'চীনা ভাষার আকর্ষণ' জ্ঞান প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় পর্ব
  2018-08-06 14:47:12  cri

 


সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, সবাই ভালো আছেন? সুদূর বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠান, আর এ আয়োজনে আপনাদের সঙ্গে রয়েছি সুবর্ণা ও টুটুল।

গেল সপ্তাহ থেকে 'চীনা ভাষার আকর্ষণ' শীর্ষক জ্ঞান প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এ প্রতিযোগিতার আরো দু'টি প্রবন্ধ ও এর সঙ্গে জড়িত প্রশ্নমালা তুলে ধরবো। ‌এছাড়া, আফ্রিকান জুলু ভাষার চীনা শিক্ষকের গল্প শোনাবো।

শুরু করছি আমাদের প্রতিযোগিতার প্রবন্ধ ও প্রশ্নমালা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই চীন ও বাংলাদেশের মৈত্রীর বন্ধন সুদৃঢ় করার কাজ করে চলেছে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সফররত চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটসহ দু'দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক প্রকল্পগুলো উন্মোচন করেন। তাঁরা একসাথে এমন গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে চীনের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের সদরদপ্তরের অনুমোদনে ইউননান বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশে চীনের ইউননান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটে চীনা নাগরিকরা চীনা ভাষার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। তারা স্থানীয় ভাষার নাগরিকদেরও চীনা ভাষার শিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এর পাশাপাশি দু'দেশের উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষাদান ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ত্বরান্বিত করার জন্যও এ ইন্সটিটিউট কাজ করছে। এ ইনস্টিটিউট জাতীয় চীনা ভাষা মানদন্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করার উদ্দেশ্যে বিশেষ কোর্স আয়োজন করে এবং ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক সহায়তা করছে।

উল্লেখ্য যে, চীনা ভাষার মান পরীক্ষাকে সংক্ষেপে 'এইচএসকে' বলা হয়। এটা হচ্ছে চীন সরকার কর্তৃক নন-চীনা ভাষীদের জন্য প্রচলিত এক আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চীনা ভাষার মানদণ্ড পরীক্ষা। এ পরীক্ষা প্রতি বছর চীনে এবং বিদেশে আয়োজিত হয়। পরীক্ষার্থীরা এ পরীক্ষায় পাশ করলে সংশ্লিষ্ট শ্রেণীর সার্টিফিকেট পান। ২০১৭ সাল পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে মোট ৮৬০টি 'এইচএসকে' পরীক্ষা কেন্দ্র আছে। ১১২টি দেশে ৫৩০টি পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে ।

'এইচএসকেকে' হচ্ছে চীনা ভাষার মান বিষয়ক মৌখিক পরীক্ষা। রেকর্ডিং এর মাধ্যমে পরীক্ষা দেওয়া হয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মৌখিক চীনা ভাষার মান যাচাই করা হয়।

'বিসিটি' হচ্ছে ব্যবসাসংক্রান্ত চীনা ভাষা পরীক্ষা। নন-চীনা ভাষী ব্যবসায়ীদের চীনা ভাষার মান যাচাই করার জন্য স্থাপিত জাতীয় পর্যায়ের মানদণ্ড পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের বয়স, শিক্ষা বা চীনা ভাষা শেখার সময়সীমার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।

'ওয়াইসিটি' হচ্ছে ইয়োথ চাইনিজ টেস্ট। নন-চীনা ভাষী মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের চীনা ভাষার মান যাচাই করা হয়। এ পরীক্ষায় লিখিত ও মৌখিক দু'টি অংশ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিটি পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়। পরীক্ষার আগে বিশেষ করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যাতে শিক্ষার্থীরা মৌখিক পরীক্ষার প্রক্রিয়া এবং রেকর্ডিং সরঞ্জাম ব্যবহার করতে জানেন। এভাবে পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিতে পারেন এবং সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। এ সব পরীক্ষায় পাশকৃত সার্টিফিকেট চীন সরকারের বৃত্তি পেতে সহায়তা করে। আর এর মাধ্যমে চীনে গিয়ে লেখাপড়া করার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় শিক্ষার্থীদের।

প্রশ্ন:

১। 'চীনা ভাষার মান পরীক্ষা' এর সংক্ষিপ্ত নাম কি?

