পাকিস্তান আমলে সরকার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটি-পরবর্তীতে যার অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠেন জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমানে বাংলাদেশর ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বর্তমানে তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
ইতিহাসের অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে প্রতিষ্ঠার ৬৯ বছর পার করলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ২৩ জুন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করে দলট। দীর্ঘ ৬৯ বছরের মাথায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিজস্ব নতুন ভবন পেল ঐতিহ্যবাহী দলটি। আর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন সভাপতি শেখ হাসিনা।
টিকাটুলির রোজগার্ডেন থেকে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। মাঝে কখনো ৯ কানকুন বাড়ি লেন, কখনো ৫৬ সিমসন রোড, ৯১ নবাবাপুর রোড, সদরঘাট রূপমহল সিনেমাহলের গলি, কখনো বা পুরানা পল্টন ছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। দীর্ঘ ৭ দশক পর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ৭ কাঠা জমির উপর আগের কার্যালয়ের স্থলে নির্মাণ করা হয় নতুন কার্যালয়ের অত্যাধুনিক ভবন।
২৩ জুন ভোরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলেন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন করেন। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে হয় নতুন ভবনের উদ্বোধন।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ভবনটির পুরোটা জুড়েই মুক্তিযুদ্ধের নানা প্রেক্ষাপটের ছোঁয়া। চতুর্থ তলায় দয়োল জুড়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ছবি। পঞ্চম তলায় মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতি। আর ষষ্ঠ তলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের টেরাকোটা। উদ্বোধনের পর ভবনটি ঘুরে দেখেন শেখ হাসিনা। ১০তলা ভবনের নবম তলায় সভাপতির কক্ষ। সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ ছাড়াও রয়েছে সহযোগী সংগঠনের অফিস। অন্যান্য তলায় রয়েছে ডিজিটাল লাইব্রেরি, মিলনায়তন, ভিআইপি লাউঞ্জ, সাংবাদিকদের বসার জায়গা, ক্যাফেটিরা।
নতুন এই কেন্দ্রীয় কার্যালয় দলের নেতাকর্মীদের মধ্য নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার করবে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।
একই দিন দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সারা দেশ থেকে আসা চার হাজারের বেশি আওয়ামী লীগ নেতা যোগ দেন বিশেষ এ বর্ধিত সভায়। এতে দিক নির্দেশনামূলক ভাষণে শেখ হাসিনা দলের অতীত ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, বাঙালির সব অর্জন এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। তাই বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে হলে লিখতে হবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৬ দফা থেকে শুরু করে, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, ২৬ মার্চে স্বাধীনতা ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরেন। মাত্র তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর নিরলস পরিশ্রমের কথাও তুলে ধরেন তিনি। ৭৫'র পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিদেশে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ তাকে সভাপতি নির্বাচন করেছিল- এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
দলের দুর্দিনে, দুঃসময়ে নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের যারা মূল্যায়ন করেননি তাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন শেখ হাসিনা। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্য সবাইকে কাজ করারও নির্দেশনা দেন তিনি।
আওয়ামী লীগ তৃণমূল মানুষের ভাগ্যন্নোয়নে কাজ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে নেতাদের নির্দেশনা দেন। বলেন, জনগণের ভোট নিয়েই ক্ষমতায় আসতে চায় আওয়ামী লীগ, ভোট চুরির অপবাদ নিয়ে নয়। ভবিষ্যতেও আওয়ামী লীগ এই গণমুখী রাজনীতির পথ ধরে চলবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।