সুরের ধারা: চীনের কুছিন সঙ্গীত কুয়াং লিং সান ইত্যাদি
  2018-09-10 13:21:38  cri


সুপ্রিয় শ্রোতা, এখন শুরু হচ্ছে 'সুরের ধারা' অনুষ্ঠান। আজকের এ অনুষ্ঠানে চীনের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র কুছিনের আরো দুটো কনর্সাটো শুনাবো। সঙ্গে আছি আমি ইয়াং ওয়েই মিং স্বর্ণা।

'কুছিন' হচ্ছে চীনের একটি সুপ্রাচীন বাদ্যযন্ত্র। কুছিনের গঠন সুন্দর। এর আওয়াজ মসৃণ এবং সুর সূক্ষ্ম ও নমনীয়। প্রাচীনকালের লোকেরা কুছিন বাজানোর সময় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতেন। কুছিন বাজানোর আগে তাদের স্নান করতে, নতুন কাপড় পড়তে এবং ধূপকাঠি জ্বালাতে হতো। তারপর দুটো পা গুছিয়ে বসে কুছিন পায়ের উপর বা টেবিলে রেখে বাজাতে হতো। কুছিন বাজানোর সময় বাম হাত দিয়ে 'তার' টানা হয় এবং ডান হাত দিয়ে 'তার' চেপে সুর নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বাজানোর সময় সুরের নির্ভুলতা নিশ্চিত করার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি।

 চীনের প্রাচীনকালের পণ্ডিতরা কুছিন সংগীতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। প্রাচীনকালের বহু দলিলপত্রে থেকে প্রতীয়মান হয় যে, চীনের পণ্ডিতরা বরাবরই কুছিন সংগীতের ভক্ত ছিলেন। কুছিনের আবিষ্কার ও প্রচলন, এটি ‌বাজানোর কৌশল উন্নত করা এবং এর বাজনা উপভোগ করার পদ্ধতির ক্ষেত্রে তাদের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ।   

 চীনের থাং আর সুং রাজবংশের আমল ছিল কুছিনের স্বর্ণযুগ। সে সময় সুমধুর সুর সৃষ্টিতে সক্ষম কুছিন তৈরি হতো। তবে আজকাল আর প্রাচীন কুছিন তৈরি হয় না। তবে স্মৃতি হিসেবে এখনো কিছু প্রাচীন কুছিন রয়ে গেছে। অবশ্য সেগুলোর অধিকাংশই শিল্পীদের নিজেদের তৈরি বলে সেগুলোর বিভিন্ন অংশের অবস্থান আর গঠন এক নয়। গত কয়েক দশক ধরে চীনে কুছিন তৈরির কাজ আবার নতুন করে শুরু হয় এবং এর নির্মাণকৌশলেও সংস্কার করা হয়। ফলে এই সুপ্রাচীন বাদ্যযন্ত্রটি নতুন জীবন লাভ করেছে।

কুছিনের প্রকাশ-ক্ষমতা অসাধারণ। আনন্দ, রাগ, বেদনা আর প্রফুল্লতার অনুভূতি এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা কুছিনের সুরের মাধ্যমে প্রাণবন্তভাবে প্রকাশ করা যায়। নানা পদ্ধিতে কুছিন বাজানো যায়। এটি এককভাবে বাজানো যায়, 'সিয়াও'-এর সাথে সমবেতভাবে বাজানো যায়, আবার প্রাচীন গানগুলোর জন্যে আবহসঙ্গীত সৃষ্টিতেও এর ব্যবহার আছে। বর্তমানে কুছিনের যেসব সুর সংরক্ষিত আছে সেগুলোর প্রায় অর্ধেকই আবহসঙ্গীত।

সুপ্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠানে কুছিনের যে দুটি সুর আপনাদেরকে শোনাবো সেগুলো হচ্ছে: 'কুয়াং লিং সান' এবং 'লিউ শুই'।

'কুয়াং লিং সান' হল চীনের একটি খুব বিখ্যাত কুছিন সুর। এ সঙ্গীত পূর্ব হান রাজবংশের শেষ দিকে রচিত হয়। এ সঙ্গীতের মাধ্যমে গুপ্তঘাতক নিয়ে জেং কর্তৃক তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী হান খুইকে হত্যার গল্প বলা হয়েছে। নিয়ে জেং একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। মন্ত্রী ইয়ান সুই তাকে অনেক সাহায্য করতেন। ইয়ান সুইকে নিজের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে দেখতেন নিয়ে জেং। ওদিকে ইয়ান সুই'এর শত্রু হচ্ছে হান খুই। ইয়ান সুই-এর অনুরোধে নিয়ে জেং তার শত্রু হান খুই-কে হত্যা করে। পরে ওয়েইচিন রাজবংশ আমলে চি খাং এ গল্পের ভিত্তিতে 'কুয়াং লিং সান' সুর রচনা করেন।

অন্যদিকে, 'লিউ শুই'-ও একটি সুপ্রাচীন ও সুবিখ্যাত কুছিন সুর। প্রাচীনকালে একজন খুব বিখ্যাত কুছিন শিল্পী ছিলেন, তার নাম ইয়ু পো ইয়া। তার একজন খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল যার নাম জুং জি ছি। ইয়ু পো ইয়া মনে করতেন এ পৃথিবীতে শুধু জুং জি ছি তার কুছিনের বাজনা পুরোপুরি বুঝতে পারেন। তাই জুং জি ছি মারা যাওয়ার পর, ইয়ু পো ইয়া আর কোনোদিন কুছিন বাজাননি। তার রচিত 'লিউ শুই' সুরে পাহাড়ের বিভিন্ন ঝর্ণা ও নদনদীর আওয়াজ পাওয়া যায়। ১৯৭৭ সালে মার্কিন মহাশূন্যযান 'ভয়েজার-১' মহাকাশে যে সঙ্গীতের সিডি নিয়ে গিয়েছিল, সেই সিডির মধ্যে কুছিনের এ সুরটি ছিল।

তাহলে আর কথা নয়। চলুন শুনি কনসার্টো দুটি। (স্বর্ণা/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040