যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেকারত্বের জন্য চীনকে দায়ী করা উচিত নয়: ইউরেশিয়া ফিউচার (অর্থ-কড়ি; ২৩ জুন ২০১৮)
  2018-06-24 14:42:16  cri


১. যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেকারত্বের জন্য চীনকে দায়ী করা উচিত নয়। সম্প্রতি 'ইউরেশিয়া ফিউচার'-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ-মন্তব্য করা হয়েছে।

অনলাইন পত্রিকাটির পরিচালক অ্যাডাম গ্যারি এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, উদ্ভাবন, উইন-উইন কর্মসংস্থান মডেল, শিক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোরে ব্যর্থতার জন্য চীনের সাফল্য দায়ী নয়। তিনি এর কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের উচিত চীনসহ অন্যান্য দেশকে দায়ী না-করে, নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধানের চেষ্টা করা।

গ্যারি লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প খাতে কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে এই খাতে বিনিয়োগের অভাবে। এই খাতে সবসময় বিনিয়োগ অব্যাহত রাখা উচিত। বিদ্যমান উত্পাদন-কৌশল ও ব্যবসা-মডেল লাভজনক হলেও, বিনিয়োগ বন্ধ রাখা যাবে না।

গ্যারি শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর ভূমিকারও সমালোচনা করেন। তিনি লিখেছেন, একসময় পশ্চিমা বিশ্বের শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এগুলো বর্তমানে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এরা অগ্রগতিকে সবসময় পেছনে টেনে ধরে রাখছে। মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলা তাই জরুরি।

গ্যারি পশ্চিমা বিশ্বে বেকারত্বের উঁচু হারের জন্য শিক্ষা-ব্যবস্থাকেও দায়ী করেন। তিনি লিখেছেন, পশ্চিমা শিক্ষা-ব্যবস্থায় কায়িক শ্রমের মর্যাদা শেখানো হয় না।

২. চীনে অপরিশোধিত তেলের উত্পাদন কমেছে। গত মে মাসে দেশটি উত্পাদন করেছে ১৫.৯৭ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২.৩ শতাংশ কম। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) সম্প্রতি এ-তথ্য জানিয়েছে।

ব্যুরোর তথ্যানুসারে, মে মাসে চীনে গড়ে প্রতিদিন অপরিশোধিত তেল উত্পাদিত হয়েছে ৫১‌৫,০০০ টন করে, আগের মাস এপ্রিলে যা ছিল ৫১৭,০০০ টন।

ব্যুরো আরও জানায়, মে মাসে চীন ৩৯.০৫ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি।

৩. লিথিয়াম আহরণের অধিকতর পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে চীন। সম্প্রতি পদ্ধতিটি দেশের জাতীয় মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়। চীনের জ্বালানি খাতে এর ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। চিয়াংসি হাওহাই লিথিয়াম এনার্জি, নানছাং বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য ইনস্টিটিউট যৌথভাবে নতুন পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেছে।

সম্প্রতি নানছাং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ছিউ জুমিন জানান, নতুন আবিষ্কারের ফলে লিথিয়াম আহরণের বিদ্যমান পদ্ধতি পরিত্যাগ করা সম্ভব হবে। বিদ্যমান পদ্ধতিতে লিথিয়াম আহরণ করলে লাভ কম হয় এবং প্রচুর বর্জ্য সৃষ্টি হয়।

প্রচলিত পদ্ধতিতে এক টন লিথিয়াম কার্বনেট উত্পাদন করলে ৩০ থেকে ৪০ টন বর্জ্য সৃষ্টি হয়। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করাও অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

হাওহাই-এর চেয়ারম্যান ফেং কুইইয়ং জানিয়েছেন, তাঁর কোম্পানি নতুন পদ্ধতিতে লিথিয়াম উত্পাদনের জন্য ১০০ কোটি ইউয়ান বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। এই প্রকল্প থেকে বছরে ৪০ হাজার টন লিথিয়াম কার্বনেট উত্পাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, লিথিয়াম ব্যাটারি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও বিদ্যুতচালিত গাড়ির মতো আধুনিক যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হয়। ওষুধ কারখানা, গ্লাস শিল্প ও অন্যান্য শিল্পেও লিথিয়ামের ব্যবহার আছে। লিথিয়াম কার্বনেট থেকে লিথিয়াম সেল তৈরি হয়। চীন তার চাহিদার ৮০ শতাংশ লিথিয়াম কার্বনেট বিদেশ থেকে আমদানি করে।

