স্থানীয় সময় ১০ জুলাই রাতে ইউনাইটেড স্টেইটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টিটিভ বা ইউএসটিআর আরো ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক প্রয়োগের কথা ঘোষণা করে। তাদের অজুহাত হলো, চীন পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং বাণিজ্যিক আচরণে কোনো পরিবর্তন করেনি। এ প্রসঙ্গে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, যুক্তরাষ্ট্র দ্রুতগতিতে শুল্ক আরোপের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের কেন্দ্রীয় স্বার্থ ও জনগণের মৌলিক স্বার্থ রক্ষায় চীন সরকার বরাবরের মতো পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানায় চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
৫০ বিলিয়ন থেকে ২০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত এসব তালিকা কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকৃত অর্ধেকেরও বেশি চীনা পণ্য বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ চীনের রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানিকৃত পণ্যের মোট পরিমাণ প্রায় ৪২৯.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তালিকায় উল্লেখিত পণ্য কিনতে হলে মার্কিন ভোক্তাদের আগের চেয়ে কমপক্ষে ১০ শতাংশ বাড়তি খরচ দিতে হবে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে 'অযৌক্তিক আচরণ' বলে আখ্যায়িত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই আচরণ চীন, বিশ্ব এবং নিজেদেরও ক্ষতি করছে বলে উল্লেখ করেছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই আচরণ 'যুক্তরাষ্ট্রকে আবার মহান করে তোলা'র স্বপ্ন বাস্তবায়নের বিপরীত পদক্ষেপ।
তাহলে নতুন করে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের এই তালিকা প্রকাশের আসল উদ্দেশ্য কি? তাদের উদ্দেশ্য হলো, চরম চাপ দিয়ে বিকল্প পথ খোলা না রাখা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনকে আপোষ করতে বাধ্য করা। প্রকৃতপক্ষে এই তালিকা কার্যকর হওয়ার আগে জনগণের মতামত শুনতে হবে। এই কাজে প্রায় দু'মাস সময় লাগবে। এই প্রক্রিয়ায় অনেক অস্পষ্টতাও থাকতে পারে।
এই নতুন তালিকা কার্যকর হোক বা না-হোক, জাতীয় কেন্দ্রীয় স্বার্থ ও জনগণের মৌলিক স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত ইস্যুতে কোনো সার্বভৌম দেশ কখনও আপোষ করবে না। তাই চীন নিঃসন্দেহে সার্বিকভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে লড়াই করবে। তবে আরেকটি মজার বিষয় হলো হোয়াইট হাউসের 'বাণিজ্যিক সন্ত্রাসবাদের' কু-ফলাফল দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো বেশি মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও জনগণ 'সন্ত্রাসদমন' ফ্রন্টে যোগ দিয়েছে।
১০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বৈদ্যুতিক গাড়ি ও জ্বালানি কোম্পানি টেসলা শাংহাইয়ের সঙ্গে বৈদ্যুতিক গাড়ি খাতে পুঁজি বিনিয়োগ প্রকল্পে চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বিদেশি কারখানা চীনে স্থাপন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতি বছর ৫ লাখ গাড়ি উত্পাদন করা হবে। ১১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের মেয়রের নেতৃত্বে একটি বড় ধরনের আর্থ-বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল বেইজিংয়ে চীনের সঙ্গে '২০১৮-২০২৩ সালে পাঁচ বছরব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের সহযোগিতা পরিকল্পনা' স্বাক্ষর করে। এ চুক্তি অনুযায়ী দু'পক্ষ চিকিত্সা ও স্বাস্থ্য, শিল্প, উন্নত নির্মাণশিল্প, সৃজনশীল প্রযুক্তি, আর্থিক সেবা, কৃষি ও খাদ্য এবং অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেয়। এটি হলো চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রথম ৫ বছরব্যাপী পরিকল্পনা।
একদিকে হোয়াইট হাউস চীনের পণ্যের ওপর প্রতিরক্ষামূলক বাধা সৃষ্টি করছে, এতে মার্কিন ভোক্তারা বেশি খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন; অন্যদিকে মার্কিন বিখ্যাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চীনের সঙ্গে স্থায়ী সহযোগিতার পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
(লিলি/তৌহিদ )