এদিন সকালে কিগালির প্রেসিডেন্টভবনের সামনের মহাচত্বরে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের জন্য জাঁকজমকপূর্ণ সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পরে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের শুরুতে সি চিন পিং বলেন, "মহামান্য প্রেসিডেন্ট, এই সুন্দর কিগালিতে আপনার সঙ্গে দেখা করতে পেরে আমি ভীষণ আনন্দিত। গত বছরের মার্চ মাসে আপনার বেইজিং সফর সফল ছিল। আপনিও আমাকে রুয়ান্ডায় সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমি তখন বলেছিলাম, আবার আফ্রিকা সফরে গেলে আমি নিশ্চয় রুয়ান্ডা সফর করব। আমি আমার কথা রেখেছি।"
প্রেসিডেন্ট সি আরও বলেন, গত মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট পল ক্যাগামের সঙ্গে দু'দেশের সম্পর্ক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার প্রশ্নে তাঁর ব্যাপক মতৈক্য হয়। রুয়ান্ডার সঙ্গে দু'দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্কের নতুন অধ্যায় উন্মোচন করতে চীন ইচ্ছুক বলেও জানান প্রেসিডেন্ট সি।
প্রেসিডেন্ট পল ক্যাগামে বলেন, চীন আফ্রিকার নির্ভরযোগ্য বন্ধু। চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন করা রুয়ান্ডার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীনের সঙ্গে দেশ-ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে ইচ্ছুক তাঁর দেশ। এতে দু'দেশের মধ্যে পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতা ঘনিষ্ঠতর হবে। রুয়ান্ডা ও গোটা আফ্রিকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ বয়ে এনেছে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ। এই কাঠামোতে অংশ নিতে রুয়ান্ডা গভীরভাবে আগ্রহী। চীন ও আফ্রিকার সহযোগিতামূলক ফোরামের বেইজিং শীর্ষসম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্যও তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। ক্যাগালে বলেন,
"চীনের সঙ্গে রুয়ান্ডার এই মূল্যবান অংশীদারিত্বের সম্পর্কের ভূয়সী প্রশংসা করি এবং আফ্রিকার সামাজিক উন্নয়নে যে বিরাট অবদান রেখেছে চীন, সেজন্য দেশটিকে ধন্যবাদ জানাই। আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় চীন ও আফ্রিকার সহযোগিতামূলক ফোরামের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি হবে বলে আমি আশা করি। এতে দু'দেশের জনগণের জন্য আরও বেশি কল্যাণ সৃষ্টি হবে।"
বৈঠকের পর, দু'জন শীর্ষনেতা এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এসময় প্রেসিডেন্ট সি বলেন, প্রেসিডেন্ট পলের সঙ্গে বৈঠকে চীন ও রুয়ান্ডার সম্পর্ক, চীন ও আফ্রিকার সহযোগিতামূলক ফোরামের আসন্ন বেইজিং শীর্ষসম্মেলন এবং অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে তাঁর। এসব আলোচনায় ব্যাপক মতৈক্যও অর্জিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন
"চীন ও রুয়ান্ডার বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদারের গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দু'পক্ষের উচিত কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে দেখা। রুয়ান্ডাকে নিজের উন্নয়ন-পথে এগিয়ে যেতে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে চীন। দু'পক্ষ পরস্পরের মূল স্বার্থ ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যায় পরস্পরকে সমর্থন দিয়ে যাবে। পুঁজি, বাণিজ্য ও অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তব সহযোগিতা জোরদার করতে দু'পক্ষ একমত হয়েছে। 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়নে রুয়ান্ডার সক্রিয় অংশগ্রহণকেও স্বাগত জানায় চীন।"
প্রেসিডেন্ট সি আরও বলেন, গত কয়েক দশকে চীন ও আফ্রিকা আন্তরিকভাবে পরস্পরকে সহযোগিতা করে এসেছে; অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তুলতে যথাসাথ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আফ্রিকার দেশসমূহের উন্নয়ন চীনের পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীন শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ আফ্রিকা দেখতে চায়। আফ্রিকার শান্তি ও উন্নয়নে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনে আফ্রিকান ইউনিয়নকেও সমর্থন করে চীন। (ওয়াং হাইমান/আলিম)