মিস্টার টেস্টারের আসল নাম হামিদ সেপিদনাম। তাঁর বয়স ৪০। ১০ বছর আগে তিনি ব্রিটেন থেকে ইরানে ফিরে আসেন এবং কাস্পিদ (Kaspid) নামক ওয়েবসাইট ওপেন করেন। শুরুর দিকে তিনি ভাবতেও পারেননি যে, খাবার সম্পর্কে পোস্ট দিয়ে তিনি এতোটা সাড়া পাবেন। কিন্তু কোনো একদিন তিনি ফেসবুকে চীনা খাবার সম্পর্কে পোস্ট দিলেন এবং পোস্টটি সবা খুব পছন্দ করল। তারপর থেকেই তিনি ওয়েবসাইটে তেহরানের বিভিন্ন রেস্তোরাঁর খাবার সম্পর্কে পোস্ট দেওয়া শুরু করেন। তিন বছর আগে ইনস্টাগ্রাম ইরানে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এটি 'মিস্টার টেস্টারের' জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে। এতে তার অনুসারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তিনি খাবার-মহলে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমি আসলে বিগত দশ বছর ধরে 'মিস্টার টেস্টার' হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছি। আমি অসংখ্য মন্তব্য লিখেছি। অনুসারীরা আমাকে অনেক বিশ্বাস করেন। এ-পর্যন্ত অনেক গণমাধ্যম আমার সাক্ষাত্কার নিয়েছে। আমি আগের চেয়ে আরো বেশি পরিচিতি পেয়েছি। সবার কাছে আমি 'মিস্টার টেস্টার' নামে পরিচিত। আমি সত্যিই নিজের বর্তমান কাজ পছন্দ করি।"
কাস্পিদ কোম্পানির কর্মী প্রায় ষাট জন। কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতার চেয়ে 'মিস্টার টেস্টার' বেশি পরিচিত। তিনি এখনও প্রতি সপ্তাহে অনেক সময় নিয়ে বিভিন্ন খাবার সম্পর্কে লেখেন। মিস্টার টেস্টার সাংবাদিককে বলেন, তিনি খাবার সম্পর্কে লিখবার আগে খাবারের ছবি তুলে নেন। তিনি বলেন, "আমি বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় খাবারের স্বাদ নিয়ে থাকি। যেসব রেস্তোরাঁর খাবার আমার ভালো লাগে, সেবা পছন্দ হয়, সেসব রেস্তোরাঁ ও রেস্তোরাঁর খাবার সম্পর্কে আমি ভালো ভালো কথা লিখি। আমরা প্রতিবছরে মাত্র ২০টি রেস্তোরাঁ সস্পর্কে লিখি।"
সুস্বাদু খাবার সম্পর্কে মিস্টার টেস্টারের মন্তব্য ইরানে খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু তাঁর সত্যি কথা তাঁর জন্য বিপদও ডেকে এনেছে। কেউ কেউ তাকে টেলিফোনে হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। কেউ কেউ তার গাড়ি ভাঙচুর করেছে। কেউ কেউ আবার তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে। কিন্তু এসব কোনোকিছুই তাকে দমাতে পারেনি।
বিভিন্ন কারণে ইরানি মানুষ চীনা খাবারসহ বিদেশি খাবার সম্পর্কে তেমন একটা জানেন না। এ ছাড়া, বহু বছরের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানি মানুষ বিদেশি খাবার খাওয়ার সুযোগ কম পেয়েছেন। কিন্তু মিস্টার টেস্টার বিশ্বাস করেন যে, পরিস্থিতি আস্তে আস্তে বদলে যাবে। এ-সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমার মনে হয়, প্রতিটি দেশের সুস্বাদ খাবারকে সম্মান করা উচিত। আমি চীনা খাবার খেতে পছন্দ করি। আমি চীনা মানুষকে সম্মান করি। আমি বিশ্বাস করি যে, চীনা খাবার হল গোটা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খাবারগুলোর অন্যতম। বহু বছরের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানে বিদেশি রেস্তোরাঁ খুবই কম। সেজন্য ইরানি মানুষ অন্য দেশের খাবার খাওয়ার সুযোগ কম পান। আমার মনে হয়, এ-অবস্থার পরিবর্তন হওয়া উচিত। তাঁদের উচিত বিভিন্ন দেশের খাবার খাওয়ার সুযোগ পাওয়া। আসলে আমার স্ত্রী আগে চীনা খাবার খেতে পছন্দ করতো না। কিন্তু এখন চীনা খাবার অনেক পছন্দ করে।"
তিনি টানা পাঁচ বার তেহরানের একটি চীনা রেস্তোরাঁয় গিয়েছেন। তিনি রেস্তোরাঁ সম্পর্কে অনেক মন্তব্য লিখেছেন। এরপর অনেক ইরানি মানুষ এ-চীনা রেস্তোরাঁয় যেতে শুরু করেন। রেস্তেরাঁর মালিক শুরুতে অবাক হয়েছিলেন। মিস্টার টেস্টার বলেন, তাঁর প্রিয় চীনা খাবার হল বেইজিং ডাক ও তাওসিয়াও নুডলস। তিনি আশা করেন, কোনো একদিন তিনি চীন সফর করতে পারবেন।
দশ বছরে মিস্টার টেস্টার তেহরানের প্রায় প্রতিটি রেস্তোরাঁয় গিয়েছেন। এখন তিনি জনকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গেও জড়িত হয়েছেন। তিনি পশ্চিম ইরানের কের্মানশাহে ভূমিকম্পদুর্গত অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এক লাখ ডলার দান করেন। এ ছাড়া, তিনি একজন ক্যান্সার-আক্রান্ত শিশুর জন্য ৩০ হাজার মার্কিন ডলার দান করেছেন।
বর্তমানে মিস্টার টেস্টার আগের চেয়ে অনেক মোটা হয়েছেন। কিন্তু আগে তিনি একজন পেশাদার খেলোয়াড় ছিলেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আগে আমি একজন ফুটবল খেলোয়াড় ছিলাম। আসলে ফুটবল খেলার সময়টা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময়। কিন্তু আমি বর্তমান কাজও উপভোগ করি। আমার স্ত্রী আমাকে ভালবাসে। এটি হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।"
মিস্টার টেস্টার এখন ইরানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খাবার অর্ডার দেওয়ার অ্যাপ তৈরির কাজ করছেন। অ্যাপটি এখনও পরীক্ষার পর্যায়ের রয়েছে।