সুরের ধারায় ০৩ অগাস্ট ২০১৮
  2018-08-03 16:06:22  cri


কলিম শরাফী হলেন বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তার সম্পূর্ণ নাম মাখদুমজাদা শাহ সৈয়দ কলিম আহমেদ শরাফী। দেশাত্মবোধক গানের ক্ষেত্রেও তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এর বাইরে তিনি ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িত রেখেছিলেন। আজকের অনুষ্ঠানসহ আগামী কয়েকটি অনুষ্ঠানে শুনবেন কলিম শরাফীর গাওয়া কিছু গান।

কলিম শরাফী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সিউড়ি সদর মহকুমার অন্তর্গত খয়রাদিহি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ৷ কলিম শরাফীর পিতার নাম সামি আহমেদ শরাফী ও মাতার নাম আলিয়া বেগম। মাত্র চার বছর বয়সে মা আলিয়া বেগমকে হারান তিনি। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া কলিম শরাফীর আরও দুই বোন রয়েছে। তাঁর হাতেখড়ি হয় আরবি ওস্তাদজী আর বাংলা পণ্ডিত মশাইয়ের হাতে। এরপর ১৯২৯ সালে তিনি পাঠশালায় ভর্তি হয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তাঁতিপাড়া প্রাইমারি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে চলে আসেন কলকাতায় বাবা সামি আহমেদ শরাফীর কাছে। সেখানে ১৯৩৫ সালে ভর্তি হন মাদ্রাসা-ই-আলিয়াতে। অ্যাংলো পার্শিয়ান বিভাগে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেসময় পরবর্তীকালে খ্যাতিমান সাংবাদিক শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার তাঁর সহপাঠি ছিলেন। তিনি কলকাতার বিখ্যাত সঙ্গীত বিদ্যালয় 'দক্ষিণী' থেকে ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন। এরপর সেখানে শিক্ষকতা শেষে ১৯৫০ সালে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। তিনি ১৯৬৪-৬৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রোগ্রাম ডাইরেক্টর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ১৯৬৯-৭২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান গ্রামোফোন কোং লিঃ এর পরিচালক ও জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৪-৭৬ সালে তিনি বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন এর চীফ ইনফরমেশন অফিসার ও জেনারেল ম্যানেজার পদে দায়িত্ব পালন করেন।

কলিম শরাফী প্রথমবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৪৯ সালে। প্রথমা স্ত্রীর সাথে ১৯৫৭ সালে বিচ্ছেদ ঘটার পর ১৯৬৩ সালে দ্বিতীয়বারের মতো পরিণয় সূত্র আবদ্ধ হন। কলিম শরাফীর দ্বিতীয় স্ত্রী অধ্যাপিকা নওশেবা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করতেন। কলিম শরাফীর দুই সন্তানের নাম আলেয়া শরাফী এবং আজিজ শরাফী।

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড

রক্ষণশীল পরিবার থেকে উঠে আসলেও কলিম শরাফী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে নিজেকে সবসময়ে নিয়োজিত রেখেছেন। ১৯৪৪ সালে তিনি ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশন (আইপিটিএ)-তে যোগ দিয়ে কলকাতার হাজারা পার্কে হাজার হাজার দর্শকশ্রোতার উপস্থিতিতে সর্বপ্রথম গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। এরপর ১৯৪৬ সালে বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে বের হয় কলিম শরাফীর প্রথম গণসঙ্গীতের রেকর্ড। প্রায় সাথে সাথেই নিয়মিত শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন কলকাতা বেতারে। এরপর শুভ গুহঠাকুরতার রবীন্দ্র সঙ্গীত শেখাবার প্রতিষ্ঠান 'দক্ষিণী'তে নিয়মিত রবীন্দ্র সঙ্গীত চর্চা শুরু করেন। এক সময় কলিম শরাফী দক্ষিণীতে যোগ দিয়েছিলেন শিক্ষক হিসেবে। দক্ষিণীতে কলিম শরাফী সঙ্গীতগুরু দেবব্রত বিশ্বাস, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সুচিত্রা মিত্রের সাহচর্য পেয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে নীতিগত বিরোধের কারণে মহর্ষি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, অশোক মজুমদার, মোহাম্মদ ইসরাইল, কলিম শরাফী প্রমুখ আইপিটিএ থেকে বেরিয়ে এসে গঠন করেন নাট্যসংস্থা 'বহুরূপী'

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040