জেলে-পল্লীটি শেনচেন'র লুওহু এলাকায় অবস্থিত। গ্রামটি হংকংয়ের কাছাকাছি। গত শতাব্দীর ৩০ ও ৪০-এর দশক থেকে কুয়াংতংয়ের দংকুয়ান থেকে অনেক জেলে গ্রামটিতে আসে। তাঁরা জীবিকা নির্বাহের জন্য মাছ ধরতেন। নৌকাই তাদের সম্বল; থাকার জায়গাও বটে। ৮০ বছর বয়সী জেলে ও গ্রামটির বাসিন্দা উ চিন ছিং বলেন,
"আগে আমার নৌকা খুবই ছোট ছিল। চওড়া এক মিটার, লম্বা ৫ মিটার। এত ছোট নৌকায় পরিবারের কয়েকজন থাকতাম। তখন জীবন খুবই কঠিন ছিল। ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমাদের বেশি সমস্যা হতো।"
গত শতাব্দীর ৭০এর দশকের শেষ দিকে হংকং ও ম্যাকাও'র কাছাকাছি ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে, চীন সরকার শেনচেন, চুহাই ও শানথৌতে বিশেষ উত্পাদন এলাকা নির্মাণ করে। তখন চীনা সর্বোচ্চ নেতা তেং সিয়াও পিং এর ব্যাপক সমর্থন করেছিলেন। ১৯৮০ সালের অগাষ্টে চীনা জাতীয় গণকংগ্রেস কুয়াংতং প্রদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা নির্মাণ করার অনুমতি দেয় এবং 'কুয়াংতং প্রদেশ অর্থনৈতিক বিশেষ এলাকা প্রোভিশনাল প্রবিধান' প্রকাশিত হয়। এভাবেই চীনের প্রথম অর্থনৈতিক এলাকা নির্মিত হয়।
শেনচেন অর্থনৈতিক বিশেষ এলাকার সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি অনুযায়ী, জেলে-পল্লীতে গাড়ি ও নৌকা পরিবহন গ্রুপ গড়ে তোলা হয়। গ্রামটিতে তখন থেকে ব্যাপকভাবে জলজ পণ্য উত্পাদন শুরু হয়। এ ছাড়া, গ্রামটিতে পণ্যের প্রক্রিয়াকরণ-বাণিজ্যওই উন্নত হয়। গ্রামটির ইউফেং শিল্প কোম্পানির স্থায়ী ডেপুটি ম্যানিজার হুয়াং সিং ইউয়ান বলেন,
"১৯৭৮ সালে চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গত শতাব্দীর ৮০র দশকের প্রথম দিক পর্যন্ত মাত্র কয়েক বছরে আমাদের গ্রাম বদলে যায়। প্রতি পরিবারের জন্য নতুন বাড়ি নির্মিত হয়। তখনকার চীনে গ্রামটির মানুষের গড় আয় ছিল চীনে সর্বোচ্চ।"
গত শতাব্দীর ৯০এর দশকে শেনচেন অর্থনৈতিক বিশেষ এলাকার ফলে গ্রামের নগরায়ন শুরু হয়। ইউফেং শিল্প কোম্পানি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রামের বাসিন্দারা নিজস্ব অর্থ সংগ্রহ করে আবাসিক অঞ্চল গড়ে তোলেন। হুয়াং সিং ইয়ান বলেন,
"গ্রামের বর্তমান আবাসিক ভবনগুলো সরকারের উদ্যোগে গ্রামবাসীরা নিজস্ব অর্থ সংগ্রহ করে নির্মাণ করে। গ্রামটি সচ্ছল হবার পর, এটি সাংস্কৃতিকভাবেও উন্নত হতে শুরু করে।"
বর্তমানে গ্রামের সকল বাসিন্দা হলেন ইউফেং শিল্প কোম্পানির অংশীদার। প্রতিবছরে তাঁরা কোম্পানি থেকে মুনাফা পান। পাশাপাশি ঘর ভাড়া দিয়েও তারা আয় করেন। এ সম্পর্কে বাসিন্দা উ চিন ছিং বলেন,
"প্রতিমাসে গড়ে ৪০ হাজার ইউয়ান রেনমিনপি আয় আছে আমার। এ বছরে আমার আয় ৪ বা ৫ লাখ ইউয়ান হবে। আগে এত বড় অঙ্কের কথা আমি ভাবতেও পারতাম না।"
জেলে-পল্লীল উন্নয়ন হল শেনচেন'র ৪০ বছরের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি বাস্তবায়নের একটি সংক্ষিপ্তসার। ৪০ বছরে শেনচেনে ধারাবাহিকভাবে বহু স্থানীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। হুয়াওয়েই কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা রেন চেং ফেই শেনচেনে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কারণ সম্পর্কে বলেন, "১৯৮৭ সালে শেনচেনে প্রকাশিত দলিলপত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির ওপর অধিকার নির্ধারিত হয়। এ দলিলপত্র না-হলে আমি শেনচেনে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতাম না।"
১৯৯৯ সালে শেনচেনে আয়োজিত হয় প্রথম চীন হাই-টেক ফেয়ার। তখন ২৮ বছর বয়সী মা হুয়া থেং ২২ লাখ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করে টেসেন্ট কোম্পানি গড়ে তোলেন। ২০১২ সালে টেসেন্টের বার্ষিক আয় ৪০০০ কোটি মার্কিন ডলার ছিল। ২০১৭ সালে টেসেন্টের বার্ষিক আয় ২৩০০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। এ বছর টেসেন্টের উইচ্যাটের ব্যবহারকারী ১০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
শেনচেন শহরের কমিউনিস্ট পার্টির কমিটির সম্পাদক ওয়াং ওয়েই চং বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকার মানুষ শহরের আধুনিকায়ন বাস্তবায়ন করেছেন। ওয়াং ওয়েই চং আরো বলেন,
"১৯৭৯ সালে শেনচেন'র জিডিপি ছিল মাত্র ১৯.৭ কোটি ইউয়ান। মানাপিছু জিডিপি মাত্র ৬০৬ ইউয়ান। ২০১৭ সালে শেনচেন'র জিডিপি ২.২৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান এবং মাথাপিছু জিডিপি ১.৮৩১ লাখ ইউয়ান। অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বে রেকর্ড সৃষ্টি করেছি।"
২০১৭ সালে শেনচেন'র জিডিপি'র পরিমাণ মাত্র বেইজিং ও শাংহাই'র পর এবং হংকংয়ের সমতুল্য ছিল। ওয়াং ওয়েই চং বলেন, শেনচেন ইতিবাচকভাবে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক পরিবেশ গড়ে তুলছে। শেনচেন বর্তমানে উন্মুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
শেনচেন, চুহাই, শানথৌ ও সিয়ামেন—এই চারটি অর্থনৈতিক বিশেষ এলাকা গড়ে তোলার পর ১৯৮৪ সালে চীন ১৪টি উপকূলবর্তী শহরকে উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেয়। ১৯৮৮ সালে হাইনান একটি প্রদেশে রূপান্তরিত হয় এবং অর্থনৈতিক এলাকায় পরিণত হয়। ১৯৯০ সালে শাংহাই ফুতং এলাকা উন্মুক্ত হয়। ২০১৩ সালে চীনের শাংহাই অবাধ বাণিজ্যিক পরীক্ষামূলক এলাকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সালে স্যিয়ংআন নতুন এলাকা গড়ে তোলা হয়।