'স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫ পরিকল্পনা'কে ভবিষ্যত বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল বলা হয়। পরিকল্পনাটির প্রধান একটি পর্ব হলো 'ওপেন-লুপ বিশ্ববিদ্যালয়' (Open-loop University)। এ ধারণার আওতায় কোনো বয়সসীমা নেই। ১৭ বছর বয়সের প্রতিভাবান ছেলে, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে মধ্যবয়স্ক মানুষ এমনকি অবসর প্রাপ্তির পরে পুরোনো লোকজন ওপেন-লুপ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে পারে।
আমরা সবাই জানি যে ঐতিহ্যগত ক্লোজ-লুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে, ছাত্রছাত্রীদের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছর হতে হয় ও চার বছরের মধ্যে তাদের কলেজের ক্লাস শেষ করতে হয়। কিন্তু ওপেন-লুপ বিশ্ববিদ্যালয়ে, বয়সের সীমা নেই। একটানা চার বছর সব কোর্স শেষ করারও দরকার নেই। নিজের ইচ্ছা অনুসারে সারা জীবনে ছয়টি ধাপে ছয় বছরে সব কোর্স সম্পূর্ণ করা যায়। তাই ওপেন-লুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন কাজের লোকের গ্রুপ তৈরি করে। এ মিশ্র শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটি সমবায়, শক্তিশালী এবং স্থায়ী সামাজিক নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু একই সময়ে স্ট্যানফোর্ডের ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়াটিও প্রতিযোগিতামূলক হবে। বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড এবং বয়সের মানুষ আবেদনের মাধ্যমে সীমিত কোটায় ভর্তি হবে।
২০১৫ সালে ওপেন-লুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক ধারণা প্রকাশ পায়। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাত্র এক চতুর্থাংশ ছাত্রছাত্রীর স্নাতক পাসের পর তাদের কাজের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার সম্পর্ক থাকে। ওপেন-লুপ বিশ্ববিদ্যালয় ধারণা প্রত্যেকের জীবনের উচ্চশিক্ষার তাত্পর্য ফুটিয়ে তুলেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মজীবনের কাজে আরও বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
ওপেন-লুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান একটি ধারণা হলো 'প্যাশেড শিক্ষা' (Paced Education)। ঐতিহ্যগত ইউনিভার্সিটিতে, স্নাতক শ্রেণী এক থেকে চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত। আর 'স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ২০২৫ পরিকল্পনা' অনুসারে, পুরোনো চার বছরের চারটি শ্রেণীর ঐতিহ্য বিভক্ত ভেঙ্গে ফেলা হয়। নতুন পদ্ধতিতে হলো 'সিইএই' নামক একটি ব্যবস্থা। 'সিইএই' মানে সমন্বয় (Calibrate), উন্নত (Elevate) এবং শুরু (Activate) তিনটি পর্যায়।
প্রথম পর্যায় সমন্বয়ের মেয়াদ ৬ থেকে ১৮ মাস। ছাত্রছাত্রীদের উচিত সেরা শিক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে জানা। ওপেন-লুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের জন্য ১ থেকে ৭ দিনের স্বল্পমেয়াদী মাইক্রো কোর্স ডিজাইন করে। মাইক্রো কোর্সের মাধ্যমে বিভিন্ন পেশা ও জ্ঞান এবং শিক্ষকদের বিভিন্ন যোগ্যতা বুঝতে পারে ছাত্রছাত্রীরা। তা ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা মডেল এবং কর্মজীবনের পরিকল্পনার উন্নয়ন ট্র্যাক বুঝতে পারে তারা। এর পর নিজের ইচ্ছা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা এবং শেখার অভ্যাস অনুসারে অধ্যয়নের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয়। এর আওতা ৬ থেকে ১৮ মাস।
