প্রিয় শ্রোতা, আপনারা শুনছিলেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ফরাসি বিভাগের সাংবাদিক অলিভিয়ার চিয়াংসি প্রদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতার প্রথম প্রকাশ। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা তাঁর দৃষ্টিতে দেখব চীনের চিয়াংসি প্রদেশকে।
তিনি লিখেছেন,
"চিয়াংসি প্রদেশে আসার প্রথম দিন আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে স্থানীয় গ্রামবাসী। যদিও আমাদের মধ্যে যোগাযোগে ভাষা একটি সমস্যা, তবুও চিয়াংসি প্রদেশে আসার প্রথম রাতেই আমি তাঁদেরকে পছন্দ করেছিলাম। তাঁরা বন্ধুত্বপূর্ণ এবং অতিথিপরায়ণ। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
আমি প্রথমে চিয়াংসি প্রদেশের শাংরাও'র জাওথৌ থানার চৌশি গ্রামে যাই। গ্রামের বাসিন্দারা ইউরোপীয় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ খুবই কম পায়। বিশেষ করে ফরাসি মানুষ। তাঁরা ইউরোপের সামনে নিজেদের তুলে ধরতে চান। কারণ, এখানে তাদের নিজেদের ঐতিহ্য ও সুন্দর দৃশ্য রয়েছে। এখানে বাসিন্দাদের জীপন খুবই শান্ত, সহজ ও রোমান্টিক। তাঁরা আশা করেন, আরো বেশি বিদেশি পর্যটক এখানে আসবেন। আমি গ্রামবাসীদের সঙ্গে একটি ফরাসি পলওয়ানিয়ারপূর্ণ রাস্তা পরিদর্শনে যাই। গণ প্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার আগে শাংহাইতে ফরাসি ইজারাকৃত এলাকায় ফরাসি পলওয়ানিয়া ভরপুর। সেজন্য চীনা মানুষের জন্য পলওয়ানিয়া হল ফ্রান্সের প্রতীক।
সন্ধ্যায় আর্দ্র ও গরম বায়ুতে নিজেকে শান্ত ও ধীরস্থির লাগে। সড়কের দুই পাশে বই ও চায়ের দোকান রয়েছে। চায়ের দোকান গ্রামের কেন্দ্রীয় স্থানে অবস্থিত। গ্রামবাসীরা এখানে চা খান ও গল্পগুজব করেন। গ্রামবাসীরা সাধারণত সবুজ চা পছন্দ করেন। এখানে এক ধরণের পীচ স্বাদের চা খুবই জনপ্রিয়। আমি দেখেছি, গ্রামের কেন্দ্রীয় স্থানে একটি বাগান রয়েছে। বাগানের কাছাকাছি একটি সবজি বাগান, একটি চিনাবাদাম ক্ষেত্র এবং একটি সুন্দর পুকুর রয়েছে। পুকুরের পদ্মবীজ খেতে খুবই মজা।
চিয়াংসি প্রদেশে বনভূমি ৬৩ শতাংশ। প্রদেশটি পরিবেশ সুরক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। চৌশি গ্রাম এ-রকম। এখানে সার্বিকভাবে সৌর শক্তি ব্যবহার করা হয় এবং গ্রামটিতে দূষিত পানি পরিশোধণের ব্যবস্থা রয়েছে। আসলে গ্রামটির টেকসই উন্নয়নের ধারণা আমাকে বিস্মিত করেছে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-এর ঊনবিংশ জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে এক প্রতিবেদনে বলেন, সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলা, ইতিবাচকভাবে পরিবেশের সমস্যা সমাধান করা, প্রাকৃতিক ব্যবস্থার সুরক্ষা জোরদার এবং মানুষ ও প্রকৃতির সম্প্রীতিময় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা উচিত। প্রেসিডেন্ট সি এ-কথা বলার এক বছরের মধ্যে চিয়াংসি প্রদেশের এত ছোট ও দূর গ্রামে আমরা টেকসই উন্নয়নের উদাহরণ দেখেছি। এটি হল চীনা যোগ্যতা!
