যুক্তরাষ্ট্রের 'প্রযুক্তিগত কর্তৃত্ববাদ'-এর বৈশিষ্ট্যগুলোকে বিশেষজ্ঞরা কয়েক ভাগে বিভক্ত করেছেন:
এক. যুক্তরাষ্ট্র নিজের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ-প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠানগুলো এ-চেষ্টার অংশ হিসেবে উচ্চ পেটেন্ট ফি আদায় করে; যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের জন্য উচ্চমূল্য আদায় করে। এমনকি, নিজের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর না-হক চাপ সৃষ্টি করে। এ-প্রচেষ্টার উদাহরণ চীনের জিটিএ কোম্পানির ওপর সাম্প্রতিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে এই কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিপ আমদানি করতে পারছে না।
দুই. দেশের নিরাপত্তার নামে যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক বাণিজ্যের শৃঙ্খলা নষ্ট করছে। বিদেশি কোনো কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপ্রযুক্তির কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারছে না। উচ্চপ্রযুক্তি রফতানির ওপরও আছে বিধিনিষেধ। তা ছাড়া, চীনের অগ্রসর প্রযুক্তিও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
তিন. শুল্ক আরোপের মাধ্যমে অন্য দেশের অগ্রসর প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে অন্য দেশের উচ্চপ্রযুক্তির উন্নয়ন হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। যু্ক্তরাষ্ট্রে চীনের অগ্রসর প্রযুক্তি রফতানি করতে গেলে উচ্চ শুল্ক দিতে হয়। অথচ এর ফলে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের 'প্রযুক্তিগত কর্তৃত্ববাদ'-এর অনেক নেতিবাচক ফল আছে। এর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে:
এক. যুক্তরাষ্ট্রের 'প্রযুক্তিগত কর্তৃত্ববাদ'-এর ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও প্রযুক্তির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
দুই. এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র নিজে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রও সমস্যায় পড়ছে।
তিন. এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত নিজেকে একঘরে করে ফেলছে। যে-কোনো দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য চাই প্রযুক্তির উন্নয়ন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে প্রযুক্তি খাতে উন্নত হতে পারে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র তার অগ্রসর প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে অন্য দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করছে। এতে, দেশটি আন্তর্জাতিক সমাজে একঘরে হয়ে যাচ্ছে।
চার. এটা প্রমাণিত যে, উন্মু্ক্ত বৈশ্বিক পরিবেশে প্রযুক্তির উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। এই পরিবেশ সৃষ্টিতে বাধা দিলে যে-কোনো দেশের নিজের প্রযুক্তি খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য।
কোনো সন্দেহ নেই যে, 'অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন' একটি অপরিহার্য প্রবণতা। এই বাস্তবতায়, একতরফা কর্তৃত্ববাদ যে-কোনো দেশ ও বিশ্বের জন্য ক্ষতিকর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে উন্মুক্ত সহযোগিতাই হতে পারে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি। এ-অবস্থায়, যে-কোনো ধরনের 'প্রযুক্তিগত কর্তৃত্ববাদ' বেশিদিন চলতে পারবে না, বরং ব্যর্থতায় পর্যবশিত হবে। (আকাশ/আলিম)