গরমে ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হোন
  2018-06-24 14:45:46  cri

 

চীন ও বাংলাদেশে এখন প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এই গরমে অনেকেই ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া উচিত। না-হলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। আজকের 'জীবন যেমন' অনুষ্ঠানে আমরা এ-বিষয় নিয়েই আলোচনা করব।

শুরুতে আলোচনা করব ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার খেলে শরীরের কী ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়ে।

ক্ষতি ১: পাকস্থলীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব

প্রচণ্ড গরমে অতিরিক্ত ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার খেলে আমাদের পাকস্থলীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। গরমে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা খাবার পাকস্থলীর সামর্থ্য কমিয়ে দেয়। এতে পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে।

ক্ষতি ২. গলার প্রদাহ

ঠাণ্ডাজাতীয় খাবারের প্রথম ধাক্কাটা কিন্তু খায় আমাদের গলা। কারণ, গলা দিয়ে খাবার নিচে নামে। তো, এতে গলায় রক্ত-প্রভাব বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কখনও কখনও গলায় ইনফেকশান হয়ে গলা ব্যথা করতে পারে।

ক্ষতি ৩. খাদ্যগ্রহণের অনিহা

ঠাণ্ডাজাতীয় খাবারের অধিকাংশের মধ্যেই শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি-উপাদান সাধারণত কম থাকে। শিশুরা আইসক্রিম খেতে পছন্দ করে। এতে শুধু চিনি আর দুধ থাকে, অন্য পুষ্টি-উপাদান থাকে না। এখন যদি শিশুরা এ-জাতীয় খাবার বেশি খায়, তবে অন্য খাবার খেতে তাদের মধ্যে অনিহা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। বড়দের মধ্যেও এ-সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার খেলে শরীরের কী ক্ষতি হতে পারে, এ নিয়ে আমরা আলোচনা করলাম। এখন ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার খেলে যাদের সমস্যা হয়, তাদেরকে নিয়ে কিছু কথা বলব।

১. নারী

নারী-বন্ধুদের উচিত ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার কম খাওয়া। বিশেষ করে মাসের বিশেষ কয়েকটি দিনে ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার খেতে নিষেধ করেন বিশেষজ্ঞরা।

২. বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশু

আমরা জানি, সাধারণভাবে বৃদ্ধবৃদ্ধা ও শিশুদের রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট করে। এ-জন্য শরীরের তাপ বেশি ব্যয় হয়। এতে বিশেষ করে বৃদ্ধবৃদ্ধা ও শিশুরা শারীরিক সমস্যায় পড়তে পারে।

৩. স্থুল ব্যক্তি

আমরা জানি যে, সাধারণভাবে ঠাণ্ডাজাতীয় খাবারের মধ্যে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। বেশি খেলে অতিরিক্ত চর্বি হিসেবে এটি আমাদের শরীরে যুক্ত হয়। মনে রাখতে হবে, আমাদের শরীরের তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে থাকে। তাই গরমের অনুভূতি হলেও, উষ্ণ পানি পান করুন। অনেকে গরম থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য প্রতিদিন আইসক্রিম খেয়ে থাকেন। সেটি পুরোপুরি ভুল। বিশেষ করে স্থুল ব্যক্তিদের জন্য এটা বেশি খারাপ।

৪. ক্যালসিয়ামের অভাবযুক্ত ব্যক্তি

সাধারণত ঠাণ্ডাজাতীয় খাবারের মধ্যে ফ্লেভার ও মশলা যুক্ত করা হয়, যা শরীরের ক্যালসিয়ামের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। ফলে রক্তনালীর ভিতরে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয়। আর শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে শিশুদের হাড় সুষ্ঠুভাবে পরিপক্ক হয়ে উঠতে পারে না। প্রবীণরাও হাড় ভেঙে যাওয়া এবং পেশীর ব্যথাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে পারেন।

প্রশ্ন হচ্ছে: ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার কখন খাবেন এবং কীভাবে খেলে শরীরের জন্য ক্ষতি কম হবে? এই ক্ষেত্রে ৫টি পরামর্শ দিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

পরামর্শ ১. ঠিক সময় খাওয়া

ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার মূল খাদ্য গ্রহণের আগে ও পরে না-খাওয়া ভালো। সাধারণত খাদ্যগ্রহণের ৩০ মিনিট পরে বা দুপুরে বিশ্রামের পর পরিমিত মাত্রায় ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার খেতে পারেন। ঠান্ডা পানীয় সাধারণত বিকেল ৩টায় পান করা ভাল।

পরামর্শ ২. পরিমিত খাওয়া

সাধারণ আকারের দুটোর বেশি আইসক্রিম একবারে খাওয়া ঠিক নয়। একবারে ১৫০ মিলিলিটারের বেশি ঠাণ্ডা পানীয়ও পান করা উচিত নয়।

পরামর্শ ৩. আস্তে আস্তে খাওয়া

ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার মুখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গিলে ফেলবেন না। খাবারটা মুখে রাখুন এবং আস্তে আস্তে গিলুন। এতে গলা ও পাকস্থলীর ওপর চাপ কম পড়বে।

পরামর্শ ৪. ঘাম ঝড়ানোর পর খাওয়া নিষিদ্ধ

বাইরে থেকে বাসায় ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে বা শরীরচর্চায় অনেক ঘাম ঝড়ানোর পর পরই ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার বা ঠাণ্ডা পানীয় পান করবেন না। এতে আপনার শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় থাকবে না।

পরামর্শ ৫. ফ্রিজে বেশি দিন রেখে খাবেন না

ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বা কোল্ড ড্রিঙ্কস বের করার অন্তত আধা ঘণ্টা পর তা খাওয়া যায়। আরেকটি কথা, ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার দোকান থেকে কেনার পর, সরাসরি খাওয়া ভাল। যদি ফ্রিজে রাখতে হয়, তাহলে বেশি দিন রাখবেন না। যে আইসক্রিম ইতোমধ্যেই গলে গেছে, তা পুনরায় ফ্রিজে রাখবেন না।

(ওয়াং হাইমান/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040