0817
|
পঞ্চাশের মন্বন্তরে কলিম শরাফী দল বেঁধে গান গেয়ে গেয়ে পীড়িত মানুষজনের জন্য অর্থ সাহায্য সংগ্রহ করেছেন। সাথে সাথে তিনি লঙ্গরখানায় খাদ্য বিতরণে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এরপর ১৯৪৫ সালে শরাফী ভর্তি হন হেতমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে। প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কৃষ্ণনাথ কলেজ ছেড়ে তিনি ভর্তি হন ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুলে। তিনি এখানেও পড়াশোনা চালাতে পারেননি। মূলত অর্থনৈতিক কারণেই পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ফেলতে হয়। শেষ চেষ্টা হিসেবে ১৯৪৬ সালে সিটি কলেজে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৬ সালেই শুরু হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এসময় তিনি ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশনের হয়ে 'বর্ডার গার্ড'-এর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি আবারও গ্রেফতার হন। অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়।
৯০ এর দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের সংগঠিত করার কাজ করেন তিনি। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে গণআদালতে সম্পৃক্ত হওয়ায় ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় কলিম শরাফীকে আসামি করা হয়।
রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি স্বীকৃতি
সঙ্গীত শিল্পে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জনাব কলিম শরাফী একুশে পদক (১৯৮৫), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৯), 'নাসিরউদ্দিন স্বর্ণ পদক' (১৯৮৮), 'বেগম জেবুন্নেছা ও কাজী মাহবুব উল্লাহ স্বর্ণ পদক' (১৯৮৭), সত্যজিত রায় পুরস্কার (১৯৯৫) এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র হতে 'কৃতি বাঙ্গালী সম্মাননা পদক' (১৯৮৮)-এ ভূষিত হন। বাংলা একাডেমী ফেলোশীপ, রবীন্দ্র সুবর্ণ জয়ন্তী পাটনা, কলিকাতার শিল্প মেলার বঙ্গ সংস্কৃতি, বুলবুল ললিতকলা একাডেমী, সিকোয়েন্স এওয়ার্ড অব অনার, রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এওয়ার্ড, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গুনিজন সংবর্ধনা, পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৫তম জন্ম বার্ষিকী, ডি-৮ আর্ট এন্ড কালচার ফেস্টিভেল, পাকিস্তান ইত্যাদি অনুষ্ঠানে সম্মানিত হন। সর্বশেষ তিনি বাংলা একাডেমী প্রবর্তিত 'রবীন্দ্র পুরস্কার-২০১০' এ তাঁকে ভূষিত হন।
মৃত্যু
২রা নভেম্বর, ২০১০ তারিখে সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে নিজে বাসভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে নামাজে জানাযা শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় সম্মাননার পর মিরপুর বুদ্ধজীবী গোরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।