গত মার্চ মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র তার ১৯৬২ সালের 'বাণিজ্য সম্প্রসারিত আইনের' ২৩২ ধারা অনুযায়ী, আমদানিকৃত ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। এ থেকে বাণিজ্য-লড়াই শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে নিজের দোষ অন্যদের ওপর চাপানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। একদিকে দেশটি সমস্যা সমাধানের সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব চীন ও ইইউসহ প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর চাপিয়ে দেয় এবং নিজেকেই 'ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ' হিসেবে তুলে ধরে। অন্যদিকে, 'ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ' হিসেবে নিজেই আরও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। যেমন, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার পর, যুক্তরাষ্ট্রে ইইউ'র রফতানিপণ্য গাড়ির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার হুমকি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে চীনা রফতানি পণ্যের ওপর শুল্কের আওতা ৫০ বিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনাও নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
প্রশ্ন হচ্ছে: এ-অবস্থায় বৈশ্বিক বাণিজ্য লড়াইয়ের বল কার কোর্টে রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে ব্রিটেনের 'দি ইকনোমিস্ট' পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রবন্ধে বলা হয়: মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনে করেন, বাণিজ্য-লড়াইয়ে সহজেই জয়ী হওয়া যাবে। তাই তিনি এ-লড়াই শুরু করেছেন।
হ্যাঁ, কথাটি ঠিক। গত ২২ জানুয়ারি ট্রাম্প প্রশাসন ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আমদানিকৃত সৌর প্যানেল এবং ওয়াশিং মেশিনের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। এর সঙ্গে জড়িত হয় ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য।
পয়লা মার্চ ট্রাম্প প্রশাসন ২৩ মার্চ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। এর আওতায় পরে ৪৭৮০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য।
২২ মার্চ ট্রাম্প প্রশাসন ৫০০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্প আরোপ করে। এর মধ্যে ৩৪০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য শুল্কের আওতায় আসে ৬ জুলাই থেকে।
এর প্রেক্ষাপটে চীন, ইইউ, কানাডা, মেক্সিকো, ভারত ও তুরস্কসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো পাল্টা-ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সেই সঙ্গে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মাধ্যমে সমস্যাটি সমাধানের আশা-আকাঙ্ক্ষাও প্রকাশ করেছে বিভিন্ন পক্ষ। এই ব্যাপারে ফরাসি অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমে শুল্ক আরোপনীতি বাতিল করতে হবে। এভাবেই ইউরোপ সংশ্লিষ্ট আলোচনায় অংশ নিতে পারে। এ থেকে স্পষ্ট যে, বাণিজ্য-লড়াইয়ের বলটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কোর্টে রয়েছে।
আসলে এই বল শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কোর্টেই ছিল। কিন্তু মার্কিন প্রশাসন নিজের দোষ অন্যদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করে যায়। এর মূল কারণ হচ্ছে, এই বাণিজ্য লড়াই বন্ধ করতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র।
এবারের জি-২০ গোষ্ঠীর অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মহাপরিচালক বলেন, এই বাণিজ্য-লড়াইয়ের ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা আছে। তিনি এ-ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। আইএমএফ অনুমান করছে যে, বাণিজ্য-লড়াইয়ের ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ০.৫ শতাংশ কমবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম)