যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্ট বাণিজ্যযুদ্ধ বৈশ্বিক শিল্প-শৃঙ্খলার গুরুতর ক্ষতি করেছে: বিশেষজ্ঞ মতামত
  2018-07-09 13:29:59  cri
জুলাই ৯: ৬ জুলাই থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৩৪০০ কোটি মূল্যের চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রয়োগ কার্যকর করেছে এবং বাণিজ্যিক যুদ্ধ শুরু করেছে। এর পাল্টা-জবাব দিতে বাধ্য হয়েছে চীন। চীনের বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ চালানো আর্থিক শৃঙ্খলার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং এটি গুরুতরভাবে বিশ্বের শিল্প-চেইনের শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ নিয়ে শুনবেন আজকের সংবাদ পর্যালোচনা।

যুক্তরাষ্ট্র কেন অর্থনীতির ইতিহাসে বৃহত্তম এই বাণিজ্যযুদ্ধ সৃষ্টি করতে চায়? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের উদ্দেশ্য শুধু দেশটির বাণিজ্যঘাটতি ও ভারসাম্যহীনতা সমাধান করাই নয়, বরং চীনের উন্নয়নে বাধা দেওয়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, অর্থনীতি ও সহযোগিতা-বিষয়ক গবেষণালয়ের গবেষক মেই সিন ইউ বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাচ্ছে এবং মন্দার মধ্যে নেই। এই সময় বাণিজ্যযুদ্ধ সৃষ্টি করলে সেদেশের কর্মসংস্থানের সুযোগ ও জনকল্যাণ বাড়ানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন,

'যুক্তরাষ্ট্র নিজ উদ্যোগে বাণিজ্যযুদ্ধ সৃষ্টি করেছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে দেখা যায়, এটি আর্থিক যুক্তির সঙ্গে একদম বেমানান। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাতের আসল উদ্দেশ্য হলো নবোদিত বড় রাষ্ট্র হিসেবে চীনকে দমন করা। তবে বাণিজ্যযুদ্ধের মাধ্যমে এর আগে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন দমনমূলক ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। এখন চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পর্যায়ের দমননীতি শুরু হয়েছে।'

চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের পর পাল্টা-জবাব হিসেবে চীন একইদিন সমমূল্যের মার্কিন পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে চীনের লড়াইয়ের সাহস কোথা থেকে এসেছে?

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম কোয়ার্টারে জিডিপি'র প্রবৃদ্ধির হার ৬.৮ শতাংশ ছিলো। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে জিডিপি মাঝারি ও উচ্চ গতিতে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। চীনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সমিতির উপপ্রধান লি ইয়োং মনে করেন, অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়ন হলো বাণিজযুদ্ধে লড়াই করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। তিনি বলেন,

'সম্প্রতি আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হচ্ছে। আমরা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৬.৫ থেকে ৬.৯ শতাংশের মধ্যে ধরে রেখেছি। ভবিষ্যতে বাণিজ্যযুদ্ধের প্রক্রিয়ায় আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশের নীচে বজায় রাখা আমাদের লক্ষ্য বলে আমি মনে করি। চলতি বছর এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা কোনো বড় সমস্যা নয়।'

৩৪০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত এই তালিকার মধ্যে চীনে বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্যে মোট পণ্যের ৫৯ শতাংশ। এর মধ্যে মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংখ্যাও কম নয়। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গবেষণালয়ের আন্তর্জাতিক বাজার বিভাগের উপপ্রধান পাই মিং মনে করেন, অর্থনীতির বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র যে বাণিজ্যযুদ্ধ সৃষ্টি করেছে তা অবশ্যই বিশ্বের বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় আঘাত আনবে এবং বিশ্বের শিল্প-শৃঙ্খলা ও মূল্য-শৃঙ্খলার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন,

'যেমন ধরুন, 'অ্যাপল ফোন' চীনের ফোক্সকোনে প্রক্রিয়াকরণ হয়। তবে এর উপকরণ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে। যদি চীনের নির্মাণ শিল্পের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা-সম্বলিত ব্যবস্থা আঘাত হানতো, তাহলে নিঃসন্দেহে চীন ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কিন্তু এখন এটি অন্যান্য দেশের জন্যও একইসঙ্গে ক্ষতির কারণ হয়েছে। তাই আমি মনে করি, ট্রাম্প প্রাশাসনের এই আচরণ কেবল চীনের ওপর চাপ দেওয়া নয়, আন্তর্জাতিক শিল্প-শৃঙ্খলার ওপরও ব্যাপক আঘাত হানতে পারে। এ ধরনের শিল্প-চেইন হলো বর্তমানে আন্তর্জাতিক শ্রম বিভাজন ব্যবস্থার ভিত্তি। যা বর্তমান অর্থনীতির বিশ্বায়নকে কিছুটা সমর্থন দেয়।'

লিলি/তৌহিদ

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040