মিত্র দেশগুলোর রফতানিপণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ
  2018-08-13 15:18:26  cri
যখন তুর্কি মুদ্রা লিরা সঙ্কটের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে, ঠিক তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তুরস্কের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এখন থেকে তুরস্কের এই দুটি পণ্যের ওপর ৫০ ও ২০ শতাংশ হারে রফতানিশুল্ক আদায় করবে মার্কিন সরকার। এর আগে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় সেদেশে তুর্কি আইনমন্ত্রী ও অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীর সম্পত্তি ফ্রিজ করার ঘোষণা দেয়। আজকের সংবাদ পর্যালোচনা এ-বিষয়ের ওপর।

আসলে গত বছর জি-সেভেন'র সিসিলি দ্বীপ শীর্ষসম্মেলনের পর জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "আগের যে-অংশীদারকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা যেত, তা এখন আর করা যাচ্ছে না। ইউরোপীয়দের উচিত নিজের ভাগ্য নিজে গড়ার চেষ্টা করা।" গত শতাব্দীর ৭০-এর দশকে ইরাকের উত্তরাঞ্চলে কুর্দিরা বাগদাদের সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্র কুর্দিদের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র কুর্দি মিত্রদের ত্যাগ করে। কুর্দিরা এর ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

মার্কিন প্রশাসন বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে, তা নয়; নিজের দায়িত্ব ও দেয় প্রতিশ্রুতিও লঙ্ঘন করে চলেছে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হবার পর কার্যমেয়াদের চতুর্থ দিনেই ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারি সম্পর্ক পরিকল্পনা (টিপিপি) ত্যাগ করার ঘোষণা দেন। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসে। অথচ বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী, সেগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সে-বাস্তবতাকে আমলে না-নিয়ে এবং গোটা বিশ্বের সমালোচনাকে উপেক্ষা করে প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি ইরানের সঙ্গে কয়েক বছরের আলোচনার পর 'ইরান-পরমাণু-চুক্তি'-তে স্বাক্ষর করেছিল। ট্রাম্প প্রশাসন সে-চুক্তি থেকেও একতরফাভাবে সরে আসে। জাতিসংঘের ইউনেস্কো ও মানবাধিকার কাউন্সিল থেকেও সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বাণিজ্য-যুদ্ধ বন্ধ করা হবে মর্মে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু সেই চুক্তিও একতরফাভাবে লঙ্ঘন করে ট্রাম্প প্রশাসন। চীনা রফাতানিপণ্যের ওপর একতরফাভাবে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে শুরু করে বাণিজ্য-যুদ্ধ।

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের সঙ্গে বিরোধে জড়ায়। এর কয়েকটি কারণ আছে। কিন্তু মূল কারণ হল যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ককে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র ২০১৬ সালে তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানে হস্তক্ষেপ করেছিল এবং সিরিয়ায় কুর্দিকে সহায়তা করতে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নেতৃত্বে বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা এড়িয়ে চলতে চায়। এর মানে আন্তর্জাতিক নিয়মে মেনে চলতে ট্রাম্প প্রশাসন অনিচ্ছুক।

বিশ্বের একমাত্র সুপার পাওয়ার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৯ সালের প্রতিরক্ষা বাজেট হবে ৭১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সম্প্রতি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ২০২০ সালে 'মহাকাশ বাহিনী' গড়ে তোলার জন্য কংগ্রেসকে ৮ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা বাজেট বরাদ্দ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এসবই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এমনকি মিত্রদের পর্যন্ত সন্দিহান করে তুলছে।

সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তায়িপ এরদোয়ান বলেন, তুরস্কের অন্য বন্ধু আছে; যেমন, ইরান, রাশিয়া ও ইউরোপীয় দেশগুলো। এভাবেই মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বা ট্রাম্প প্রশাসন মিত্রদের দূরে সরে যেতে বাধ্য করছে। এর শেষ পরিণতি কী হয়, তা এখন দেখার বিষয়। (ছাই/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040