আমি প্রাকৃতিক পরিবেশ ভালোবাসি। তাই আমি চিয়াংসিকেও ভালবাসি।
চিয়াংসি প্রদেশে আমার দ্বিতীয় দিনের ভোরে বায়ু ছিল খুবই পরিষ্কার। আমরা স্থানীয় বৈশিষ্ট্যময় গ্রাম পরিদর্শন করি। আমরা ঔচিয়া, হংছিয়াওশাং, থিংজিশাং ও উথংবান গ্রাম পরিদর্শন করি। ঔচিয়া গ্রামের অধিকাংশ মানুষের শেষ নাম হল ঔইয়াং। চীনা ভাষায় 'হংছিয়াশাং' অর্থ হল হং সেতুর উপরে। সাতটি ছোট সেতুর কারণে গ্রামটি নির্মিত হওয়ার পর এটির এমন নামকরণ করা হয়। আমরা প্রথমে ঔচিয়া গ্রামে যাই। ছোট গ্রামটির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। গ্রামটি নিজের ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি দিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। গ্রামে অনেক গাছের বয়স কয়েক শ। ঔচিয়া গ্রামের ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি টিকে আছে। গ্রামের প্রাচীরে প্রাচীন কবিতা লেখা আছে; লেখা আছে বিভিন্ন উপদেশ, যেমন: বাবা-মাকে সম্মান কর, পরিশ্রম কর, ইত্যাদি। পরিবার ও জনগণের ঐক্য চীনা মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঔচিয়া গ্রাম ঐকবদ্ধ।
ঔচিয়া গ্রামের পর আমরা কাছাকাছি হংছিয়াও গ্রামে যাই। হংছিয়াও গ্রামের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। গ্রামবাসীরা প্রাচীন আমলের পানির কূপগুলো সুরক্ষিত রেখেছেন। চীনা মানুষ প্রাচীনকালের মানুষের বুদ্ধি ও আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে দেশে সংস্কারকাজ চালিয়েছে এবং দ্রুত উন্নত হয়েছে। 'বিশ্ব পরিবর্তিত হচ্ছে, চীন উন্নত হচ্ছে।'—কথাটা বর্তমান চীন সম্পর্কে খুব ভালোভাবে প্রযোজ্য।
চিয়াংসি প্রদেশের গ্রামবাসীরা জানেন, দ্রুত উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকা জরুরি। সেজন্য তাঁরা ব্যাপকভাবে প্রাকৃতিক পর্যটন উন্নয়ন করতে থাকেন। ইউরোপীয় পর্যটকদের জন্য এটি হল একটি অপ্রত্যাশিত ব্যাপার। থিংজিশাং গ্রামে আমি চীনা কাগজ কাটা শিল্পের কাজ দেখেছি। আমি আশ্চর্য হয়েছি এই ভেবে যে, শুধু কাগজ নয়, কাগজ কাটা শিল্পও চীনে জন্মলাভ করেছে। চীনা কাগজ কাটা শিল্পের যাত্রা ষষ্ঠ শতকে। চীনা কাগজ কাটা শিল্পের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গের মধ্যে আছে কাঁচি বা ছুরি। এই শিল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় মূলত পশু, ঘাষ ও ফুল। চীনা কাগজ কাটা শিল্পকর্ম সাধারণত দরজা ও জানালায় লাগানো হয়। কাগজ কাটা কখনো একই রঙের, কখনো ভিন্ন রঙের। এবারের পরিদর্শনে আমি স্থানীয় কাগজ কাটা শিল্পী চৌ ইউ ফাংয়কে চিনেছি। চৌ সাহেব তাঁর পূর্বপুরুষের বাড়িতে একটি ছোট কাগজ কাটা যাদুঘর খুলেছেন। তিনি ছুড়ি ও কাটা দিয়ে কাগজ কাটা শিল্প তৈরী করার প্রক্রিয়া আমাদেরকে দেখিয়েছেন।
আমরা উথংবান গ্রামে স্থানীয় পদ্মপুকুর দেখেছি। পুকুরের উপর দিয়ে সেতুতে হাঁটাহাঁটি করে অনেক শান্তি পেয়েছি। সবকিছু খুবই সুন্দর আর আকর্ষণীয়।"