চীনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী
  2018-08-08 12:53:03  cri
'আমি যখন বৃত্তি নিয়ে চীনে আসি তখন অনেকেই ঠাট্টা করে বলেছিল, চীনে গিয়ে কী হবে? কিন্তু এখন তারা কিভাবে সন্তানদের চীনে পড়তে পাঠাবেন সে বিষয়ে আমার কাছে জানতে চান'।

কথাগুলো বলছিলেন ড. কিশোর কুমার বিশ্বাস। তিনি বর্তমানে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরেন এক্সপার্ট এডুকেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৯ সালে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ছাত্র কিশোর কুমার এইচ এস সি পাশ করার পর ঢাকায় এসে বুয়েটে ও ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কিন্তু বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার সময় গুরুতর অসুস্থ থাকায় পরীক্ষাটা দেওয়া হয়নি। দৈনিক পত্রিকায় চীনের সরকারি বৃত্তির সার্কুলার দেখে আবেদন করেন তিনি। ২০০০ সালে চীনে গিয়ে প্রথমে উহান বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর চীনাভাষা শেখেন। তারপর চীনের অন্যতম সেরা ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ব্যাচেলর ডিগ্রি নেন। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স অর্জন করেন কম্পিউটার সফটওয়্যার বিষয়ে। প্রথমদিকে চীনা ভাষায় লেখাপড়া করতে খুবই কষ্ট হয়েছিল তার। তবে অদম্য মনোবল ও অধ্যবসায় তাকে সাফল্য এনে দেয়।

চীন বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশ থেকে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্সসহ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীরা চীনে যাচ্ছেন। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী চীনে বিশ্ববিদ্যালয় ও সমমানের কলেজের সংখ্যা ২৯১৪টি। চীনের প্রায় সব প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রী আছেন। তারা সকলেই বেশ সাফল্যের সঙ্গেই পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এবার কিছু নেতিবাচক কথাবার্তা বলি। চীনে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় বেশ ভালো করলেও কিছু কিছু সমস্যাতেও পড়েন। প্রথমেই তাদের সমস্যা হয় খাবার নিয়ে। চীনদেশের খাদ্যে অভ্যস্ত হতে তাদের বেশ কয়েক সপ্তাহ বা মাসখানেক সময় লাগে। চীনের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতেও লাগে বেশ কিছুটা সময়। এজন্য পরামর্শ হলো, যদি মনস্থির করেন চীনে পড়তে যাবেন তাহলে অবশ্যই দেশে থাকতেই চীনা ভাষায় কিছুটা পারদর্শী হয়ে নিন। চীনা ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভালোবাসার জন্য নিজের মনকে প্রস্তত করে তবেই চীনদেশে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। আর চীনের যে প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন সে প্রদেশের আবহাওয়া বিষয়ে জেনে নিন আগেভাগেই। আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর শারিরীক ও মানসিক শক্তিও থাকতে হবে বৈকি।

কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের সদর দপ্তর হানবানে অবস্থিত। কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের বৃত্তি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীরা চীনে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত কনফুসিয়াস ক্লাসরুম থেকে চীনা ভাষা শিখে অনেকে চীনা ভাষায় উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণের জন্য বৃত্তি নিয়েও চীনে যাচ্ছেন। এখন চীনের ১৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের বৃত্তি রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এই বৃত্তি নিয়ে চীনে যাচ্ছেন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। তাদের মধ্যে অনেকে ফিরে এসে বাংলাদেশেই চীনা ভাষার শিক্ষক হয়েছেন। আবার অনেকে চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।

এই বিষয়ে কথা হলো জান্নাতুন নাহারের সঙ্গে। তিনি ২০০৯ সালে চীন সরকারের বৃত্তি নিয়ে বেইজিং নর্মাল ইউনিভারসিটিতে চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এর পর ২০১৪ সালে কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের বৃত্তি নিয়ে কুয়াংচৌর সান ইয়াতসেন ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার জন্য যান। ২০১৬ সালে তিনি টিচিং চাইনিজ টু স্পিকারস অফ আদার ল্যাঙ্গুয়েজ বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের চীনা ভাষার প্রভাষক হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন। জান্নাতুন নাহার মনে করেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য চীনা ভাষায় শিক্ষাগ্রহণের উজ্জ্বল ভবিষ্যত রয়েছে। চীনাভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করে অনেকেই নিজেদের উন্নত ক্যারিয়ার গড়ে নিতে পারেন।

প্রশ্ন: উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য চীনে যেতে হলে কী ধরণের প্রস্তুতি প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040