সরকারি চাকরি কোটা পদ্ধতি তুলে দেয়ার পক্ষে সচিব কমিটি
  2018-08-19 19:10:08  cri
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি তুলে দেয়ার পক্ষেই মত এ এ বিষয়ে গঠিত সচিব কমিটির। কমিটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এমন আভাস দিয়েছেন। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মতামত চেয়েছে কমিটি। কারণ মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। আর এ বিষয়টির সুরাহা হলেই এ সংক্রান্ত রিপোর্ট চূড়ান্ত করবে সচিব কমিটি।

দেশের সব অঞ্চলের মানুষের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করতে ১৯৭২ সালে কোটা পদ্ধতি চালু করে তৎকালীন শেখ মুজিবুর রহমান সরকার। ওই সময়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে জেলা ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা হয়। পরবর্তীতে ওই আদেশে সংস্কার এনে জেলা কোটা ১০ ভাগ, নারী ১০ ভাগ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ ভাগ ও প্রতিবন্ধী কোটা ১ শতাংশ বরাদ্দ রেখে ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল করা হয়। কিন্তু অন্যান্য ২৬ শতাংশ কোটা পূরণ হলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা কখনোই ৩০ শতাংশ পূরণ হয়নি।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়টি পর্যালোচনা করতে গতমাসে উচ্চ পর্যায়ের সচিব কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটি এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের সরকারি চাকরির কোটা পদ্ধতি

সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই ও বিচার বিশ্লেষণ করেছে। তাদের এ বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে কোটা পদ্ধতি যাথাসম্ভব তুলে দেয়ার পক্ষে সচিব কমিটি।

তবে যে লক্ষ্যে কোটা প্রবর্তন করা হয়েছিল তা এখনো পুরোপুরো অর্জিত হয়নি । বিশেষ করে প্রশাসনে নারীদে উপস্থিতি এখনো কম। তাই নারী কোটা বাড়ানো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী কোটা বহাল রাখার পক্ষেও মত অনেকের।

মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কোটা পূরণ না হলে তা যে মেধা কোটা থেকে পূরণ করা হয় তা জনসক্ষমে তুলে ধরতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে । মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে পর্যবেক্ষণ রয়েছে তা নির্দেশনা নয়। তাই সরকারের তা মানার কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। সরকার কোটা সংস্কারের পথে এগিয়ে যেতে পারে।

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষ পর্যন্ত কোটা সংস্কারের পথে একটা বড় অগ্রগতি হতে চলেছে বলেই দৃশ্যত মনে হচ্ছে। এটা গোটা জাতির জন্যই মঙ্গলজনক। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে গিয়ে যে সব ছাত্র কারারুদ্ধ হয়েছেন এবং যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের কী হবে? বিষয়টির যথাযথ সমাধানে কোটা আন্দোলনে ছাত্রনেতাদের মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলা প্রত্যাহার করা উচিত বলে মনে করে সাধারণ মানুষ।

এদিকে, গত সপ্তাহে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত এসেছে সরকারের তরফে। ১৩ আগস্ট মন্ত্রিসভা বৈঠকে কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান দেয়ার আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে

মন্ত্রিসভা। কওমী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দাওরায়ে হাদিস অথবা তাকমিলের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি – ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবী সমমান দিতে ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ওই প্রজ্ঞাপনই এবার আইন হিসেবে নীতিগত অনুমোদন দিল মন্ত্রিসভা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া আইনটিতে বর্তমানে দেশের ৬টি কওমী বোর্ডকে একত্রিত করে একটি বোর্ড করার কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম জানান, খসড়া আইনে যে কওমী বোর্ড গঠনের কথা বলা হয়েছে তাতে সদস্য থাকবেন ৯ জন- এদের সকলেই কওমী মাদ্রাসার সঙ্গে জড়িত। তবে সরকারি কিংবা অন্য কোনো পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি এই বোর্ডে সদস্য হবেন না।

সরকারের তরফে বলা হয়েছে কওমী শিক্ষাকে মূলধারায় শিক্ষা ব্যবস্থায় আনতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে উপকৃত হবে কওমী মাদ্রাসার ১৫ লাখ শিক্ষার্থী। কিন্তু কওমী শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো ধরনের সাধারণ শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত না করে এবং এ উদ্যোগ কতখানি সফল হবে সে প্রশ্ন রয়েছে বিদগ্ধ মহলে।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040