পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অধিকারী হওয়ার পথে বাংলাদেশ
  2018-07-15 19:13:00  cri

পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ বরিসভকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় পরমাণু চুল্লির ক্রংক্রিটের ঢালাই কাজের উদ্বোধন করেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে অবয়ব পেতে চলেছে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

প্রায় ১ হাজার ৩০০ একর জায়াগার ওপর নির্মিয়মাণ রূপপুর পারমাণিবক বিদ্যুৎ প্রকল্পে অন্তত ৪০টি অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে একসঙ্গে। ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় গত বছর নভেম্বরে। গত ছয় মাসে সেটি ধীরে ধীরে পরমাণু চুল্লির আকার ধারণ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার একই ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় চুল্লির নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টাকার অংকে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হচ্ছে ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে ১ হাজার ১২৩ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া।

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর জানান, পরিকল্পনা মাফিক কাজ এগুলে ২০২২ সাল নাগাদ প্রথম ইউনিটটি উৎপাদনে আসবে। শনিবার উদ্বোধন করা দ্বিতীয় ইউনিটটিতে উৎপাদন শুরু হতে লেগে যাবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। এর ফলে ২০২৪ সালে এ কেন্দ্র থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে।

প্রকল্পের কাজ ঠিকঠাক চলছে জানিয়ে পরিচালক জানিয়েছেন পরমাণু চুল্লির সবচেয়ে স্পর্শকাতর অংশগুলো নির্মিত হচ্ছে রাশিয়ায়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এগুলো উড়িয়ে এনে রূপপুরে স্থাপন করা হবে।

দেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সরকার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, শুরু থেকেই নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি ঘুরে ফিরে এসেছে সংশ্লিষ্টদে বক্তব্যে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করে আবারো নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি নাকচ করে দেন। বলেন, ঝুঁকি মোকাবেলায় নিরাপত্তার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত এ প্রকল্পটি যাতে পরবর্তীতে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ ও কর্মীরা পরিচালনা করতে পারে সে জন্য তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে রাশিয়ায়।

এদিকে বাংলাদেশে তিন দিনের সফর করে গেলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। শুক্রবার তিনি বাংলাদেশ সফরে আসেন। সফরকালে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন, সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। এছাড়াও ঢাকায় এবং রাজশাহীতে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেন তিনি।

শনিবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন রাজনাথ সিং। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের কথা তুলে ধরে বলেন, প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে যো কোনো সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স নীতির কথাও জানান শেখ হাসিনা।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অভাবিত অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন বাংলাদেশের ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সম্ভবতো বিশ্বে সর্বোচ্চ।

পরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যমুনা ফিউচার পার্কে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে ভারতের সমন্বিত ভিসা আবেদন কেন্দ্র উদ্বোধন করেন রাজনাথ সিং। রাজনাথ সিং রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমীতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ভবন ও আইটি সেন্টারও উদ্বোধন করেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক বর্তমানে স্বর্ণযুগে রয়েছে।

সফরের শেষ দিন রোববার রাজনাথ সিং সচিবালয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানা খান কামালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে সন্ত্রাস দমন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক চোরাচালান, ভিসা সহজীকরণের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পেতে দিল্লি ঢাকার পাশে থাকবে বলে জানান ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনেও সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি। দেশের প্রবীণ নাগরিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের ৫ বছর মেয়াদি ভিসা দেয়ার বিষয়ে একটি সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষরিত হয় বৈঠকে।

বৈঠক শেষে রাজনাথ সিং জানান বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তে এখন কোনো সমস্যা নেই। আর কোনো সমস্যা দেখা দিলে উভয় দেশ সমন্বিতভাবে তার সমাধান করবে।

ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক আরো জোরদার করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040