ফিনল্যান্ড সময় সোমবার হেলসিংকিতে বৈঠক করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রুশ প্রেসিডেন্ট। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে পুতিনের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। আলোচনা গঠনমূলক হয়েছে এবং তা বেশ ভালোভাবেই এগিয়েছে। বিশ্বকাপ ফুটবল আসরের আয়োজনের জন্য তিনি এ সময় পুতিনকে অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে এবারের বিশ্বকাপ আসরটি আগের যেকোনো আসরের চেয়ে সেরা বলেও অভিহিত করেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, সংঘাত ও বৈরিতা নয়, কূটনীতি আর অংশগ্রহণ চান তিনি। পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগসহ নানা বিষয় নিয়ে তাঁদের কথা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প নিজের দেশেরই বিচার বিভাগ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা শিবিরের কোনো আঁতাতই হয়নি। বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার যে তদন্ত করছেন, তা হাস্যকর। এই তদন্ত রুশ-মার্কিন সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ইসরায়েলের নিরাপত্তা ইস্যুতে পুতিন একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা সিনেটর জন ম্যাককেইন রোগশয্যা থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের বক্তব্যকে কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্টের জন্য ইতিহাসে সবচেয়ে 'জঘন্য' বলে মন্তব্য করেন। এর আগে আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট একজন একনায়কের সামনে এমন নতজানু ব্যবহার করেনি।
এমনকি ট্রাম্পের প্রতি নমনীয় বলে পরিচিত স্পিকার পল রায়ান ও সাবেক স্পিকার ন্যুট গ্রিনগ্রিচও ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। খ্যাতনামা ভাষ্যকার টমাস ফ্রিডম্যান সন্দেহ প্রকাশ করেন, ট্রাম্প সম্ভবত একজন 'রুশ স্পাই', এ ছাড়া তাঁর ব্যবহারের অন্য কোনো ব্যাখ্যা সম্ভব নয়। নিজের গোয়েন্দা দপ্তরের সিদ্ধান্তের বিপরীতে ট্রাম্পের অবস্থান এতটা উদ্বেগজনক ছিল যে জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ড্যান কোটস সংবাদ সম্মেলনের অব্যবহিত পরে হোয়াইট হাউসের সম্মতি ছাড়াই এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্টের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেন, মার্কিন গোয়েন্দা দপ্তরগুলো এই বিষয়ে একমত যে রাশিয়া ২০১৬ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে। রাশিয়া এখনো সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বৈঠকটিকে রাশিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাশিয়ান মিডিয়া তাদের বিজয় হিসেবে দেখছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারগেই লাভরভ বলেন, বৈঠক অনেক ভালো হয়েছে, এটি পুতিনের বিজয়। রাশিয়ার উচ্চ পার্লামেন্টের ফেডারেশন কাউন্সিলের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ভিক্তর বন্দারেভ বলেন, আমেরিকা একটি ইউনিপোলার দেশ গড়তে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু আমেরিকা না পুরো বিশ্ব বুঝতে পেরেছে রাশিয়া ছাড়া কোন কিছু সম্ভব না।
এ ছাড়া এ বৈঠক নিয়ে সেদেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এমনকি সমালোচকদেরও ভূয়সী প্রশংসা কুরাচ্ছেন পুতিন। অন্যদিকে ট্রাম্প ইতিমধ্যে একজন বিশ্বাসঘাতকের খেতাব পেয়েছেন তার দেশ থেকে।
এবার নজর দেই রুশ-মার্কিন সর্ম্পকের বৈরিতার কারণের দিকে। এজন্য ফিরে যেতে হবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তত্কালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন কখনো যুদ্ধে জড়ায়নি। তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পরেও তাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়ে যায়।
বর্তমান রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবার রাশিয়াকে হারানো ক্ষমতা ও মর্যাদায় ফিরিয়ে নিতে চান। এমন প্রেক্ষাপটে কখনও কখনও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে দেশটি। মধ্যপ্রাচ্যের চলমান পরিস্থিতি অর্থাৎ সিরিয়া ইস্যুতে মার্কিন জোট বিরোধী রাশিয়ার অবস্থান উল্লেখযোগ্য।
২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার পর সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে। তখন যুক্তরাষ্ট্র এবং আরো কয়েকটি দেশ রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।