ক. HSK খ. HSKK গ. BCT

২। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন?

ক. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট

খ. নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট

গ. সিআরআই-এসএমএফ কনফুসিয়াস ক্লাসরুম

নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট

২০০৬ সালে বাংলাদেশের নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং চীনের ইউননান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতার ভিত্তিতে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। এটা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট এবং বিশ্বের সবচেয়ে আগে প্রতিষ্ঠিত কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটগুলোর অন্যতম।

১২ বছর উন্নয়নের পর নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট পর পর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫টি চীনা ভাষার টিচিং পয়েন্ট স্থাপন করেছে।

এই কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সমাজের বিভিন্ন মহলের জন্য চীনা ভাষার কোর্স এবং নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য চীনা ভাষার ক্রেডিট কোর্স স্থাপন করেছে। এছাড়া সক্রিয়ভাবে চীনা সংস্কৃতির প্রসার এবং চীন-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক বিনিময় সাধন করছে।

২০০৮ সালে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ হাতে হাত রেখে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রথম চীনা ক্রেডিট কোর্স "চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি এন্ট্রি (ক)" (সিএইচএন ১০১) শুরু করে, যা বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা প্রথম চীনা ক্রেডিট কোর্স। এটি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় চীনা ভাষা শিক্ষার নতুন পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

ক্রেডিট কোর্স চালু হওয়ার পর তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রথম বছরে এই কোর্সটি একটি ক্লাস থেকে তিনটি ক্লাস পর্যন্ত উন্নীত হয় এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১শ' ছাড়িয়ে যায়।

২০১৫ সালের অটাম সেমিস্টার থেকে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট কোর্স মডেল সমন্বয় করে। নতুন "১ +এন" মডেলটির মানে একটি ভাষা কোর্স বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক কোর্সের সাথে সমন্বিত, ভাষা কোর্স ৮৫% এবং সাংস্কৃতিক কোর্স ১৫% কাঠামো অনুযায়ী হিসাব করা হয়। প্রতিটি সেমিস্টারের সিএইচএন ১০১ কোর্সে একজন ভাষা শিক্ষক ও ৩-৫ জন সাংস্কৃতিক কোর্স শিক্ষকদের নিয়ে কোর্সগ্রুপ গঠন করা হয়। নতুন পাঠ্যক্রম মডেল শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সমর্থন পায়। শুধু ২০১৬ সালে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯শ' ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক ৬টি সেমিস্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স পরিমাপে শিক্ষার্থীর রেটিং ৪.৭ বা তার বেশি হয়। ২০১৭ সালের সামার সেমিস্টারে, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ও ইংরেজি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে "চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি এন্ট্রি (খ) (সিএইচএন ২০১) কোর্স শুরু হয়। প্রথম কোর্সে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০জনেরও বেশি।

বিভিন্ন পর্যায়ের ভাষা কোর্স ছাড়াও কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট কাগজ-কাটা, হস্তলিপিশিল্প, থাইজি, চা শিল্প, চীনা কবিতা, চীনা নাচ ও চীনা সঙ্গীতসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ক্লাস চালু করে।

কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা বিগত অনেকগুলো 'চীনা ভাষা সেতু' প্রতিযোগিতায় বার বার অনেক ভালো ফলাফল অর্জন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের শত শত শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়ে চীনে লেখাপড়া করতে আসেন। তাদের মধ্যে অনেকে স্বদেশে ফিরে দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

