0917edu
|
বন্ধুরা, ১০ সেপ্টেম্বর চীনের শিক্ষক দিবস। গত সপ্তাহের অনুষ্ঠানে আমরা এ দিবস সম্পর্কে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের কিছু মন্তব্য তুলে ধরেছি। চলতি বছর এ দিবসটি উপলক্ষ্যে আবার গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন সি।
আজকের অনুষ্ঠানে শিক্ষার উন্নয়নে প্রেসিডেন্ট সি'র চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষক দিবস ও চীনের ওয়েনছুয়ান ভূমিকম্পের ১০ বছর পর দুর্গত এলাকার বাচ্চাদের রুশ শিশু কেন্দ্রে পুন:সফর সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরবো।
১০ সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ে চীনের শিক্ষা-সম্মেলন আয়োজিত হয়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সিপিসি'র নেতৃত্বে সার্বিকভাবে সিপিসি'র শিক্ষানীতি মেনে চলতে হবে। যাতে নৈতিকতা, মেধা, স্বাস্থ্য, শিল্প ও পরিশ্রমী সমাজতান্ত্রিক কর্তব্যের নির্মাণকারী প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় এবং শিক্ষার আধুনিকায়ন, শিক্ষার মাধ্যমে দেশকে শক্তিশালী করা ও গণকল্যাণমূলক শিক্ষা কর্তব্য সম্পন্ন করা যায়।
চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর পালিত শিক্ষক দিবস হলো চীনের ৩৪তম শিক্ষক দিবস। ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি প্রথমে দেশের সব শিক্ষকদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন,
'গোটা সমাজের উচিত শিক্ষা ও শিক্ষকদের সম্মান করা, শিক্ষকের রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাগত মর্যাদা উন্নত করা। যাতে শিক্ষকরা নিজের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সিপিসি ও জনগণের জন্য নতুন এবং আরও বেশি অবদান রাখতে পারেন।'
সি চিন পিং বলেন, সিপিসি'র ঊনবিংশ জাতীয় কংগ্রেস নতুন যুগে চীনের বৈশিষ্ট্যময় সমাজতন্ত্র উন্নয়নের কৌশল থেকে শিক্ষার আধুনিকায়ন দ্রুততর করা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে শক্তিশালী দেশ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন যুগে, নতুন পরিস্থিতিতে, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ এবং সমাজতন্ত্রের আধুনিকায়ন, জনগণ এবং সমাজের সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ও লেখাপড়ার গুরুত্ব আরও বেড়েছে। তিনি বলেন,
'আমাদের উচিত সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা, আরও উঁচু দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শিক্ষার আধুনিকায়ন দ্রুততর করা, শিক্ষার উন্নয়নকে দেশের উন্নয়ন-কৌশলের শীর্ষস্থানে রাখা, যাতে সিপিসি ও দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার উন্নয়ন সঙ্গতিপূর্ণ হয়। এ ছাড়া, তা জনগণের চাহিদাও মেটাতে পারে।'
সি চিন পিং উল্লেখ করেন, চীনের শিক্ষাব্যবস্থার উচিত সমাজতন্ত্রের নির্মাণ লালন করাকে মৌলিক কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করা। তিনি বলেন,
'প্রথমত, নৈতিকতা, মেধা, শিল্প ও পরিশ্রমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নত সমাজতন্ত্রের গঠন লালন করার জন্য দৃঢ় মানসিক আস্থা তৈরি করা। দ্বিতীয়ত, দেশপ্রেমের মনোভাব তৈরি করা। তৃতীয়ত, ভালো নৈতিকতা স্থাপন করা। চতুর্থত, জ্ঞান ও মেধা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা। পঞ্চমত, সংগ্রাম এবং লক্ষ্য বাস্তবায়নের দৃঢ়তা স্থাপন করা। ষষ্ঠত, বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুণ জোরদার করার জন্য চেষ্টা চালানো'।
সি চিন পিং বলেন, ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক অবস্থার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য স্কুলে খেলাধুলার ক্লাস চালু করতে হবে। যাতে ক্রীড়া এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা আনন্দ পায় এবং সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে পারে। এ ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শ্রমের মর্ম জনপ্রিয় করতে হবে। তাদেরকে শ্রমের প্রতি সম্মান জানানো এবং 'শ্রম সবচেয়ে গৌরবের ব্যাপার' এমন চিন্তাধারা শেখাতে হবে। সি জোর দিয়ে বলেন,
'নৈতিকতা, মেধা, স্বাস্থ্য, শিল্প ও পরিশ্রমের সার্বিক শিক্ষাদান ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, উচ্চ মানের দক্ষ ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। চিন্তাভাবনা, জ্ঞান ও মেধা এবং সামাজিক অনুশীলনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নৈতিকতার প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দিতে হবে। মৌলিক, পেশাগত ও উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষায় নৈতিকতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষকদের এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালাতে হবে এবং ছাত্রছাত্রীদেরকে এ লক্ষ্যমাত্রা লালনে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।'