৪. ছাংআন ফোর্ড অটোমোবাইল কোম্পানি সম্প্রতি ৭৫২টি 'ইকোস্পোর্ট' গাড়ি ফিলিপিন্সে রফতানি করেছে। কোম্পানিটি এই প্রথম বিদেশে সম্পূর্ণ তৈরি গাড়ি রফতানি করল। ছাংআন ফোর্ড অটোমোবাইল কোম্পানি হচ্ছে ছোংছিং ছাংআন অটোমোবাইল কোম্পানি ও যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ড কোম্পানির একটি যৌথ-উদ্যোগ।

চীনের ছোংছিং মিউনিসিপালিটিতে ছাংআন ফোর্ড অটোমোবাইল কোম্পানি অবস্থিত। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ফোর্ড কোম্পানির সবচেয়ে বড় উত্পাদনকেন্দ্র। এই কেন্দ্রের বার্ষিক উত্পাদনক্ষমতা ৩২ লাখ। এর মধ্যে আছে ১০ লাখ গাড়ি, ১০ লাখ গিয়ারবক্স ও ১২ লাখ ইঞ্জিন। ২০১৭ সালে কোম্পানিটি চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে ৮২৭,০০০ গাড়ি বিক্রি করে।

ছাংআন ফোর্ড কোম্পানির নির্বাহী ভাইস-প্রেসিডেন্ট হ্য ছাওপিং বলেছেন, আগামী বছর ফোর্ডের সেডান গাড়ি 'ফোকাস'-এর উন্নত সংস্করণ উত্তর আমেরিকায় রফতানি করা হবে। ২০১৭ সালে ছাংআন ফোর্ড অটোমোবাইল কোম্পানি ২৯ লাখ ৯০ হাজার গাড়ি উত্পাদন করে এক্ষেত্রে চীনে শীর্ষস্থান দখল করে।

৫. চীনে চা রফতানি করতে চায় কেনিয়ার একাধিক চা-বাগান। সম্প্রতি বাগানগুলোর প্রতিনিধিরা গণমাধ্যমকে এ-তথ্য জানান।

৩২০ একর এলাকাজুড়ে অবস্থিত মারাম্বা টি এস্টেটের বোর্ড চেয়ারম্যান জোসেফ কুরিয়া বলেন, কেনিয়ার চা-উত্পাদকদের জন্য চীন একটি ভালো বিকল্প বাজার।

জোসেফ জানান, চীনের ব্যাপারে তারা আগ্রহী। তাদের বাগানে উত্পাদিত চায়ের জন্য চীন হতে পারে একটি চমত্কার বাজার।

তিনি জানান, মারাম্বা চা-বাগানে বছরে গড়ে ১৪ হাজার থেকে ১৮ হাজার কিলোগ্রাম সবুজ চা উত্পাদিত হয়। এসব চা ভারত, আফগানিস্তান ও উপসাগরীয় কয়েকটি দেশে রফতানি হয়।

জোসেফ আরও জানান, চলতি বছর চমত্কার আবহাওয়া ও উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে চায়ের উত্পাদন অনেক বেশি হবে। এ-পর্যায়ে তারা বিকল্প বাজারের সন্ধানে আছেন।

উল্লেখ্য, সরকারি হিসেব অনুসারে, কেনিয়া প্রতিবছর চা উত্পাদন করে বছরে আনুমানিক ৪৭২ মিলিয়ন কিলোগ্রাম। এর মধ্যে চীনে রফতানি হয় বছরে গড়ে ৪ থেকে ৫ মিলিয়ন কিলোগ্রাম চা।