প্রশংসিত ভাষা কোর্স ছাড়াও প্রতি বছর কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট 'চাইনিজ ডে', 'কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ডে', 'চীনা সাংস্কৃতিক মাস' এবং 'শুভ নববর্ষ'সহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে এবং নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে চীনে গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম সংগঠিত করে।

নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এইচএসকে টেস্ট সাইটও বটে।

দশ-বার বছর ধরে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বেশ কয়েকবার গৌরব অর্জন করে। ২০১৬ সালে একাদশ বিশ্ব কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট সম্মেলনে, 'উন্নত কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট' হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে। ভবিষ্যতে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট সক্রিয়ভাবে চীন ও বাংলাদেশের মানুষের যোগাযোগের সেতুতে পরিণত হওয়ার চেষ্টা চালাবে, যাতে চীনা ভাষা শেখানো এবং চীন-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্য আরো বড় অবদান রাখা যায়।

প্রশ্ন:

১. নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট কোন সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?

ক. ২০০৯ সালে

খ. ২০০৬ সালে

গ. ২০১৬ সালে

২. নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট কোন চীনা ভাষা প্রতিযোগিতায় বার বার ভাল ফলাফল অর্জন করেছে?

ক. চীনা ভাষা সেতু

খ. চাইনিজ ডে

গ. চীনা সাংস্কৃতিক মাস

আফ্রিকার জুলু ভাষার চীনা শিক্ষক হুয়াং লি জি'র গল্প

সম্প্রতি চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পি দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেন এবং দেশটিতে অনুষ্ঠিত ব্রিক্সভুক্ত দেশের শীর্ষসম্মেলনে অংশ নেন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে যখন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেন, তখন পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, আফ্রিকান দেশের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় চীনের সাথে 'বন্ধুত্বপূর্ণ শহর সম্পর্ক' ও চীনা ভাষার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সবচেয় বেশি। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় চীনা শিক্ষার্থীদের জন্য বহু প্রধান বিষয় চালু করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন চীনা শিক্ষক স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে গবেষণা করেন, আজকের অনুষ্ঠানে তাঁর গল্প শোনাবো।

বেইজিং বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়া ও আফ্রিকা একাডেমির তরুণ শিক্ষক হুয়াং লি জি প্রায় অর্ধ বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার জুলু ভাষার ব্যাকরণ ও মৌলিক সংলাপ নিয়ে লেখাপড়া করছেন। আফ্রিকান আঞ্চলিক ভাষার অন্যতম হিসেবে জুলু ভাষার উচ্চারণ দক্ষিণ আফ্রিকার উপজাতীয় সংস্কৃতির সাথে জড়িত। এ সম্পর্কে শিক্ষক হুয়াং বলেন,

'জুলু ভাষার মধ্যে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা বলার সময় 'প্লসিভ' থাকতে হবে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, সি অক্ষর বলার সময় এমন 'প্লসিভ' বলতে হবে। আসলে জুলু ভাষার উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অন্যান্য জাতির ভাষার সংমিশ্রণ ঘটায় এমন নিয়ম তৈরি হয়েছে। তাই ভাষার মধ্যে ঐতিহ্যিক বৈশিষ্ট্যের সাথে নিজের বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। বলা যায়, এই ভাষা একটি কঠিন ভাষা।'

দক্ষিণ আফ্রিকার উইটওয়াটারস্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলু ভাষা শিখছেন শিক্ষক হুয়াং। দক্ষিণ আফ্রিকার পাঁচ ভাগের এক ভাগের বেশি লোক এ ভাষা ব্যবহার করেন। তবে দেশটির অর্ধেক মানুষ এ ভাষা বুঝতে পারেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বেইজিং বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয় জুলু ভাষার স্নাতক কোর্স চালু করবে। তখন শিক্ষক হুয়াং দেশে ফিরে জুলু ভাষার ক্লাসের শিক্ষার্থীদের এ ভাষা শেখাবেন।

