বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বিতর্ক
  2018-09-09 19:12:16  cri
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার নিয়ে কিছু দিন ধরে তুমুল বিতর্ক চলছে। নির্বাচন ব্যাপকভাবে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা আসে নির্বাচন কমিশন থেকে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একে স্বাগত জানায়। কিন্তু বিরোধী বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতা করে আসছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও এখনি ব্যাপকভাবে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দেন। সবশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিলেও তা হাড়াহুড়ো করে চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

ভারত, ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রায় ২০টির মতো দেশে এখন পর্যন্ত আংশিকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কও হয়েছে বিস্তর। পাশের দেশ ভারতেও বিরোধীদলগুলো ইভিএম ব্যবহারের তীব্র বিরোধিতা করে আসছে। বিরোধিতার মুখে ইভিএম বাতিল হয়েছে ইউরোপের দেশ হল্যান্ডে। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানীর মতো উন্নত প্রযুক্তির দেশেও এটি কার্যকর হয়নি। এর ফলে বাংলাদেশে এর ব্যবহার নিয়ে সংশয় দেখা দেয়া অস্বাভাবিক নয়।

তবে, বাংলাদেশের ইভিএম উদ্ভাবকরা বলছেন, বিশ্বের কোনো দেশের ইভিএম বায়োম্যাট্রিক ছিল না। পাশাপাশি ভোট হতো অনলাইনে। তাই তাতে ভোট কারচুপির সুযোগ ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ইভিএমে এ সব সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করা হয়েছে। তাই এটি অতীতের যে কোনো সময়ের যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ইভিএম হবে শক্তিশালী। তাছাড়া বায়োমেট্রিক হওয়ায় আঙ্গুলের ছাপ ছাড়া কোনো ভোটারের পক্ষে ভোট দেয়া সম্ভব নয়। ইভিএম চালনার জন্য প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারি প্রিজাইডিং অফিসারদের আঙ্গুলের ছাপও নেয়া থাকবে। তাই অন্য কারো পক্ষে এটা অপারেট করাও সম্ভব নয়। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় অর্থাৎ অফলাইনে ভোট হবে বলে বাইরে থেকে হ্যাক করারও সুযোগ নেই। কোনো কারণে মেশিন নষ্ট হলেও প্রদত্ত ভোট নষ্ট হবে না।

তবে, নির্বাচন বিশ্লষকদের রয়েছে ভিন্নমত। তারা বলছেন, বায়োমেট্রিক যোগ করার পরও বরিশাল সিটি নির্বাচনে এর পরীক্ষামূলক ব্যবহারে জাল ভোটের অভিযোগ উঠেছে। ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে কথা বলেছেন, সাবেক দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদার সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। তিনি দাবি করেন স্থানীয় নির্বাচনে এটি ব্যবহারে তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে তাড়াহুড়ো করে ব্যাপকভাবে ইভিএম পদ্ধতি চাপিয়ে না দিয়ে সব রাজনৈতিক দলে সমঝোতার ওপর গুরুত্ব দেন সাবেক এই সিইসি।

ইভিএম সম্পর্কে দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষের সঠিক ধারণা নেই বলে দাবি করেছেন আরেক সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রউফ। জোর করে চাপিয়ে না দিয়ে মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো ওপর জোর দেন সাবেক এই সিইসিও।

এমন সব বির্তকের মধ্যেই আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে তা ভেটিংয়ের জন্য আইনমন্ত্রণালয়ে পাঠায় নির্বাচন কমিশন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মহলে সংশয় দানা বাধে যে নির্বাচন কমিশন হয়তো সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর আপত্তি আমলে না নিয়ে ব্যাপক হারে ইভিএম ব্যবহারের পথেই যাবে।

তবে, গত ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এ জল্পনা-কল্পনার অনেকটা অবসান ঘটে। নেপালে বিমসটেক সম্মেলনে যোগদানের বিষয় নিয়ে ওইদিন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেই জানান, হাড়াহুড়ো করে ইভিএম চাপিয়ে দেয়া হবে না। ব্যক্তিগতভাবে তিনি ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে এ কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে এখন অনেক কিছুই ডিজিটালি করা হচ্ছে। তাই ইভিএম ব্যবহার কোনো অস্বাভাবিক বিষয় হবে না। তবে এতে অভ্যস্ত হতে ভোটারদের সময় লাগবে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তাই ধীরে সুস্থে পর্যায়ক্রমে ইভিএম চালুর পক্ষে মত দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর এ বিষয়ে কিছুটা স্বস্তি আসে সংশ্লিষ্ট মহলে। তবে ব্যাপকভাবে না হলেও ১০০টি আসনে দেড় লাখ সেট ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে নির্বাচন কমিশন। দেশের মানুষও প্রযুক্তির বিকাশ চায়। তবে যে কোনো নতুন প্রযুক্তির ভালোমন্দ সবগুলো দিক যথাযথভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করেই এর ব্যবহার সমীচীন।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040