যুক্তরাষ্ট্র একটি 'সুপার দুর্বৃত্ত দেশে' পরিণত হতে পারে: মার্কিন থিংকট্যাংক
  2018-07-06 15:28:00  cri
গত ৪ জুলাই পালিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। উত্সবমুখর পরিবেশে দিবসটি পালিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ আতশবাজিতে আলোকিত হয়ে ওঠে এদিন। কিন্তু এবার এমন একটা সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস পালিত হল, যখন ট্রাম্প প্রশাসনের নেতৃত্বে দেশটি বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হতে চলেছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন মার্কিন জনগণ।

মার্কিন বেসরকারি সংস্থা রাসমুসেন রিপোর্টস সম্প্রতি এক জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের তিন ভাগের এক ভাগ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত আগামী ৫ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় বারের মতো অভ্যন্তরীণ সংকটের মধ্যে পড়বে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্য ও বৈষম্য বিষয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প সরকারের ১.৫ লাখ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের কর কমানোর নীতিতে ধনী মানুষ ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছে এবং এর ফলে দেশটিতে দারিদ্র্য, বৈষম্য, অসমতা বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে।

অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের কূটনীতির সমালোচনা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকিংস্‌ ইনস্টিটিউটের উধ্বর্তন গবেষক রবার্ট কাগান সম্প্রতি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি 'সুপার দুর্বৃত্ত দেশে' পরিণত হতে পারে। তিনি বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য, ইরান-পরমাণু-চুক্তি, ন্যাটোর প্রতিরক্ষাবিষয়ক ব্যয়, উত্তর কোরিয়া ইত্যাদি ইস্যুতে যেসব আচরণ করেছে, তাতে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেকার প্রেসিডেন্টদের নীতির বাইরে গিয়ে বিশ্বকে পদানত করার নীতি গ্রহণ করেছেন।

ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি, ইরান-পরমাণু-চুক্তিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বহুপক্ষীয় চুক্তি থেকে সরে আসে। এ ছাড়া দেশটি ইউনেস্কো, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ থেকেও সরে এসেছে। মার্কিন গণমাধ্যমের সুত্রে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনার কথাও বলছেন। এমনকি হোয়াইট হাউস 'সমতা ও পারস্পরিক কল্যাণকর শুল্ক আইন' (ফেয়ার অ্যান্ড রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ অ্যাক্ট) প্রণয়ন করেছে, যাতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্ভব হয়।

পাশাপাশি ট্রাম্প সরকার আন্তর্জাতিক সমাজের আহ্বান ও সতর্কবাণী উপেক্ষা করে ইচ্ছেমতো বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে বাণিজ্য-যুদ্ধ শুরু করেছে। তিনি ইইউ, কানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রফতানিপণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। ফলে এসব দেশও পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে।

গত ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের দিনেই ট্রাম্প তেল ও গ্যাসের দাম বাড়াতে ওপেকের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন এবং ওপেককে দ্রুত দাম কমানোর 'নির্দেশ' দিয়েছেন। ট্রাম্পের এসব আচরণ স্পষ্টতই বিদম্যান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রতি তার অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ।

যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই 'বিশ্ব পুলিশ' হিসেবে নিজেকে গণ্য করে এবং ইচ্ছেমতো অন্যদেশকে 'দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র' হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে। গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বৃত্তের মতো আচরণ দেশটির অনেক বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক মহলকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার বিশেষ কলাম লেখক রবার্ট জে স্যামুয়েলসন বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র যে-অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা সামরিক মিত্রতা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক নীতিমালার সুফল। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের ধ্বংসাত্মক একতরফাবাদ কোনো কাজে লাগবে না। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া চলছে এবং এবং একে ধ্বংস করা ট্রাম্পের সাধ্যের বাইরে। (রুবি/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040