সংবাদ পর্যালোচনা: থাইল্যান্ডের গুহায় ১২ কিশোর আটক; উদ্ধার অভিযানে একজন নিহত
  2018-07-14 14:40:25  cri

শুক্রবার থাইল্যান্ডের একটি গুহায় আটকে পড়া ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধার করতে গিয়ে একজন ডুবুরি মারা গেছেন। নিহত ডুবুরির নাম সামান গুনান। সামান গুনান থাই নেভির একজন সাবেক সদস্য। গুহায় কিশোরদের আটকে পড়ার খবর শুনে তিনি স্বেচ্ছায় উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। উদ্ধার অভিযানে গুনানের কাজ ছিল অক্সিজেন সরবরাহ করা। গুহা থেকে বের হওয়ার সময় অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে শুক্রবার সকালে তিনি মারা যান। এদিকে, আটকে পড়াদের উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসতে কয়েক মাস পর্যন্ত লাগতে পারে বলে জানিয়েছে সেদেশের সেনাবাহিনী। বিস্তারিত শুনবেন সংবাদ পর্যালোচনায়।

থাইল্যান্ডের উত্তরে চিয়াং রাই এলাকার থাম লুয়াং গুহায় বেড়াতে গিয়ে গত ২৩ জুন নিখোঁজ হয় দেশটির ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ। একটি প্রশিক্ষণ পর্বে অংশ নেওয়ার পর তারা ওই গুহার ভেতর প্রবেশ করে। এরপর শুরু হয় একটানা ভারী বর্ষণ। বর্ষার পানি আর কাদায় বন্ধ হয়ে যায় গুহার প্রবেশমুখ। ভেতরে আটকা পড়ে ১৩ জনের দলটি।

ঘটনা জানার পরপরই উদ্ধার অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এর শুরুতেই তারা গুহার প্রবেশমুখে ওই কিশোরদের বাইসাইকেল খুঁজে পাওয়া যায়। গুহার ভেতরে পাওয়া যায় তাদের হাত-পায়ের ছাপ।

এরপর থেকে পুরো থাইল্যান্ডের মানুষের তাকিয়ে আছে গুহাটির দিকে। দেশটির নৌবাহিনীর সঙ্গে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় যুক্তরাজ্য থেকে যাওয়া ডুবুরি দল। গুহায় যাতে অক্সিজেনের ঘাটতি না হয়, সেজন্য প্রবেশ করানো হয় কয়েকশ' অক্সিজেন ট্যাংক। গুহার ভেতরে তৈরি করা হয় একটি বেস ক্যাম্প। প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়াসহ নানাভাবে নিখোঁজ কিশোরদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চললেও ভারী বর্ষণ উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছিল। এতে করে আটকে পড়া দলটিকে ফিরে পাওয়ার আশা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। কিন্তু উদ্ধারকারীরা দমে যাননি। চালিয়ে যান অভিযান।

এরপর আটকে পড়ার নয় দিনের মাথায় সোমবার সন্ধান মেলে দলটির। ব্রিটিশ উদ্ধারকারী ডুবুরি দল জানায়, কিশোর ফুটবল দলটি ওই গুহার মধ্যে একটি শুকনো কার্নিশের মতো জায়গায় বসে আছে।

আটকা পড়া কিশোরদের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে আর তাদের কোচ এক্কাপোল জানথাওংয়ের বয়স ২৫। তারা যে গুহায় আটকে পড়েছে সেটি ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম গুহা। কম প্রশস্ত ও অনেকগুলো প্রকোষ্ঠ থাকায় এর ভেতর চলাচল করা কঠিন।

নিহত সামান গুনার একজন অভিজ্ঞ রানার এবং সাইক্লিস্ট ছিলেন। ওই উদ্ধার অভিযানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। গুহা থেকে কিশোরদের উদ্ধারে নৌবাহিনীর ডুবুরি, সামরিক বাহিনী এবং বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবকসহ প্রায় এক হাজার উদ্ধারকারী কাজ করছেন।

আটকে পড়াদের বের করে আনার সম্ভাব্য উপায়গুলো হলো ডুবুরির মাধ্যমে বের করে আনা এবং ড্রিলিং করা।

যেভাবে ডুবুরিরা যাচ্ছেন, সেভাবেই তাদের দ্রুত বের করে আনা যায়। তবে এ প্রক্রিয়াটি সবচেয়ে বিপজ্জনক। যুক্তরাষ্ট্রের কেভ রেসকিউ কমিশনের সমন্বয়ক জনাম মির্জা বলেছেন এ-কথা। সমস্যা হলো, গুহায় আটকা পড়া কিশোররা কেউই প্রশিক্ষিত ডুবুরি নয়। তারা সাঁতারও জানে না। গুহাটির মধ্যে এমন জায়গায় এই কিশোররা রয়েছে - যে পেশাদার ডুবুরিদের গুহার প্রবেশপথ থেকে সেখানে পৌঁছাতে কয়েক ঘন্টা লেগে যায়। পথটা জায়গায় জায়গায় খুবই সরু। তা ছাড়া তাদের সহায়তা করতে সার্বক্ষণিকভাবে পাম্প করে বন্যার পানি সরাতে হয়েছে।

বাকি রইলো ড্রিলিংয়ের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করা। কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করেছে ড্রিলিং মেশিন দিয়ে পাহাড়ের গায়ে ছিদ্র করে গুহার ভেতরের বন্যার পানি বের করে দিতে। কিন্তু শক্ত পাথরের কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

কিন্তু পাহাড় ফুটো করে আটকে পড়া কিশোরদের উদ্ধার করতে যাবারও অনেক বিপদ আছে। প্রক্রিয়াটা শুরু করতে হলেও নতুন রাস্তা তৈরি করতে হবে- যাতে ভারী ড্রিলিংয়ের যন্ত্রপাতি সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়।

তা ছাড়া তার আগে পাহাড়টার একটা জরিপ করতে হবে, কারণ যে গর্তটা করা হবে তা যেন আটকে পড়া লোকেরা যেখানে আছে সেখানে গিয়ে শেষ হয়। তা না হলে তাদের উদ্ধারের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে না। এ সবই সময় সাপেক্ষ কাজ!

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040