মার্কিন ভোক্তারা বাণিজ্য যুদ্ধে সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  2018-08-09 16:59:02  cri
সংবাদ পর্যালোচনা ০৮০৯

মার্কিন ভোক্তারা বাণিজ্য যুদ্ধে সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে

৬ জুলাই থেকে চীনের ৩৪০০কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের রফতানিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত মঙ্গলবার মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিসের ২৩ অগাস্ট থেকে চীনের প্রায় ১৬০০ কোটি ডলার মূল্যের রফতানিপণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হয়।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যায় জানান, যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে একটি অত্যন্ত অযৌক্তিক অনুশীলন। চীন নিজের বৈধ অধিকার এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হবে। সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের ১৬০০ কোটি ডলার মূল্যের রফতানিপণ্যের ওপর ২৩ অগাস্ট দুপুর ১২টা ১ মিনিট থেকে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে চীন।

গতকাল বুধবার চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের অনুমোদনে চীনের শুল্ক কমিটির '৭ নম্বর বিজ্ঞপ্তি—২০১৮'-এ এই তথ্য প্রকাশিত হয়।

চীন এবার প্রায় একশত শব্দ দিয়ে অত্যন্ত সংক্ষেপে কিন্তু একটি শক্তিশালী ও বিবেকবান উত্তর দিয়েছে। গত ৪ মাসের শক্তি পরীক্ষা থেকে চীন যুক্তরাষ্ট্রের 'কৌশল' জানতে পেরেছে এবং নিজেকে প্রস্তুত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত আপগ্রেড বাণিজ্য যুদ্ধে চীনের উত্তর ও নীতি হলো ' বাণিজ্য যুদ্ধে চীনের ইচ্ছে নেই, আবার কোনো ভয়ও নেই, কিন্তু প্রয়োজন হলে যুদ্ধ করতে হবে'। চীনের দৃঢ় পদক্ষেপ হলো সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ আরো গভীর করা, নিজ দেশের উন্নয়নের ওপর আরো গুরুত্বারোপ করা।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ ঘটানোর লক্ষ্য হলো 'মার্কিন রাষ্ট্রিয় নিরাপত্তা'-র অজুহাতে সেদেশের উত্পাদিত শিল্পে আরো বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। কিন্তু বাস্তবে ফলাফল সন্তোষজনক নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিসের সম্প্রতি আয়োজিত শুল্ক আরোপ সংশ্লিষ্ট একটি মামলার শুনানিতে দেশটির রাসায়নিক শিল্প, ইলেকট্রনিক এবং ফোটোভোলটাইক শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পের ৮২জন প্রতিনিধি বক্তৃতা দেয়। তাদের সাধারণ চিন্তা হলো শুল্ক আরোপের ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসা খরচ বাড়ানোয় কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। এতে শেষপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হবে, আমেরিকান কোম্পানিগুলির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হ্রাস পাবে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে যেতে বাধ্য হবে। মামলার শুনানিটিতে শুধুমাত্র ৬জন প্রতিনিধি শুল্ক আরোপে সমর্থন প্রদান করে।

যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং শিল্প সমিতির ব্যাপক বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও মার্কিন সরকার চীনের প্রায় ১৬০০ কোটি ডলার মূল্যের রফতানিপণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটি এমন একটি সিদ্ধান্ত যা দেশটির জনসাধারণের বোঝার জন্য কঠিন।

মার্কিন সরকারের শুল্ক আরোপের পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমে চীনের উন্নয়নে চাপ ফেলে 'আমেরিকা ফার্স্ট' এই ধারণা বজায় রাখা। তাছাড়া, জানা গেছে, মে মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ২০হাজারটিরও বেশি ইস্পাত পণ্যের শুল্ক মওকুফ করার আবেদন গ্রহণ করেছে। কিন্তু একটি আবেদনও অনুমোদিত হয়নি। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন সরকারের কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তাহলে মূল সমস্যা হলো, শুল্ক আরোপ কি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষা করতে পারবে? মার্কিন সরকারের কর্মকর্তারা তা জানেন না, তারা জানেন শুল্ক আরোপ অবশ্যই তাদের জন্য বেশি কল্যাণ বয়ে আনবে। এ ভিত্তিতে মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা ভোক্তাদের কোনো দাবি বা কোনো কথা তারা শোনেন না। এর ফলাফল হলো সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত খারাপ খবর প্রকাশ পাওয়া।

আমেরিকান এলিমেন্ট ইলেকট্রনিক্স ২ মাস পর দক্ষিণ ক্যারোলিনায় তাদের টিভি কারখানা বন্ধ করবে।

পিটারসন ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক্স'র গবেষণা উপাত্তে দেখা যায়, বিশ্বের গাড়িপণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে আগামী ১ থেকে ৩ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১.৯লাখ শ্রমিক তাদের চাকরি হারাবে।

ব্যাংক অফ আমেরিকা মেরিল লিঞ্চ-এর সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মার্কিন সরকারের বাণিজ্য নীতি যেন ৩০ বছর আগের খারাপ ইতিহাসের একটি পুনরাবৃত্তি। মার্কিন ভোক্তারা বাণিজ্য যুদ্ধে সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (জিনিয়া/টুটুল/সুবর্ণা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040