ভারত থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানি: সহযোগিতার নয়া দিগন্ত
  2018-09-16 19:06:01  cri
আন্তসীমান্ত বাণিজ্য সহযোগিতার আওতায় ভারত থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের চাহিদার ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত থেকে আমদানি করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে অচিরেই ভারতের ত্রিপুরা থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

এ উপলক্ষে ১০ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিদ্যুৎ সাব স্টেশনের দ্বিতীয় পর্যায় উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা থেকে রাজ্য দুটির মুখ্যমন্ত্রীরা যোগ দেন এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন পেলে তারা বাংলাদেশের কাছে আরও ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ তার এ আগ্রহকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। ভারতসহ প্রতিবেশি দেশগুলোর সহায়তাও কামনা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন উদ্বোধনের পর দুই প্রধানমন্ত্রী আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গজে রেললাইন প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশ এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল সংযোগ পুনঃপ্রকল্পের নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ভারতীয় ঋণে আখাউড়া-আগরতলা রেলপ্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় ৭টি রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগ আরো সহজ হবে। এতে দূরত্ব ও সময় একতৃতীয়াংশে কমে আসবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ সময় জানান, বিদ্যুৎ সহযোগিতাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরো গভীর হবে। এতে খুলে যাবে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত। মোদি জানান, কমনওয়েলথ, বিমসটেক সম্মেলন ও শান্তিনিকেতনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে সমন্বিত বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে কথা বলেছেন তারা। বক্তব্যের শেষে বাংলাদেশের মানুষকে বাংলায় শুভেচ্ছা জানান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, পশ্চিমবঙ্গ ও ভারত বাংলাদেশের মঙ্গল চায়। কারণ বাংলাদেশ ভালো থাকলে ভারতও ভালো থাকবে।

এদিকে গেল সপ্তাহে বাংলাদেশের জন্য আরো একটি ভালো সংবাদ দিয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি। চলতি বছরের মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের তিন ধাপ উন্নতি হয়েছে। ১৮৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬তম। ১৪ সেপ্টেম্বর ইউএনডিপি এই সূচক প্রকাশ করেছে।

গত বছরের তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে ইউএনডিপি এ সূচক প্রকাশ করে। তালিকায় থাকা দেশগুলোর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আয়, সম্পদ ও সম্পদের উৎস, বৈষম্য, লিঙ্গ সমতা, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রবাহ, যোগাযোগ ও পরিবেশের ভারসাম্য এবং জনমিতির তথ্য বিশ্লেষণ করে এই মানব উন্নয়ন সূচক তৈরি করে সংস্থাটি।

সূচকে তিন ধাপ উন্নতি করে বাংলাদেশ ১৩৯তম স্থান থেকে উঠে এসেছে ১৩৬তম অবস্থানে। তার আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪২তম স্থানে। সূচকে আসা দেশগুলোকে অতি উন্নত, উন্নত, মধ্যম ও নিম্ন এই চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান নিম্ন মানব উন্নয়ন স্তরে হলেও ধারাবাহিকভাবে মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে ভালো করছে বাংলাদেশ।

ইউএনডিপি সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিকদের গড় আয়ু ৭২ থেকে বেড়ে ৭১ দশমকি ৮ বছর হয়েছে। শিশুদের স্কুলে কাটানোর প্রত্যাশিত সময় গড়ে ১০ দশমিক ২ বছর থেকে বেড়ে ১১ দশমিক ৪ বছর হয়েছে। আর মাথাপিছু আয় বছরে ৩ হাজার ৩৪১ ডলার থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৬৭৭ ডলার হয়েছে।

গত বছরের মতো এবারো ইউএনডিপি সূচকে শীর্ষস্থানে রয়েছে নরওয়ে। শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, আইসল্যান্ড, হংকং, সুইডেন, সিঙ্গাপুর ও ন্যাদারল্যান্ডস। আর সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা ১০টি দেশ নাইজার, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ সুদান, শাদ, বুরুন্ডি, সিয়েরা লিওন, বুরকিনা ফাসো, মালি, লাইবেরিয়া এবং মোজাম্বিক। তালিকায় বিশ্বের ৫৩টি দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040