বিমসটেক কাঠমান্ডু সম্মেলন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য
  2018-09-02 19:25:00  cri

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ৩০ ও ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন। দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশের জোট 'বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল, টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন বা বিমসটেকের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন ছিল এটি। ১৮ দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের সম্মেলন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনে যোগ দেন এবং দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। ৩০ আগস্ট কাঠমান্ডুর হোটেল সোয়ালটি ক্রাউনি প্লাজায় উদ্বোধনী অধিবেশন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। বিমসটেকের আওতায় আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদারে যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে ১৪টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বলেন, নেতাদের সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠার ২১ বছরে বিমসটেক হাতে গোনা কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া বিশেষ সফলতা দেখাতে পারেনি। এ প্রেক্ষাপটে বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে বিমসটেকের কাঠামো ও সুযোগ পর্যালোচনা করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। বলেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন তাঁর লক্ষ্য।

বিমসটেককে কার্যকর করার মাধ্যমে আঞ্চলিক উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ জন্য যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশ বিমসটেকের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, এ অঞ্চলে আন্তঃবাণিজ্য সম্প্রসারণে দেশগুলোর উচিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো।

দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও সন্ত্রাস এ অঞ্চলের দেশগুলোর সাধারণ শত্রু উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের ঘাঁটি হিসেবে বাংলাদেশের মাটি কাউকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।

৩১ আগস্ট সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে বিমসটেক নেতারা সমাপনী অধিবেশনে যোগ দেন। ১৮ দফা কাঠমান্ডু ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। পরে সংবাদ সম্মেলনে যৌথ ঘোষণা ও সম্মেলনের বিস্তারিত তুলে ধরেন নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার। জানান, এ অঞ্চলের প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে জোট হিসেবে বিমসটেককে আরো কার্যকর করার বিষয়টি ঘোষণায় প্রাধান্য পেয়েছে।

বিনিয়োগ, বাণিজ্য, যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আলোচনা হয় সম্মেলনে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় একযোগে কাজ করতেও রাজি হয়েছে ৭ দেশ। বিমান, সড়ক, রেল ও নৌপথে যোগাযোগ সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়েও একমত হন সদস্যদেশগুলোর নেতারা। আঞ্চলিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন বিষয়ক একটি সমঝোতাস্মারকও স্বাক্ষর করেন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

মূল সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ৩০ আগস্ট বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। কাঠমান্ডুতে হোটেল সোয়ালটি ক্রাউনি প্লাজায় ওইদিন সন্ধ্যায় হয় দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকটি। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব সাংবাদিকদের জানান, দুই দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে একযোগে কাজ করতে একমত হয়েছেন দুই প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে একই দিন সকালে কাঠমান্ডু পৌঁছেই নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বাণিজ্য বিনিয়োগ বাড়ানো এবং বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে জোর দেন দুই প্রধানমন্ত্রী। ভুটানের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও দেখা করেন শেখ হাসিনার সঙ্গে।

৩০ আগস্ট স্থানীয় সময় দুপুরে দেশটির প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বিমসটেক নেতাদের সম্মানে নেপালের প্রেসিডেন্টের দেয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। রাতে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজেও যোগ দেন শেখ হাসিনা।

২ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী নেপালে তাঁর বিমসটেক সম্মেলনে যোগদানের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। সম্মেলনে তাঁর ১৪ দফা প্রস্তাব গুরত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথাও তুলে ধরেন তিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টসহ বিমসটেক নেতাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়িও কথা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। সব মিলিয়ে তার নেপাল সফর ফলপ্রসু হয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040