চীনে বিদেশি বিনিয়োগ
  2018-08-14 15:50:07  cri
চলতি বছরের শুরুর দিকে চীনে মার্কিন ব্যবসা সমিতি '২০১৮ চীনে বাণিজ্যের পরিবেশ, ২০১৮' শীর্ষক তদন্ত-প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। প্রতিবেদন অনুসারে: ২০১৭ সালে চীনে ৭৩ শতাংশ মার্কিন প্রতিষ্ঠান মুনাফা করে এবং ৭৪ শতাংশ মার্কিন প্রতিষ্ঠানের চীনে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা ছিল; প্রায় ৬০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিতে চীন হল বিনিয়োগের জন্য শ্রেষ্ঠ তিনটি দেশের একটি; ৪৬ শতাংশ মার্কিন প্রতিষ্ঠান মনে করে, পরবর্তী তিন বছরে চীনের বাজার আরও এক ধাপ সামনে এগুবে; আর ৬২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান মনে করে, বিগত পাঁচ বছরে চীন সরকার বাণিজ্যনীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে।

সম্প্রতি চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে চীনে নতুন গড়ে ওঠা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২৯৫৯১টি, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯৬.৬ শতাংশ বেশি। এসময় বিদেশি মূলধনের প্রকৃত ব্যবহার ছিল ৬৮.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪.১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯.১ শতাংশ বেশি ছিল।

চীনে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা হলেও পড়েছে। তবে পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, চীনের ওপর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখনও অটুট আছে। বিশ্লেষকরা এর পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছেন।

এক. চীনে উত্পাদন ও বিক্রি বৃদ্ধি সুযোগ আছে। ২০৩০ সালে সারা বিশ্বে মধ্যবিত্তশ্রেণীর লোকসংখ্যা হবে আনুমানিক ৪৯০ কোটি। এর মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগ এশিয়ার, যার অধিকাংশ আবার চীনের। তার মানে, চীন বিশ্বের বৃহত্তম বাজার হিসেবে থাকছে। এই বাস্তবতা আরও বেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে চীনে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করবে। চীন একটি বৃহত্তম ভোক্তাদেশ হিসেবে বিশ্বের অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখবে। পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির প্রসারও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করবে। কারণ, চীনের নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী আরও সহজে নতুন পণ্য ক্রয় করতে পারবে।

দুই. চীনের সার্বিক শিল্পচেইন রয়েছে। এই শিল্পচেইন বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য উত্পাদনের সম্পূর্ণ ব্যবস্থা সরবরাহ করে থাকে। চীনে ব্যবসা করার সুবিধার মধ্যে আছে স্বয়ংসম্পূর্ণ অবকাঠামো, তুলনামূলক সস্তা শ্রম ইত্যাদি।

তিন. উন্নত দেশগুলোর উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও চীনের স্কেল একে অপরের পরিপূরক হতে পারে। চীনের ব্যাপক উত্পাদন-ক্ষমতা ও বড় বাজার বিদেশি উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চীনে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে পারে।

চার. যদিও বাণিজ্য-যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব এখনও তেমনভাবে বিশ্বের অর্থনীতিতে দেখা যায়নি। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে তা দেখা যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ-অবস্থায় খোদ চীনই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আদর্শ স্থান হিসেবে চিহ্নিত হবে। গত বছর সারা বিশ্বের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.৮ শতাংশ। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের অনুমান অনুযায়ী, চলতি বছর সারা বিশ্বের অর্থনীতিতের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে ৩.৯ শতাংশ।

পাঁচ. চীন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য নিজেকে আরও উন্মুক্ত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে ও সামনেও রাখবে। গত ২৮ জুলাই 'বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর চীনে প্রবেশের বিশেষ নীতি (নেতিবাচক তালিকা), ২০১৮' আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর চীনের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ এতে অনেক শিথিল করা হয়েছে। এ ছাড়া, চীন ব্যাংকিংসহ আরও কয়েকটি খাত বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

এসব কারণে, বাণিজ্য-যুদ্ধ সত্ত্বেও, চীনের ওপর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভরসা অটুট আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। মোদ্দাকথা, চীনের অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারা, চীনের বিরাট বাজার, এবং সুষ্ঠু উত্পাদন-ব্যবস্থা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রেখেছে। (ছাই/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040