প্রসঙ্গ: জোহানেসবার্গে ব্রিক্সের দশম শীর্ষসম্মেলন
  2018-07-27 15:51:52  cri

ব্রিক্সের দশম শীর্ষসম্মেলন ২৫ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর শিল্প ও বাণিজ্য ফোরামে বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি গভীর সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করে দিলে বিভিন্ন দেশ উপকৃত হবে, সমৃদ্ধ হবে, ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্র অর্জিত হবে।

ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোকে সহযোগিতা ও পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে উন্মুক্ত অর্থনীতির জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে আহবান জানান। তিনি বলেন, উন্মুক্তকরণ ও সহযোগিতা হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং উত্পাদন-ক্ষমতা উন্নয়নের অপরিহার্য পূর্বশর্ত। বাণিজ্য-যুদ্ধে কোনো পক্ষ জয়ী হবে না। অর্থনৈতিক আধিপত্যবাদ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিন্ন স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলো দৃঢ়ভাবে উন্মুক্ত অর্থনীতির জন্য কাজ করে যাবে; একতরফাবাদ বা বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা অব্যাহত রাখবে; বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহজ করার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে; এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে উন্মুক্ত, সহনশীল, ভারসাম্যপূর্ণ ও সকলের জন্য কল্যাণকর করার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট মাথামেলা সিরিল রামহোসা তার ভাষণে বলেন, একতরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদ বিশ্বের উন্নয়নের ওপর নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে এবং রাখবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলো বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থার উদ্যোক্তা ও রক্ষক। তিনি বলেন "বর্তমানে বহুপক্ষীয় বাণিজ্য-ব্যবস্থা অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীণ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন একতরফা নীতি গ্রহণের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। আমাদের দুশ্চিন্তা হচ্ছে, এ-ধরনের নীতি বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই টেকসই উন্নয়ন ও সহনশীলতা প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমাদের আলোচনা করা উচিত। বহুপক্ষীয় বাণিজ্য-ব্যবস্থার সচ্ছতা, সহনশীলতা ও উপযুক্ততা জোরদার করায় ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।"

পরিসংখ্যান অনুসারে, গেল ১০ বছরে ব্রিক্সভুক্ত ৫টি দেশের অর্থনীতির মোট পরিমাণ ১৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং বাণিজ্যের পরিমাণ ৯৪ শতাংশ বাড়ে। বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর অবদান ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩ শতাংশে উন্নীত হয় এবং বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে এর অবদান ৫০ শতাংশ।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক ছাং সাও কাং বলেন, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য-ব্যবস্থার কারণে ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতি ও বাণিজ্যের দ্রুত উন্নয়ন হয় এবং এ-ব্যবস্থাকে রক্ষা করবে সংস্থাটি। তিনি বলেন,"আমরা ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোকে বহুপক্ষীয় বাণিজ্য-ব্যবস্থার সুবিধাভোগী হিসেবে বিবেচনা করি। এ-প্রেক্ষাপটে, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য-ব্যবস্থা ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব এবং একতরফাবাদ ও বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা করা আমাদের কর্তব্য।"

ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর শিল্প ও বাণিজ্য পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল সুরভে বলেন, মুক্ত বাণিজ্য ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলো, এমনকি সারা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর উচিত যৌথভাবে বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদ মোকাবিলা করা। তিনি বলেন, "আমরা দৃঢ়ভাবে মুক্ত বাণিজ্য-ব্যবস্থাকে রক্ষা করব। মুক্ত বাণিজ্য অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। এখন অনেক উন্নত দেশ সম্পদ সংগ্রহ শেষ করে বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি শুরু করেছে। ২০ বছর আগে, এ-দেশগুলোই আফ্রিকায় মুক্ত বাণিজ্য ও বিশ্বায়নের জন্য কাজ করেছে। এখন তারা নিজেদের দরজা ব্রিক্সভুক্ত ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বন্ধ করে দিতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করে নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলো বাধা নয়, সহযোগিতা চায়।"

আফ্রিকায় চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ও পুঁজি-গ্রহীতা দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকার বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী রব ডেভিস বলেন, "আমরা চীনের বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই। চীনের বিনিয়োগ দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে চীন থেকে উন্নত প্রযুক্তিও আসছে।" (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040