৬. বিদেশি পুঁজি আকর্ষণের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে কিউবান সরকার। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সম্প্রতি দেশটিতে আয়োজন করা হয় কিউবান শিল্পের তৃতীয় আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও প্রদর্শনী (কিউবাইন্ডাস্ট্রিয়া ২০১৮)।

কিউবার বাণিজ্যমন্ত্রী সালভেদর পারদো জানান, চীন, রাশিয়া, স্পেন, জার্মানি ও ইতালিসহ প্রায় ৩০টি দেশের প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহণ করেন।

পারদো বলেন, চীনের সঙ্গে কিউবার চমত্কার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। নবায়নাযোগ্য জ্বালানি ও পরিবহন খাতসহ বিভিন্ন খাতে দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতা-চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কিউবার প্রতিবছর ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন।

৭. আমাজন-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেফ বেজোস এখন বিশ্বের শীর্ষ ধনী। তিনি পেছনে ফেলেছেন বিল গেটস্‌কে। সম্প্রতি প্রকাশিত ফোর্বস-এর তালিকা অনুসারে, তাঁর সম্পদের মোট অর্থমূল্য ১৪,১৯০ কোটি মার্কিন ডলার। শীর্ষ ধনীর তালিতায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন বিল গেটস্‌, যার সম্পদের মূল্য ৯২৯০ কোটি মার্কিন ডলার। আর ৮২২০ কোটি মার্কিন ডলারের সম্পদ নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন ওয়ারেন বাফেট।

৮. বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে ৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভা। পিইডিপি-৪ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা কার্যক্রমে এই অর্থ ব্যয় করা হবে।

বিশ্বব্যাংকের এক সাম্প্রতিক সংবাদ-বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ শিক্ষার্থী উপকৃত হবে। কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় শ্রেণির বাংলা ও অঙ্ক শেখায় জোর দেওয়া হবে। পাশাপাশি, সরকারি স্কুলগুলোতে একটি উন্নত কারিকুলাম প্রণয়ন ও পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তক এবং সহায়ক শিক্ষা ও ডিজিটাল উপকরণ সরবরাহ করা হবে। সেইসঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আগে সকল সরকারি স্কুলে একবছর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা করা হবে।

সংবাদ-বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এই কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার বাইরে রয়েছে এমন ১০ লাখ শিশুকে আন্তর্জাতিক কারিকুলাম এবং সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া, ৯৫ হাজার শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকরুম তৈরিসহ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হবে। কর্মসূচিতে মেয়ে শিক্ষার্থী ও ও নারী শিক্ষকদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ৮০ হাজার পানি ও স্যানিটেশন ব্লক তৈরি এবং ১৫ হাজার নিরাপদ স্থাপনা করা হবে।

৯. মাছ ধরতে গিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলদস্যুদের আক্রমণ, অথবা হিংস্র প্রাণীর আক্রমণে নিহত অথবা স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলে ও তার পরিবারের জন্য সরকারি প্রণোদনার প্রস্তাব করে একটি নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই নীতিমালা 'সমগ্র বাংলাদেশে মৎস্য আহরণকালে নিহত বা নিখোঁজ জেলে পরিবার বা স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেদের জন্য' প্রয়োজ্য হবে। সম্প্রতি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা থেকে নীতিমালাটি জারি করা হবে বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মৎস্য অধিদপ্তরের নিবন্ধিত ও পরিচয়পত্রধারী জেলে মাছ ধরার সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলদস্যুদের হামলা বা বাঘ, কুমির, সাপের কামড়ে মারা গেলে তার পরিবাকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা দেওয়া হবে। মাছ ধরার সময় দুর্ঘটনায় স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেদের ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের এক কোটি ৮৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্যখাতের ওপর নির্ভরশীল। মাছ ধরা ছাড়া তাদের জীবিকার বিকল্প উৎস নেই। এমনকি মাছ ধরার জাল ও নৌকা কেনারও সামর্থ্য নেই অনেকের। অথচ দেশের মোট জিডিপির ৩.৬১ শতাংশ এবং মোট কৃষিজ জিডিপির ২৪.৪১ শতাংশ মৎস্য খাত থেকে আসে।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040