বাণিজ্যযুদ্ধে ক্ষতি মোকাবিলার চীনা পদ্ধতি
  2018-07-10 14:50:23  cri
জুলাই ১০: বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ জয়ী হবে না। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র মানবজাতির অর্থনৈতিক ইতিহাসে বৃহত্তম বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করার ফলে উভয় পক্ষই অনিবার্যভাবে বিশাল মূল্য দেবে এবং ক্ষয়ক্ষতি বহন করবে। এ প্রসঙ্গে চীন ক্ষতি মোকাবিলার পরিকল্পনা নিয়েছে।

গতকাল (সোমবার) রাতে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সংঘর্ষের কারণে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাব প্রশমনের চারটি ব্যবস্থা ঘোষণা করে। এগুলো হলো, নানা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পর্যালোচনা করা, পাল্টা ব্যবস্থায় মাধ্যমে অর্জিত শুল্কের আয় দিয়ে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতিপূরণ করা, আমদানি কাঠামো সুবিন্যস্ত করতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে উত্সাহ দেওয়া, কার্যকরভাবে বৈদেশিক পুঁজি ব্যবহার করা এবং অর্থনীতির উচ্চ মানের উন্নয়ন বেগবানসংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় পরিষদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বৈধ স্বার্থ সংরক্ষণ জোরদার করা এবং পুঁজি বিনিয়োগের আরো ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করা।

দেখা যায়, বাণিজ্যযুদ্ধের ক্ষতি কমানোর জন্য চীন সরকার ধারাবাহিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এতে চীন সরকারের শক্তিশালী ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ ও বাণিজ্যযুদ্ধে লড়াই করার দক্ষতা এবং জনগণ কেন্দ্রিক চীনা প্রশাসনের চিন্তাধারা প্রমাণিত হয়।

কোনো কোনো বিশ্লেষক বলেন, এবার যুক্তরাষ্ট্র ৩৪০০ কোটি মূল্যের চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রয়োগ কার্যকর করেছে। এটি চীনের সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আঘাত হানবে এবং এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মী ও সাধারণ চীনাদের পারিবারিক জীবনে কিছু প্রভাব পড়বে।

এসব বিষয় চীন সরকার অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে। তাই আগে থেকে চীন সরকারের অবস্থান হলো, এই বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানো। তবে এখন চীন সরকারকে বাণিজ্যযুদ্ধে নামতে বাধ্য করা হয়েছে। আসলে অনেকেই বুঝতে পেরেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ করার আসল উদ্দেশ্য তথাকথিত বাণিজ্যিক ভারসাম্য অর্জন করা নয়, বরং চীনের উচ্চ প্রযুক্তির উদ্ভাবন ক্ষমতা দমন করা এবং চীনের উন্নয়নকে ঠেকিয়ে দেওয়া।

তাই যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্ট এই বাণিজ্যযুদ্ধে লড়াই করা চীনের জন্য জাতীয় কেন্দ্রীয় স্বার্থ, জাতীয় স্বার্থ ও জনস্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত বড় ব্যাপার।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ মাত্র শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে অনেক পরিবর্তন ঘটতে পারে। চীনের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাবও পরিবর্তন হচ্ছে। তাই চীনের মোকাবিলার পরিকল্পনাও সময়মতো পরিবর্তন করা উচিত্। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসব ব্যবস্থা অব্যাহতভাবে পূর্ণাঙ্গ করে তুলবে এবং সমাজের বিভিন্ন মহলের মতামতকে স্বাগত জানায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই বাণিজ্যযুদ্ধে লড়াই করলে তার ক্ষতি মোকাবিলার ক্ষমতা চীনের আছে কি?

হ্যাঁ, আছে।

চীন প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের একটি বড় দেশ। তা ছাড়া, বিশ্বে চীন সব শিল্পকৌশল বিভাগের অধিকারী একমাত্র দেশ। তার মানে, সবচেয়ে খারাপ সময়ের সম্মুখীন হলে চীনের অর্থনীতিতে 'ইনার লুপ' বাস্তবায়ন সম্ভব। অন্যদিকে চীনের অর্থনীতির ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অভ্যন্তরীণ চাহিদা থেকে এসেছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার মধ্যে ৬০ শতাংশ ভোক্তার ওপর নির্ভর করে এবং এই ভোক্তা চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সংখ্যার দিক থেকে চীনের সৃজনশীল শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। সৃজনশীল উন্নয়নের ফলে চীনের অর্থনীতি আরো শক্তিশালী ও বলিষ্ঠ হয়েছে। এখন পূর্বনির্ধারিত কৌশল অনুযায়ী চীন অব্যাহতভাবে উন্মুক্তকরণ করছে এবং বহির্বিশ্বের আস্থা অর্জন করছে।

চীনের পাঁচ হাজারেরও বেশি বছরের ইতিহাস আছে। চীনারা স্পষ্টভাবেই বুঝতে পারে যে, দেশ থাকলে বাসা থাকবে। তাই তারা অস্থায়ীভাবে ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষেত্রে কিছু ক্ষতি বহন করতে এবং দায়িত্বশীল এক সরকারের সঙ্গে বর্তমানের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে চায়। সবাই একযোগে অর্থনীতির স্থায়ী উন্নয়ন রক্ষা করবে এবং চীনা জাতির পুনরুত্থান বাস্তবায়ন করবে। এটাই হলো যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধে চীনের লড়াইয়ের সবচেয়ে শক্তিশালী চেতনা ও সাহস।

(লিলি/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040