সম্প্রতি ওয়াশিংটনে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লদ ইয়ুঙ্কা। বৈঠকে ট্রাম্প ইউরোপীয় গাড়ির ওপর শুল্ক বসানোর হুমকি থেকে সরে আসেন। বিনিময়ে ইয়ুঙ্কা জানান, ইইউ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি তরল প্রাকৃতিক গ্যাস ও সয়াবিন কিনবে।
বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে অতো সহজভাবে দেখছেন না। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য রিচার্ড করবেট সিনহুয়াকে বলেছেন, দু'পক্ষ আসলে একটা কার্যকর চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে মাত্র। তা ছাড়া, একপক্ষ যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তখন শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ইউরোপীয় স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ প্রসঙ্গে করবেট বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে একতরফাভাবে এই শুল্ক আরোপ করেছিল। অথচ, নিরাপত্তার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এমন একতরফা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে হয় না। বস্তুত, এখন ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করাটাই একটা অস্বস্তিকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কৃষি ও বাণিজ্যনীতি নিয়ে কাজ করেন এমন একজন সাংবাদিক ক্রিস হর্সম্যান। তিনি সিনহুয়াকে বলেন, ট্রাম্প-ইয়ুঙ্কা বৈঠকের পর আপাতত উত্তেজনা কিছুটা কমেছে বলে মনে হতে পারে। তবে, সমস্যা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে। তিনি এ-সপ্তাহে যা বলেন, পরের সপ্তাহে বলেন ঠিক উল্টোটা। তার মানে হচ্ছে, ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার সময় কোনো বিষয়ে নিশ্চিত থাকা সম্ভব না।
হর্সম্যান আরও বলেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে কিছু অর্জিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়নি। আসলে দু'পক্ষ আলোচনা করতে একমত হয়েছে। তারা কোনো ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
বিদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিশুল্ক আরোপের পর, চীনসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোও পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিপণ্য সয়াবিন, চিনি ও ফলের দাম বেড়েছে বিদেশের বাজারে। এতে এসব পণ্যের চাহিদাও কমেছে। এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মার্কিন কৃষকরা। এ-জন্য বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই দেশে-বিদেশে সমালোচিত হচ্ছেন ট্রাম্প। হর্সম্যান বলেন, সত্য হচ্ছে, বাণিজ্য-যুদ্ধ থেকে কোনো পক্ষই লাভবান হয় না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য-যুদ্ধ শুরু করেছেন এবং এর কুফল ভোগ করতে শুরু করেছে মার্কিন কৃষকরা। এখন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, মার্কিন কৃষকদের ১২০০ কোটি ডলার ভর্তুকি দেবেন। বিশেষজ্ঞরা একে 'বেইল আউট' নামে অভিহিত করলেও, ট্রাম্প প্রশাসন তা মানতে নারাজ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষকদের এতো বিপুল অঙ্কের অর্থ ভর্তুকি দেওয়া মার্কিন অর্থনীতির জন্য মোটেই কোনো সুখকর বিষয় নয়।
২. চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে চীনের সফ্টওয়ার ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মোট রাজস্ব দাঁড়ায় ২.৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (৪৩,০০০ কোটি মার্কিন ডলার)-এ, যা গতবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪.৪ শতাংশ বেশি। চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এক বিবৃতিতে এ-তথ্য জানায়।
বিবৃতি অনুসারে, এ-খাতে স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। প্রথম ছয় মাসে এই খাত থেকে মুনাফ অর্জিত হয়েছে ৩৫,৮০০ কোটি ইউয়ান, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০.৫ শতাংশ বেশি। তা ছাড়া, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এই খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে এবং কর্মীদের বেতন-ভাতাও বেড়েছে।
অবশ্য বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে সফ্টওয়ার রফতানি হয়েছে ২৫৩০ কোটি মার্কিন ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে মাত্র ২.৬ শতাংশ বেশি। অথচ জানুয়ারি-মে সময়কালে এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২ শতাংশ।
৩. চীনে চলতি বছরের প্রথমার্ধে পরিবহন খাতে বিনিয়োগ স্থিতিশীল ছিল। এসময় ১.৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৯,৫০০ কোটি মার্কিন ডলার)-এর বেশি অর্থ এই খাতে বিনিয়োগ করা হয়। চীনের পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ-তথ্য জানায়।
মন্ত্রণালয় জানায়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মোটর-রাজপথে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৪৩,০০০ কোটি ইউয়ান, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২.৮ শতাংশ বেশি। আর গ্রামীণ রাস্তাঘাট উন্নয়নে বিনিয়োগ করা হয়েছে ২০,০০০ কোটি ইউয়ান, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১.৮ শতাংশ বেশি।
চীন চলতি বছর পরিবহন খাতে ২.৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে। ২০২০ সালের মধ্যে চীন তার আধুনিক পরিবহন-ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ নিরাপদ, সুবিধাজনক, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে চায়।
