গত সপ্তাহের গল্পে তারকা হু ডিয়েই'র গল্প শেষ করেছি। এবার আমরা অন্য এক দেবীর গল্প শুরু করবো। তার নাম চৌ সুয়ান।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর, চৌ সুয়ান প্রথমে হংকংয়ে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু হংকংয়ে তিনি জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর দিন কাটিয়েছেন। হংকংয়ের চলচ্চিত্র শিল্প শাংহাইয়ের চেয়ে ভিন্ন। হংকংয়ে বিনোদন শিল্পের পেছনের শক্তি হলো অপরাধী চক্র (criminal syndicate)। হংকংয়ের চলচ্চিত্র জগতে কোনো সম্মান না পেয়ে চৌ সুয়ান শাংহাইয়ে ফিরতে চান। সেজন্য চৌ তার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শাংহাইয়ে ফেরার জন্য সহায়তা চান। চৌ'য়ের বন্ধু জাও তান তার সঙ্গে দেখা করেন এবং বুঝতে পারেন কয়েক মাস গোসল করেননি চৌ! দেবীর মত সুন্দরী ছিলেন চৌ সুয়ান। কিন্তু, এখন বন্ধু জাও দেখেন, চৌ সুয়ান ঠিক যেন মানসিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী! তার কাপড় শরীরের সঙ্গে শক্তভাবে লেগে গেছে! কাঁচি দিয়ে কেটে সেই কাপড় আলাদা করতে হয়।
চৌ সুয়ান ঠিক সবচেয়ে কঠিন যুগ কাটিয়েছেন। সে যুগে অনেক মানুষ পরিবার হারিয়েছে, কেউ প্রাণ হারিয়েছে! কিছু মানুষ শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে! এত কিছুর পরও গণপ্রজাতন্ত্রী চীন দেখতে পাননি তিনি।
কে এই চৌ সুয়ান? তিনি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের শাংহাইয়ের অসাধারণ সংগীত শিল্পী, চলচ্চিত্র জগতের দেবী! বর্তমান যুগে এমন প্রতিভা আর নেই। সেই সময়ে, সমস্ত নারী তারকাদের একসঙ্গে রাখলে চৌ সুয়ানকে প্রথম স্থান দিতেই হবে! একটি পুরানো কথায় বলা হয়, সৌন্দর্য বেশিরভাগ সময়ই দুর্ভাগ্যজনক। চৌ সুয়ান তার সন্তান থেকে কষ্ট পেয়েছেন! এর ফলে তার ব্যক্তিত্ব খুব ভঙ্গুর হয়ে যায়। ব্যক্তিগত সম্পর্কের দিকটিও তার জন্য সুখকর ছিল না। তাই চৌ সুয়ান অপমান ও দুঃখকষ্ট সহ্য করতে পারতেন না।
চৌ সুয়ান হংকং থেকে শাংহাই ফেরার পর জনগণের কাছ থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ পাননি। এতে তিনি বিশাল মানসিক আঘাত পান। মানসিক হাসপাতালে কয়েক বছর কাটান চৌ। হাসপাতাল ছাড়ার পর তার কোম্পানির দাবি অনুযায়ী চৌ সুয়ান আরেকটি ছবিতে অভিনয় করেন। কিন্তু সে চলচ্চিত্রের গল্পটি যেন তার হংকংয়ের অভিজ্ঞতার মতোই কষ্টকর। জানা গেছে ফিল্মের শুটিং শেষ না করেই চৌ সুয়ান স্টুডিও থেকে পালিয়ে যান। তারপর থেকে, তার মানসিক অসুস্থতা গুরুতর হয়ে পড়ে। তিনি আর সুস্থ হননি।
চৌ সুয়ানের গল্পের পর আমরা লি সিয়াং লানের ঘটনা শুনবো।
তখন শাংহাই সংগীত জগতে, চৌ সুয়ানের মতো আরেকজন সেরা শিল্পী ছিলেন লি সিয়াং লান। 'ইয়ে লাই সিয়াং' এটি চীনের বিখ্যাত সংগীত; যা বিশেষভাবে তার জন্য তৈরি করা গান। চৌ সুয়ানের দুঃখজনক পরিণতির তুলনায় লি সিয়াং লানের জীবন ভিন্ন। লি আসলে জাপানি মানুষ। কিন্তু তিনি পাপেট মানচুখৌতে (puppet Manchukuo) জন্মগ্রহণ করেন। তখন ওই অঞ্চলে অনেক জাপানি মানুষ থাকতো। লি'র বাবা জাপানি; তিনি রেলওয়েসংশ্লিষ্ট কাজ করতেন। লি'র একজন চীনা পালকপিতা থাকায় তার চীনা নামও রয়েছে।
লি সিয়াং লান চীনে জন্মগ্রহণ করে ও বেইজিংয়ে লেখাপড়া করেন। তিনি প্রথমে জন্মস্থানের চলচ্চিত্র কোম্পানিতে কাজ করেছিলেন। জনপ্রিয় হওয়ার পর শাংহাইয়ে যান তিনি। তখন থেকে সুপার বড় তারকা চৌ সুয়ানের সাথে শাংহাই সংগীত জগতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন লি। কখনো কখনো ব্যক্তিগত কনসার্ট আয়োজন করেন তিনি। পরে জাপান যুদ্ধে হারে এবং লি সিয়াং লান গ্রেফতার হন। বিশ্বাসঘাতকতা করায় তাকে গুলি করে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় তত্কালীন সরকার। কিন্তু তিনি বলেন যে, তিনি মূলত জাপানি নাগরিক। অনেক প্রমাণ দাখিলের পর, শেষ পর্যন্ত বেকসুর খালাস পান তিনি।
মুক্তি পাওয়ার পর জাপানে ফিরে যান ও একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন লি। পরে টিভি হোস্টের কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি জাপানি সেনেটের নির্বাচনে অংশ নেন ও নির্বাচিত হন। তার ১৮ বছর কার্যমেয়াদে চীন-জাপান মৈত্রীর জন্য অনেক অবদান রাখেন তিনি।
প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com
চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান। (জিনিয়া/তৌহিদ)