দ্বিতীয় পর্যায় হলো উন্নত (Elevate)। এ পর্যায়ের মেয়াদ ১২ থেকে ২৪ মাস। শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নের একটি বিশেষ ক্ষেত্র সম্পর্কে লিখে থাকে। ছাত্রছাত্রীরা একটি ব্যক্তিগত কমিটি গঠন করে। এ কমিটিতে থাকে একাডেমিক টিউশন, ব্যক্তিগত শিক্ষক, জ্যেষ্ঠ সহপাঠী এবং বিশ্বস্ত সহযোগী। উন্নত পর্যায়ের শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বড় বক্তৃতার ক্লাস বাতিল করা এবং ছোট একাডেমিক আলোচনার স্থানগুলি প্রতিস্থাপিত হয়। যাতে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আরো গভীর বিনিময়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
তৃতীয় পর্যায়ের (Activate) মেয়াদ ১২ থেকে ১৮ মাস। গভীর পেশাগত জ্ঞান লাভ করার পর, ছাত্রছাত্রীরা বাস্তব কর্মপরিবেশে তাদের জ্ঞান প্রয়োগ করে। যেমন ইন্টার্নশিপ, প্রকল্প পরিষেবা, উচ্চ পর্যায়ের গবেষণা এবং ব্যবসা শুরু করা।
'ওপেন-লুপ বিশ্ববিদ্যালয়'র দ্বিতীয় প্রধান ধারণা হলো 'অক্ষ ফ্লিপ' (Axis Flip)। এর অর্থ হলো, "প্রাথমিক জ্ঞান লাভের পর দক্ষতা" থেকে "প্রথম দক্ষতার পরে জ্ঞানে" ফিরিয়ে আনা, এটি স্ট্যানফোর্ডের স্নাতকোত্তর গবেষণার ভিত্তিতে পরিণত হবে। 'স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ২০২৫ পরিকল্পনা'য় প্রস্তাব করা হয় যে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত, স্ট্যানফোর্ড বিজনেস স্কুল স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের উপর ভিত্তি করে দশটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করবে এবং বিভিন্ন কেন্দ্রের প্রধানদের বিভিন্ন ইন্টারডিসিপ্লিনারি কোর্স উন্নয়নের দায়িত্ব দেবে। এই দশটি কেন্দ্রে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ, পরিমাণগত যুক্তি, সামাজিক অনুসন্ধান, নৈতিক যুক্তি, নান্দনিক ব্যাখ্যা এবং যোগাযোগের কার্যকারিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অধ্যয়ন ও মূল্যায়ন সংস্কারের মধ্যে রয়েছে।
ওপেন-লুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো 'উদ্দেশ্য-শিক্ষা' (Purpose Learning)।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশ্বকে কাছাকাছি এনেছে। পৃথিবী পরিণত হয়েছে একটি 'গ্রামে'। এই প্রেক্ষাপটে, গ্লোবাল নেতৃত্ব ছাত্রছাত্রীদের জন্য খুবই প্রয়োজন।
স্ট্যানফোর্ড গ্র্যাজুয়েট কোর্সগুলো সচেতনভাবে কার্যকরী অনুশীলনের ব্যবস্থা করে। যাতে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত অজানা এলাকায় সেসব ঝুঁকি মোকাবিলা করা যায়।
মিশন-বোধ হলো "গোপন সরঞ্জাম" যা মানুষকে তাদের কর্মজীবনে উৎকৃষ্টতা অর্জনের পথে পরিচালিত করে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি বিশ্বব্যাপী ধারাবাহিক "প্রভাব ল্যাবরেটরিজ" প্রতিষ্ঠা করেছে। "প্রভাব ল্যাবরেটরিজ" প্রোগ্রাম আরম্ভ করার ২২ বছর পর, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি সহযোগিতা চালিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসরত সবাইকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি যৌথভাবে "প্রভাব ল্যাবের" ধারণা বাস্তবায়নের জন্য একটি বাস্তব মডেল তৈরি করেছে। সেটি হলো 'মস্তিষ্ক অলিম্পিক'। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে এরকম ৭টি নতুন ল্যাবরেটরি তৈরি করা হবে।