প্রেসিডেন্ট সি আরও বলেন, শিক্ষকতা খুব গৌরবজনক একটি পেশা। প্রত্যেক শিক্ষকের উচিত এমন গৌরবকে গুরুত্ব দেওয়া, শিক্ষক হওয়ার সুযোগ শ্রেষ্ঠভাবে দেখা, কঠোর মানদণ্ড দিয়ে শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করা এবং নিজের দুর্বলতা পূরণ করা। সরকারের উচিত অব্যাহতভাবে শিক্ষকের মর্যাদা উন্নত করা, শিক্ষকদের বেতন বাড়িয়ে দেওয়া এবং শিক্ষকদের মধ্যে সংঘটিত সমস্যায় আইন ও শৃঙ্খলা অনুযায়ী কঠোর শাস্তি আরোপ করা। শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার গভীরতর করা সম্পর্ক সি বলেন,
'শিক্ষাগ্রহণ ব্যবস্থা ও শিক্ষার প্রশাসনিক ব্যবস্থার সংস্কার চালু করে এ কর্তব্যের উন্নয়নে প্রাণশক্তির উত্সাহ দিতে হবে। অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নে শিক্ষার পরিষেবা সামর্থ্য উন্নত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কাঠামো, বিভিন্ন বিভাগের কাঠামো ও প্রধান বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে, বিভিন্ন প্রধান বিষয় ও বিভাগের সমন্বয়-ব্যবস্থা পূরণ করতে হবে, শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ দ্রুততর করতে হবে। পাশাপাশি নব্যতাপ্রবর্তন, বহুমুখী ও প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ করে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে উচ্চ মানের সহযোগিতা চালু করতে হবে।'
সি জোর দিয়ে বলেন, সিপিসি'র শিক্ষা নির্দেশনা ও চিন্তাধারা বিভিন্ন স্কুলে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পিতা মাতাদের উচিত বাচ্চাদের 'জীবনের প্রথম ক্লাস' ভালোভাবে দেখাশোনা করা। বাচ্চাদের বড় হওয়ার পথে সমাজের বিভিন্ন মহলকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। স্কুল ও শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদ জীবনযাপন ও গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষাগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
পাশাপাশি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং বলেন, সরকারের উচিত অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নে শিক্ষার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া। বিভিন্ন অঞ্চল, শহর, গ্রাম এবং বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার ভারসাম্য উন্নয়ন জোরদার করার পরামর্শও দেন লি খ্য ছিয়াং।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষক দিবস
শিক্ষকতা মহান ও মহত্ এক পেশা। সব দেশই শিক্ষকদের গভীরভাবে সম্মান জানিয়ে থাকে। শিক্ষকদের সম্মান করা চীনা জাতির শ্রেষ্ঠ একটি ঐতিহ্য।
বিশ্বের অনেক দেশের নিজস্ব শিক্ষক দিবস রয়েছে। এই দিবসটিতে শিক্ষকদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। চীনের প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষক দিবস প্রতি বছরের ১৫ মে। ২০০৬ সাল থেকে এ দিনটিতে একদিনের ছুটি পান দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষকরা। দেশটির এ দিবস পালনের পদ্ধতি অনেকটা চীনের মতোই। দক্ষিণ কোরীয় সরকার শিক্ষা খাতে চমত্কার অবদানের জন্য শিক্ষকদের পুরস্কার বিতরণ করে থাকেন। ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকদের ফুল বা ছোট উপহার দিয়ে সম্মান বা শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষকদের সম্মান, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
ভারতে শিক্ষক দিবস পালিত হয় প্রতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর। এদিন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট সার্ভেপালি রাধাকৃষ্ণের জন্মদিন। তিনি ছিলেন ভারতের ব্যাপক জনপ্রিয় দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ। তিনি প্রায় ৪০ বছর শিক্ষকতা করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণের পর ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে তাঁর জন্মদিনকে শিক্ষক দিবস হিসেবে নির্ধারণ করার অনুরোধ করেন। এরপর থেকে এ দিনটিতে ভারতে শিক্ষক দিবস পালিত হয়। এদিন শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের পুরস্কার বিতরণ করে ভারতীয় সরকার।
ল্যাটিন আমেরিকার শিক্ষক দিবস
আর্জেন্টিনার শিক্ষক দিবস প্রতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর। এদিন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট, বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ডোমিনগো ফস্তিনো সার্মিয়েন্তোর মৃত্যু দিবস।
ব্রাজিলের শিক্ষক দিবস প্রতি বছরের ১৫ অক্টোবর। ১৫২৭ সালের ১৫ অক্টোবর তত্কালীন রাজা সারা দেশে নিরক্ষরতা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে স্কুল স্থাপন করতে এ দিবস নির্ধারণ করেছিলেন।
মেক্সিকোর শিক্ষক দিবস ১৫ মে। পেরুর শিক্ষক দিবস প্রতি বছরের ৬ জুলাই। এ দিবস উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী আয়োজন করে ছাত্রছাত্রীরা এবং শিক্ষকদের সাথে নাচ গান করেন, এতে ল্যাটিন আমেরিকার জনগণের আনন্দময় চরিত্র প্রতিফলিত হয়।
শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা 'ইউনেস্কো'র সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছরের ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবস উদযাপন করা হয়।
ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়।
আসলে বিভিন্ন দেশে নিজস্ব শিক্ষক দিবস থাকলেও এর মূল উদ্দেশ্য কিন্তু একই। তা হলো শিক্ষকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।