জুলু ভাষা কঠিন হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার ছাত্রছাত্রীদের বড় আবেগ ও আন্তরিক সাহায্যে বেশ ভালোভাবে এ ভাষা শিখতে শুরু করেন শিক্ষক হুয়াং। তিনি বলেন,

'আমি এখানে জুলু ভাষা শেখার সময় সবাই আমাকে আন্তরিকভাবে সাহায্য দেয়। আমি তাদের আন্তরিকতা অনুভব করেছি। একজন বিদেশি জুলু ভাষা শেখার কারণে তারা সবাই গর্বিত।'

জুলু ভাষার শিক্ষক মজওয়াকে মাসেকো মনে করেন, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সম্পর্ক দিন দিন উন্নত হচ্ছে, দু'দেশ ও দু'দেশের জনগণের মধ্যে বিনিময় ও আদান-প্রদান অনেক বেড়ে যাবে। আরো বেশি চীনা জুলু ভাষা শিখলে দ্বিপাক্ষিক বিনিময়ে সহায়ক হবে। তিনি বলেন,

'ভাষা হলো সংস্কৃতির ভিত্তি, জুলু ভাষা শেখার মাধ্যমে স্থানীয় সংস্কৃতি বোঝা সহজ হয়ে যাবে। চীনে জুলু ভাষার দক্ষ ব্যক্তি বা বিশেষজ্ঞ থাকলে তারা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।'

চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলু ভাষার স্নাতক কোর্স স্থাপন করা এবং চীনা শিক্ষকের জুলু ভাষা শেখা আফ্রিকান বিশেষজ্ঞদের জন্য অনেক উত্সাহব্যঞ্জ। এ সম্পর্কে উইটওয়াটারস্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আফ্রিকান ভাষা বিভাগের পরিচালক ম্যাডাম ইন্নোসেনসিয়া জি মহলামবি এটাকে 'মাইলফলক' বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,

'ইংরেজি ও আফ্রিকানস ভাষার অতুলনীয় অবস্থানের কারণে জুলুসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা উন্নয়নে বড় চাপের সম্মুখীন হয়। তবে চীন জুলু ভাষার উন্নয়নের ওপর যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তা ভাষা রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। তাই আমার মনে হয়, চীনা শিক্ষক জুলু ভাষা শেখার পর চীনা শিক্ষার্থীদের এ ভাষা শেখাবেন, যা জুলু ভাষার উন্নয়নের এক মাইলফলক।'

দক্ষিণ আফ্রিকার মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, একজন ভদ্রলোক যে ভাষা বুঝতে পারে সে ভাষায় কথা বললে তা তাঁর মাথায় থাকে। যদি তাঁর মাতৃভাষায় কথা বলা যায়, তাহলে এ ভাষা সারাজীবন মনে থাকে। এ সম্পর্কে চীনা শিক্ষক হুয়াং বলেন, জুলু ভাষা শেখার মাধ্যমে তিনি দু'দেশের জনগণের মৈত্রীতে নতুন সেতু স্থাপন করতে পারবেন বলে আশা করেন। তিনি বলেন,

'ভাষা ও চিন্তাভাবনা বোঝার পর স্থানীয় লোকের সংস্কৃতি ও জীবনযাপন জানা এবং তাদের সাথে সুষ্ঠুভাবে সহাবস্থান করা সম্ভব।'

সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়, আমাদের অনুষ্ঠানও তাড়াতাড়ি শেষ হবে। নতুন কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য স্বাগত জানাই। এ বিষয়ে নিয়মিত চোখ রাখুন আমাদের এ অনুষ্ঠানে। আগামী সপ্তাহের অনুষ্ঠানে জানবেন আরো নতুন বিষয় ও নতুন প্রশ্নের উত্তর।

প্রিয় শ্রোতা, এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের কাছে চিঠি লিখবেন। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn, caoyanhua@cri.com.cn

রেডিও'র মাধ্যমে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা শুনতে মিস করলে বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে শুনতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই দিনে একই সময় আবার কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040