সংবাদ পর্যালোচনা: আসামে নাগরিক সংকটে ৪০ লাখ মানুষ!
  2018-08-11 16:25:20  cri

অগাস্ট ১১: ভারতের আসাম রাজ্যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) সম্পূর্ণ খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৮ জনের নাম। ৩০ জুলাই বেলা দশটায় এই তালিকা ওয়েবসাইট এবং এনআরসি সেবাকেন্দ্রগুলোতে প্রকাশ করা হয়। এরপরই তোলপাড় হয় দেশে। এনআরসির খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছে সেই রাজ্যের ৪০ লাখ মানুষ। এই সেদিনও যারা ভোট দিয়েছে, তারাই এখন এ দেশে থাকতে পারা নিয়ে সংশয়ে। বিরোধীরা তোলপাড় করছে জোরেসোড়ে। কিন্তু এসবের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে মূল বিষয়টি। বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

১৯৫১ সালের পরে এই প্রথমবার ভারতের আসাম রাজ্যে নাগরিক পঞ্জি হালনাগাদ করা হয় যেন রাজ্যে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করা যায়। এই তালিকা প্রকাশের পর একমাস সময় দেওয়া হয়েছে দাবী বা আপত্তি জানানোর জন্য। সেইসব দাবী খতিয়ে দেখার পর পূর্ণ নাগরিক পঞ্জি তৈরি হবে। আসলে কী হয়েছিল ১৯৫১ সালে?

১৯৫১ সালে জনগণনার সময় আসামের নাগরিকদের একটি বিশেষ তালিকা তৈরি করা হয়। অনেকের মতে, সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায়ই এমন উদ্যোগ। সেখানে গ্রামওয়ারি নাগরিকদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির নাম, অভিভাবকদের নাম, ঠিকানা, পেশা, সম্পত্তি ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করা হয় ওই নথিতে। সেই তথ্য রাখা হয়েছিল জেলা শাসকের অফিসে। ১৯৬০ সালের পর তা তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে।

স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মকাল পর্যন্ত দলে দলে মানুষ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসামে গিয়েছে। ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এদিকে বাংলাদেশ সৃষ্টির পরও বাংলাদেশিদের আসামে ঢোকার বিষয়টি কেন্দ্রের নজরে প্রথম আনে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন -আসু। এ নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে একটি স্মারকলিপিও জমা দেয় আসু। সে পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র একটি আইন তৈরি করে। ওই আইনে বিদেশিদের চিহ্নিত করা ও তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু দেখা গেল, তাতে কোনো কাজ হয়নি।

অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে কেন্দ্রের ব্যবস্থায় নাখোশ হয়ে আন্দোলনে নামে আসু। বাধ্য হয়েই স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে কেন্দ্রীয় সরকার। চুক্তি হয় ১৯৮৫ সালের ১৫ অগাস্ট।

১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জিতে বা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত যাদের নাম ভোটার তালিকায় ছিল, তাদেরই নাগরিক পঞ্জিতে রাখা হয়। পাশাপাশি ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত যারা আসামে এসেছে তারাও থাকে ওই পঞ্জিতে।

এদিকে, ৩০ জুলাই (সোমবার) নাগরিক পঞ্জির যে খসড়া প্রকাশিত হয়েছে, তা চূড়ান্ত তালিকা নয়। যাদের নাম নেই তারা ফের আবেদন করতে পারবে। আবেদন করতে হবে চলতি বছরের ৩০ অগাস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।

বিদেশি বলে চিহ্নিত হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৯০০ মানুষ আসামের বিভিন্ন বন্দী শিবিরে আটক রয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই বৈধ নাগরিক বলে মনে করে মানবাধিকার সংগঠনগুলি।

অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়ায় বাদ পড়েন দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদের পরিবারের সদস্যরা। ওই তালিকা প্রকাশের একদিন পর এ বিষয়টি তুলে ধরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, আসামের খসড়া নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের জন্য অপমান। এটির কারণে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশকারী বলা হচ্ছে।

তৃণমূল নেত্রী বলেন, এনআরসিতে স্থান না পাওয়া ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র এক শতাংশ সীমান্তের অনুপ্রবেশকারী হতে পারে। এই ৪০ লাখ মানুষ কয়েক প্রজন্ম আগে এখানে এসেছেন, ঐতিহাসিক কারণে এখানে আসা মানুষগুলোকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। এটা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কে জটিলতা তৈরি করবে। তারা আমাদের প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে আমাদের ভালো বন্ধন রয়েছে। আমরা একই ভাষায় কথা বলি। প্রতিবেশী হিসেবে আমরা তাদের ভালোবাসি। আমি বুঝতে পারছি না কেন সরকার এটা করছে।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040