চীনে পরিবহন খাতের উন্নয়নে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ভূমিকা
  2018-07-28 19:58:17  cri
চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি কার্যকর হওয়ার ৪০ বছরে দেশটির পরিবহন-শিল্পের বিরাট উন্নতি হয়েছে। পরিবহন খাতের কর্মীদের মধ্যে সাধারণ বাসচালক, রাজপথের টোল-সংগ্রাহক, ছাংচিয়াং নদীর জাহাজ-পরিচালক, সমুদ্রের উদ্ধারকারী, পেইতৌ জিপিএস-ব্যবস্থার ডিজাইনাররা সম্প্রতি এ-ব্যাপারে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতে আমি চীনা পরিবহন খাতের সঙ্গে জড়িতদের অনুভূতি নিয়ে আলাপ করব।

ইয়াও চে ইয়ান হলেন ছাংচিয়াং নদীতে একজন জাহাজ-নির্দেশক। তিনি ৩০ বছর ধরে এ-কাজ করছেন। তিনি উক্ত সময়কালে ৬০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ৭ হাজারেরও বেশি জাহাজকে ৭.২ লাখ কিলোমিটার পথে প্রয়োজনীয় দিক্‌-নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ছাংচিয়াং নদীর বন্দরগুলো বিদেশিদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে ৩৫ বছর হল। তিনি ছাংচিয়াং নদীতে পরিবহন খাতে ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সাক্ষী। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

"গত শতাব্দীর আশির দশকের প্রথম দিকে আমি নদীতে জাহাজ-নির্দেশনার কাজ শুরু করি। তখন আমাকে কয়েক দিন পর পর একটি জাহাজকে প্রয়োজনীয় দিক্‌-নির্দেশনা দিতে হতো। আআর এখন প্রতিদিন আমাকে এক থেকে দুটি জাহাজকে পথ-নির্দেশনা দিতে হয়। আগে নদীতে চলাচলকারী জাহাজগুলোর ওজন ছিল ১০ থেকে ২০ হাজার টন। আর এখন ১ থেকে ২ লাখ টনের জাহাজ নদীতে চলাচল করে। একবার আমি ও আমার দু'জন সহকর্মী যৌথভাবে বিশ্বের বৃহত্তর আকরিকবাহী জাহাজকে পথ-নির্দেশনা দিয়েছিলাম। সেটি ছিল চীনা ব্যবসা সংগ্রহ ব্যুরোর নির্মিত লাখ টনের জাহাজ। আগে এতো বড় জাহাজের কথা ভাবতেই পারতাম না। চীনের নদী পরিবহন শিল্পের উন্নয়নের এটি হচ্ছে একটি খণ্ড চিত্র।"

ইয়াও চে ইয়ান বলেন, ১৯৭৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চীনা বন্দরগুলোতে মাল বোঝাই ও খালাসের পরিমাণ ৩০ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ছাংচিয়াং নদীতে বন্দরে প্রবেশ ও বন্দরত্যাগী জাহাজের সংখ্যা বছরে এক হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজারে। ছাংচিয়াং নদী পরিণত হয়েছে বিশ্বের ব্যস্ততম ও বৃহত্তম নৌপথ।

আনহুই'র বেংবু'র বাসচালক ইয়াং মিয়াও মিয়াও-এর অভিজ্ঞতাও কম বিচিত্র নয়। তিনি জানালেন সড়ক পরিবহন খাতে নাটকীয় পরিবর্তনের কথা। তিনি বলেন,

"আমার মনে আছে, আমি যখন গাড়ি চালানো শুরু করি, অর্থাৎ গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকে আমাদের বেংবুতে মাত্র দশটি বাসলাইন ছিল। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৬৫টি। বাসের সংখ্যাও এখন ১৭০০টির বেশি। আগে বাসগুলো চলত পেট্রোল ও ডিজেলে। পরে প্রাকৃতিক গ্যাসচালিত গাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর বর্তমানে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুতচালিত গাড়ি রাস্তায় চলছে।"

ইয়াও চে ইয়ান ও ইয়াং মিয়াও মিয়াও'র দৃষ্টিতে চীনের পরিবর্তন হচ্ছে ৪০ বছরে চীনের পরিবহন শিল্পের সংস্কার ও উন্নয়নের সংক্ষিপ্তসার। ৪০ বছরে চীনের বহুমূখী পরিবহন অবকাঠামো নেটওয়ার্ক অব্যাহতভাবে উন্নত হয়েছে। ২০১৭ সালের শেষ দিক পর্যন্ত চীনে রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ১.২৭ লাখ কিলোমিটার; সড়কপথের মোট দৈর্ঘ্য ৪৭.৭ লাখ কিলোমিটার; অন্তর্দেশীয় জলপথ ১.২৭ লাখ কিলোমিটার। তা ছাড়া, বেসামরিক বিমানবন্দর ২২৯টি।

চীন সরকারের সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে চীন সার্বিকভাবে পরিবহন খাতে শক্তিশালী দেশে পরিণত হবে। সিনিয়র ডুবুরি ও সামুদ্রিক উদ্ধার-বিশেষজ্ঞ চং সং মিন মনে করেন, পরিবহন খাতে শক্তিশালী দেশ এ-খাতের প্রতিটি কর্মীর প্রত্যাশা। চং সং মিন বলেন, "আমাদের উচিত আন্তর্জাতিক মানের উদ্ধার-ব্যবস্থা গড়ে তোলা। সমুদ্রে দুর্ঘটনাপরবর্তী উদ্ধারকাজে আমাদের সামর্থ্য উন্নত করতে হবে। আমাদের উচিত নিজেদের প্রযুক্তির মান উন্নত করা এবং উদ্ধার ও উদ্ধারকাজ পরিচালনার সামর্থ্য উন্নত করা।"

পেইতৌ উপগ্রহ জিপিএস-ব্যবস্থার জেনারেল ডিজাইনার ওয়াং শু ফাং মনে করে, পরিবহন খাতে দেশকে শক্তিশালী করতে হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সহায়তা দরকার। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "সেবা এবং নবায়ন ও উদ্ভাবন হল আমাদের উন্নয়নের কেন্দ্রীয় ধারণা। আমরা চীনের পরিবহন-শিল্প খাতে সেবার সামর্থ্য ও পরিচালনার মান উন্নয়নে আরও অবদান রাখব।"

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040