চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সংঘাত: মার্কিন রিপোর্টে মিথ্যাচার!
  2018-07-13 15:17:43  cri
জুলাই ১৩: অনেকেই হয়তো খেয়াল করেছেন যে, বাণিজ্যযুদ্ধকে বৈধতা দিতে যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৩০১ ধারায় চালানো জরিপের ফলাফলকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছে। ১০ জুলাই ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টিটিভ বা ইউএসটিআর প্রকাশিত '৩০১ ধারার জরিপ রিপোর্ট-সংক্রান্ত বিবৃতিতে' আবারও চীনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়। এতে বলা হয়, চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক বিনিময়ে অন্যায় আচরণ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছে। ইচ্ছা করে বেছে নেওয়া বিবৃতির এসব তথ্য-উপাত্ত বাইরে থেকে অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর দেখায়। বাস্তবতা হলো, মিথ্যা কথা হাজারবার বললেও তা কখনও সত্য হয় না।

১২ জুলাই চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে 'চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা', 'মেধাস্বত্ব চুরি করা', 'বলপ্রয়োগ করে প্রযুক্তি হস্তান্তরে বাধ্য করা' এবং 'মেইড ইন চায়না-২০২৫'সহ ৩০১ ধারার জরিপ রিপোর্টের অভিযোগগুলো এক একটি করে খণ্ডন করা হয়েছে। মার্কিন রিপোর্ট বাস্তবতা অস্বীকার করেছে এবং এসব তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্র সংখ্যার খেলা খেলতে পছন্দ করে; আর চীনের কাছেও অনেক তথ্য-উপাত্ত আছে। শ্রোতাবন্ধুরা, বিস্তারিত শুনবেন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

প্রথমে বাণিজ্যঘাটতির দিকে নজর দেওয়া যাক। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাণিজ্যঘাটতি সৃষ্টির প্রধান কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের গার্হস্থ্য সঞ্চয় হার অনেক কম এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রধান রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলারের অবস্থান জোরদার করা। তা ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধের চিন্তাধারা এবং উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কৃত্রিম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো বাণিজ্যঘাটতি সৃষ্টির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির কারণ, এর অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ভারসাম্যহীনতা এবং বহুপক্ষীয় বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিফেন রৌচ সতর্ক করে বলেন, মার্কিন সরকার সঞ্চয়ের ঘাটতি সমস্যার সমাধান না করে চীনকে বলির পাঁঠা হিসেবে মনে করলে, যুক্তরাষ্ট্র বেশি উত্পাদন খরচসম্পন্ন অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করতে বাধ্য হবে। ফলে, মার্কিন ভোক্তাদের খরচের বোঝা আরো বাড়বে।

এবার আমরা মার্কিন ডলারের মর্যাদার দিকে নজর দেবো। বর্তমান বিশ্বের ৬৫ শতাংশেরও বেশি ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ হলো মার্কিন ডলার। এতে যুক্তরাষ্ট্রকে আর্থিক একনায়কতান্ত্রিক অধিকার দেওয়া হয়েছে। অসংযতভাবে মার্কিন ডলার ছাপানো এবং ডলার বন্ড বিনিময়ের মাধ্যমে অন্যান্য দেশের পণ্য ও জ্বালানি সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। অন্যভাবে বলা যায়, তুলনামূলক ব্যাপক বাণিজ্যঘাটতি বজায় রাখতে পারলে, যুক্তরাষ্ট্র ডলারের আন্তর্জাতিক মর্যাদা বজায় রাখতে পারবে।

চীনে উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি পরিসংখ্যানের প্রায় ৪০ শতাংশ। এ-ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবন্ধকতা তুলে নিলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি সমস্যা রাতারাতি প্রশমিত হয়। তবে স্নায়ুযুদ্ধের চিন্তাধারা লালনকারী যুক্তরাষ্ট্রের এটা করার সাহস কোথায়?

'মেধাস্বত্ব চুরি করার' তথাকথিত মার্কিন এই সমস্যার কোনো ভিত্তিই নেই। বর্তমানে চীনের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ কপিরাইট, ট্রেডমার্ক, পেটেন্ট ও বাণিজ্যিক তথ্য গোপনের আইনিব্যবস্থা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকর হয়েছে। আইন, নিয়ম, আঞ্চলিক নিয়ম ও বিচারিক ব্যাখ্যাসহ বহু পর্যায়ের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হয়েছে।

'বলপ্রয়োগ করে প্রযুক্তির হস্তান্তরে বাধ্য করার' সমস্যা আসলেই বানোয়াট খবর। বিগত ৪০ বছরে চীন এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেনি। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রযুক্তিগত হাতবদলের ক্ষেত্রে সমমানের বিনিময় ও চুক্তির স্বেচ্ছাসেবী নীতির ভিত্তিতে চালানো হয়, 'বলপ্রয়োগ' শব্দটা কোথায় পেয়েছে দেশটি?

সর্বশেষে 'মেইড ইন চায়না -২০২৫'সহ বিভিন্ন শিল্পনীতির অভিযোগের দিকে নজর দেওয়া যাক। বিজ্ঞ ব্যক্তিরা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের ৩০১ ধারার জরিপ রিপোর্টের উদ্দেশ্য হলো, চীনের উচ্চ প্রযুক্তির নির্মাণ শিল্পকে দমন করা এবং চীনের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করা। চীনের নির্মাণ শিল্প উন্নয়নে বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাগত জানায় চীন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এতে অংশ নিয়েছে।

আরেকটি মজার বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ৩০১ ধারার জরিপ রিপোর্টে তার নিজের সরকারি বিভাগ ও মার্কিন কোম্পানির একতরফাভাবে উল্লেখ করা তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। তাই এই রিপোর্টটি নিঃসন্দেহে বিশ্বাসযোগ্য নয়।

(লিলি/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040