সংবাদ পর্যালোচনা: আমেরিকার বাণিজ্যযুদ্ধ; লাভ-লোকসানের সমীকরণ
  2018-06-24 14:41:32  cri

গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দিন, চীনা পণ্যের ওপর আরো শুল্ক আরোপ করা হবে যা থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় হবে। আগামী ৬ জুলাই থেকে এই পদক্ষেপ কার্যকর হবে। এরপর শুক্রবার চীন ঘোষণা করে, তারা তেলসহ বিভিন্ন মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে। চীনের এই ঘোষণার পর মার্কিন শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। এরপর আবার চীন থেকে আমদানিকৃত ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দেয় ওয়াশিংটন। শুধু চীনই নয় যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুপ্রতীম ইউরোপ, কানাডা, ভারতসহ অন্যান্য দেশের ওপরও আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে সে দেশগুলোও। এভাবে যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে আমেরিকা, তাতে ইতোমধ্যে একা হয়ে পড়েছে দেশটি। বিস্তারিত থাকবে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর 'আমেরিকা ফার্স্ট' স্লোগান বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমদানি-বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি করছেন। এতে আন্তর্জাতিক মুক্ত বাণিজ্য কাঠামোতে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। মূলত কোনো দেশ এক বা একাধিক আমদানি পণ্যের উপর কর, শুল্ক বা অন্য কোনো আর্থিক বোঝা চাপালে বাকি দেশগুলোও যদি পাল্টা পদক্ষেপ নেয়, তখন তাকে বাণিজ্য যুদ্ধ ছাড়া অন্য কিছুই বলা যায় না। বিশেষ করে আমেরিকা ও চীনের মতো বিশাল দেশের সংঘাতের ফলাফলে গোটা বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে বাণিজ্য যুদ্ধের পর্যায়ে চলে যেতে পারে, যাকে চাইলেই নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হবে না।

শুধু চীনের সঙ্গেই নয়, বাণিজ্য ইস্যুতে একমত না হওয়ায় জি৭ গোষ্ঠীর সঙ্গে শীর্ষসম্মেলনের ঘোষণা স্বাক্ষর করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে করে ধনাঢ্য বাণিজ্যিক গ্রুপের মধ্যে যেন ভাঙনের সুর তৈরি হলো। এদিকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে শুল্ক আরোপ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কানাডা এবং ভারত। গত মার্চে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। গত ১৬ জুন ভারত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে জানায় যে তারা ৩০টি মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করবে। ৫০ ভাগ শুল্ক বাড়ানো হবে। ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে শুল্ক আরোপ করায় ভারতের ২৪০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতি অনুযায়ী ক্যানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, ব্রাজিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও আমেরিকার বিরুদ্ধেও পালটা পদক্ষেপের প্রস্তুতি ঘোষণা করেছে।

এদিকে, আমদানি বাণিজ্যে শুল্ক আরোপের যে ধারাবাহিক উদ্যোগ মার্কিন সরকার নিয়েছে, তাকে পুরোপুরি 'বাণিজ্য-সন্ত্রাস' বলে আখ্যায়িত করেছে চীনের গণমাধ্যম। গত সপ্তাহে চীন জানায়, তারা তেলসহ আরো মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ করছে। একই ধরনের পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে ভারত। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের শুল্ক আরোপে চীনের রপ্তানিকৃত ২ শতাংশ পণ্যের ওপর প্রভাব পড়েছে। মার্কিন শুল্ক আরোপে আসলে চীনের ওপর তত বড় প্রভাব ফেলতে পারবে না।

প্রশ্ন উঠতে পারে, ট্রাম্প কেন বাণিজ্য যুদ্ধের পথে এগোচ্ছেন! সমালোচকদের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির দিয়ে আমেরিকার সার্বিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের স্বার্থ দেখতে পাচ্ছেন না। কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কাঠামো তোলপাড় হয়ে গেলে আখেরে আমেরিকারই ক্ষতি হবে। ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাবে, রপ্তানি কমে যাবে এবং প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা তাদের।

সব সাবধানবাণী উপেক্ষা করে ট্রাম্প যদি সত্যি আমদানির উপর বাড়তি শুল্ক চাপান, তার পরিণতি আমেরিকার জন্যও ইতিবাচক হবে না। যেমন, ইস্পাত আমদানির উপর শুল্ক চাপালে আমেরিকার বাজারেও তার মূল্য বেড়ে যাবে। এতে মার্কিন ইস্পাত কোম্পানিগুলির লাভ হলেও ক্রেতাদের বাড়তি মূল্য গুনতে হবে।

সাধারণ মানুষ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এসব অপচেষ্টা চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বস্বার্থকে উপেক্ষা করেছে। দেশটির তথাকথিত 'বাণিজ্যিক ভারসাম্য' আসলে বাণিজ্য শুল্কের অজুহাতে রাজনীতি, অর্থনীতি, সামরিক ও বৈজ্ঞানিক খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টা। এই আচরণ অবাধ বিশ্ব বাণিজ্য, আর্থিক বিশ্বায়ন এবং বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থা নষ্ট করবে। এটি এক 'বাণিজ্য-সন্ত্রাস', যা বিশ্ব বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

মোহাম্মদ তৌহিদ

বেইজিং

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040