি।

অন্যদিকে, এখন চীনে নতুন পেশার সৃষ্টি হয়েছে; যেমন: প্যাকেজ সরবরাহকর্মী, খাদ্য সরবরাহকর্মী, নেটওয়ার্ক অ্যাঙ্কর, নেটওয়ার্ক চালক ইত্যাদি। তাদের কাজ সনাতন অন্যান্য কাজের মতো নয়। তাদের অধিকার রক্ষায় প্রচলিত আইনে কিছু নাই। নাতুন আইন প্রণয়ন করা জরুরি বলেও মনে করে সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।

(শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040