৪. ইরান চলতি বছরের প্রথম চার মাসে তেল-বহির্ভূত অন্যান্য পণ্য রফতানি করেছে ১৫৪৫ কোটি মার্কিন ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪.৬৯ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি তেহরান টাইমস্ পত্রিকা এ-খবর দিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ইরানের তেল-বহির্ভূত পণ্যের মূল আমদানিকারক দেশ হচ্ছে চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, আফগানিস্তান, ও দক্ষিণ কোরিয়া।
খবর অনুসারে, উক্ত সময়ে ইরান তেল-বহির্ভূত অন্যান্য পণ্য আমদানি করেছে ১৫১৮ কোটি ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪.০৫ শতাংশ কম। ইরানের আমদানি-করা পণ্যের মধ্যে আছে ভুট্টা, চাল, সয়াবিন ইত্যাদি। ইরান এসব পণ্য আমদানি করেছে চীন, ইউএই, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও জার্মানি থেকে।
৫. ব্রাজিলে বাজেট-ঘাটতি গতবছরের তুলনায় অনেক কমেছে, তবে টাকার অঙ্কে সেটা এখনও বিশাল। চলতি বছরের প্রথমার্ধশেষে দেশটির বাজেট-ঘাটতি দাঁড়ায় ৮৮৪ কোটি মার্কিন ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪২ শতাংশ কম।
প্রাপ্ত হিসেব অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটির সরকারের আয় হয়েছে ১৬,১৫৪ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের অর্থ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬.৩ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের ব্যয় হয়েছে ১৭,১৪৮ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের অর্থ, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২.২ শতাংশ বেশি।
৬. বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৯৮৮ একর জমিতে শিল্প-পার্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে চীনের একদল বিনিয়োগকারী।চীনের সিচুয়ান সিল্করোড ইকনোমিক বেল্ট ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড করপোরেশন চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিরা সম্প্রতি এ-বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-র সঙ্গে একটি সমঝোতা-স্মারকে স্বাক্ষর করে।
সমঝোতা-স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সিচুয়ান চেম্বার অব কমার্স চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে ১৫৯ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের প্রস্তাব অনুসারে, ৯৮৮.৫০ একর জমির একটি অংশে শিল্প-উৎপাদন অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। প্রস্তাবিত অঞ্চলে অটোমোবাইল ও মোটরসাইকেল, কৃষি-যন্ত্রপাতি ও গবাদি পশুর খাবার উৎপাদন করা হবে।
এ ছাড়া স্টিল, টেক্সটাইল ও খাদ্য উৎপাদনের জন্য বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সও নির্মাণ করতে চান চীনা বিনিয়োগকারীরা। দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলারও পরিকল্পনা আছে তাদের।
উল্লেখ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে 'বেজা'। এর মাধ্যমে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান এবং ৪০০০ কোটি ডলার রফতানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৮৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে, ২৬টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শেষ হয়েছে; আরও ১২টি অঞ্চল নির্মাণের পর্যায়ে রয়েছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, চট্টগ্রামের মিরসরাই ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ৩০ হাজার একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে 'মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল'।
৭. মোবাইল-ব্যাংকিং সেবা অনুমোদন, নিয়ন্ত্রণ ও কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই আইনের ফলে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো ব্যাংকিং-ব্যবসা করতে পারবে না। গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুন্নকারী এবং অপরাধের সঙ্গে জড়িত কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে। সম্প্রতি 'বাংলাদেশ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) রেগুলেসন্স-২০১৮' শীর্ষক আইনটি জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আইনে বলা হয়েছে, ব্যাংকের নেতৃত্বে এমএফএস কোম্পানি খোলা যাবে। তবে তাতে ব্যাংকের কমপক্ষে ৫১ শতাংশ মালিকানা থাকতে হবে। মোবাইল-ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। তবে কোনো ব্যাংকের অনুমোদনকৃত ঋণ মোবাইল-ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণ এবং কিস্তি পরিশোধ করা যাবে। গ্রাহকের একাউন্টে টাকা জমা ও উত্তোলন ছাড়া অন্যকোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবে না এজেন্টরা। এজেন্টদের তৃতীয় পক্ষ হিসেবে টাকা পাঠানো বা গ্রহণ করাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
আইন অনুসারে, সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ এমএফএসের লাইসেন্স দেবে। গ্রাহকের স্বার্থ হানিকর কোনো কাজ বা গুরুতর অপরাধ করলে লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স সংগ্রহ করে দেশে বিতরণ করা যাবে। তবে মোবাইল-ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ক্রসবর্ডার লেনদেন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও হুন্ডি প্রতিরোধে প্রচলিত মানিলন্ডারিং আইন মেনে চলতে হবে এমএমএফগুলোকে। এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর একাউন্টে টাকা জমাতে পারবেন গ্রাহকরা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ১৮টি ব্যাংকের মোবাইল-ব্যাংকিং সেবা রয়েছে। বিকাশ, রকেট, মাইক্যাশ, ইউক্যাশ, শিওরক্যাশ, এমক্যাশ এগুলো বাংলাদেশে জনপ্রিয়। প্রতিদিন গড়ে ১১০০ কোটি টাকা লেনদেন হয় মোবাইল-ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
(আলিমুল হক)