চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গতকাল (মঙ্গলবার) মালয়েশিয়া সফর করেন এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দীন আব্দুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই নেতা অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন। বৈঠকের পর দু'জন যৌথ এক সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। ওয়াং ই বলেন, নতুন মালয়েশিয়া সরকার প্রতিষ্ঠার পরপরই তাঁর এ সফর দু'দেশ ও আন্তর্জাতিক সমাজকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। তা হলো, চীন দু'দেশের সম্পর্ককে উচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং মালয়েশিয়াকে কূটনৈতিকভাবে, বিশেষ করে প্রতিবেশী কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রেখেছে। মালয়েশিয়ার প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি পালন করে দু'দেশের সহযোগিতা গভীর হবে এবং দু'দেশের জনগণের জন্য তা কল্যাণকর হবে।
ওয়াং ই বলেন, মালয়েশিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে মনে করে চীন। কারণ, চীন ও মালয়েশিয়া উন্নয়নশীল দেশ এবং স্বাধীন ও শান্তিমূলক পররাষ্ট্র নীতি মেনে চলে। দু'দেশ সবসময় শক্তির রাজনীতির বিরোধিতা করে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা, বিশেষ করে পূর্ব এশিয়ার একীকরণে সমর্থন দেয়। চীন ও মালয়েশিয়ার মধ্যে মতভেদের চেয়ে অভিন্ন স্বার্থ অনেক বেশি এবং দু'দেশের সম্পর্কে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অর্থ রয়েছে।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দীন বলেন, নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার পর তাঁর দেশ সফরে যাওয়া বিদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে অন্যতম ওয়াং ই। তিনি দু'দেশের সহযোগিতা ও বিনিময় জোরদারের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বৈঠকে চীন-মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দু'দেশের সম্পর্ক নতুন এক উচ্চতায় এগিয়ে নিতে একমত হন।
ওয়াং ই বলেন, একটি রাষ্ট্র ছোট বা বড় হোক-না-কেন, চীনের কাছে সবাই সমান এবং চীন কখনও অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না। চীন মালয়েশিয়ার জনগণের সিদ্ধান্তকে সম্মান করে এবং নিজস্ব অবস্থা অনুযায়ী উন্নয়নের পথ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়াকে সমর্থন দেয়। ওয়াং ই বলেন, আমরা খুব খুশি যে, প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের উন্নয়নের নতুন পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মালয়েশিয়ার ভালো বন্ধু হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার জনগণ নতুন সাফল্য অর্জন করবে এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ক্ষেত্রে আরও ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে ওয়াং ই জানান, তাঁর এ সফরের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো, প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের চীন সফরের জন্য আলোচনা ও প্রস্তুতি নেওয়া। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাহাথির চীনা জনগণের পুরাতন ও ভালো বন্ধু। তিনি চীনের পরিচিত এবং চীনকে গুরুত্ব দেন। অতীতে তাঁর সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত এ মৈত্রীকে গুরুত্ব দেয় চীন। তাঁর চীন সফরের মাধ্যমে চীনের নেতাদের সঙ্গে মৈত্রী আরো সুসংবদ্ধ হবে এবং চীন-মালয়েশিয়া সহযোগিতার নতুন পরিকল্পনা তৈরি হবে বলে জানান ওয়াং ই।
ওয়াং ই বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উত্থাপিত 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে সমর্থন ও অংশগ্রহণ করেছে মালয়েশিয়া। চীন তার প্রশংসা জানায়। চীন ও মালয়েশিয়া 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দীন বলেন, চীন মালয়েশিয়ার ভালো প্রতিবেশী ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। মালেয়েশিয়া চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের প্রতি আবারও সমর্থন ঘোষণা করে।
(শিশির/তৌহিদ)