দেশের ১৩০ কোটি মানুষের আহারের ব্যবস্থা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: চীনা প্রধানমন্ত্রী (অর্থ-কড়ি ; ১৬ জুন ২০১৮)
  2018-06-16 13:31:14  cri


১. চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং বলেছেন, দেশের ১৩০ কোটি মানুষের আহারের ব্যবস্থা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই কৃষিখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, জলসেচ-ব্যবস্থা আরও উন্নত, এবং পরিবহন-অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। তিনি সম্প্রতি হুনান প্রদেশের হেং ইয়াং ও ছাংশা পরিদর্শনকালে এ-সব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় অবস্থা অনুযায়ী কৃষির যথাযথ উন্নয়ন এবং কৃষিপণ্যের মান ও কৃষকদের আয় বৃদ্ধির জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে। এসময় হেং ইয়াংয়ের কৃষকরা ধানচাষের খরচ ও মুনাফা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।

বাইশাচৌ শিল্পক্ষেত্র পরিদর্শনের সময় লি খ্য ছিয়াং বলেন, পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প স্থানান্তর অর্থনৈতিক উন্নয়ননীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং সুষম ও সমন্বিত উন্নয়নের জন্য অনুকূল।

সানই গ্রুপ পরিদর্শনের সময় লি খ্য ছিয়াং বলেন, পণ্যের মান বাড়াতে হবে এবং এক্ষেত্রে বিশ্বমানে পৌঁছাতে হবে। তিনি শিল্পের জন্য আরও উন্নত ও উন্মুক্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা এবং এ-খাতে প্রতিভাবান ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সফরকালে তিনি জার্মান প্রতিষ্ঠান বোসের (Bosch) ছাংশা শাখা পরিদর্শন করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী প্রতিষ্ঠানটিকে চীনা বাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য উত্সাহ দেন। তিনি বলেন, চীন উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া আরও জোরদার করবে।

২. সম্প্রতি চীন ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি সমঝোতা-স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই সমঝোতা অনুসারে, জিম্বাবুয়েতে একটি স্টিল ফ্যাক্টরি নির্মাণ করবে চীন। ফ্যাক্টরিটিতে বছরে ২০ লাখ টন স্টিল উত্পাদিত হবে।

চার দিনব্যাপী জিম্বাবুয়ে-চীন বিজনেস ফোরামে এ-ছাড়া আরও একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফোরামে চীনের চেচিয়াং প্রদেশের একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে।

চীনা প্রতিনিধিদলের প্রধান চে চুন বলেন, জিম্বাবুয়ের অর্থনীতির শিল্পায়নে সাহায্য করতে এবং বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজতে তারা এখানে এসেছেন। এর আগে গত এপ্রিলে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন মানগাগাওয়া চীন সফর করেন।

ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট দু'দেশের বিনিয়োগকারীদেরকেই দ্বিপক্ষীয় সুসম্পর্কের সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে জিম্বাবুয়েকে মধ্যম-আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য অর্জনে তারা চীন থেকে ব্যাপক বিনিয়োগ আশা করছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে চেচিয়াং প্রদেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশটির সঙ্গে চীনের মোট বাণিজ্যের ১২ শতাংশ।

৩. চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ৩.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। সম্প্রতি 'কনফারেন্স বোর্ড' এক প্রতিবেদনে এ-পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থা ফেব্রুয়ারিতে ৩.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল।

প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ৩ শতাংশ, ইউরো অঞ্চলে ২ শতাংশ, ও যুক্তরাজ্যে ০.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছর বিশ্বের উদীয়মান দেশগুলোর অর্থনীতিতে গড়ে ৩.৯ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

৪. আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দে যুক্তরাষ্ট্রের সংরক্ষণবাদী বাণিজ্যনীতির সমালোচনা করে বলেছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির আকাশের কালো মেঘ ক্রমশ ঘণীভূত হচ্ছে। তিনি সম্প্রতি বার্লিনে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল এবং বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, আর্থিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, ও আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংকের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বার্ষিক বৈঠকশেষে এ-মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যের সামনের চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্বের অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই মুহূর্তে কার্যকর বহুপক্ষবাদের প্রয়োজনীয়তা ইতিহাসের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

এদিকে, আইএমএফের পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছর ও ২০১৯ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ৩.৯ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

এর আগে কানাডায় অনুষ্ঠিত বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর জোট জি৭-এর শীর্ষ সম্মেলন চরম অনিশ্চয়তা এবং বিতর্কের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষ মুহূর্তে যৌথ বিবৃতিতে সই করতে অস্বীকৃতি জানান। তাঁর এমন আচরণকে 'গুরুতর' এবং 'হতাশাজনক' বলে উল্লেখ করেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল। এখন যদি ইউরোপ পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, তবে ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে একধরনের বাণিজ্য-যুদ্ধ লেগে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

৫. ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলীয় হাই দুয়ং প্রদেশ চলতি বছর এক হাজার টন বিশেষ ধরনের লিচু রফতানি করবে। সম্প্রতি প্রদেশটির স্থানীয় সরকার জানিয়েছে, 'থিউ' নামক এই বিশেষ ধরনের লিচু যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ। এই লিচু চীনেও রফতানি হয়ে থাকে।

হাই দুয়ং প্রদেশে বর্তমানে সাড়ে দশ হাজার হেক্টর জমিতে এই লিচুর গাছ আছে। এসব গাছ থেকে বছরে গড়ে ৬০ হাজার টন লিচু উত্পাদিত হয়।

এদিকে, ভিয়েতনামের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রে আপেল ও আম; জাপানে লাল ড্রাগন ফল; এবং অস্ট্রেলিয়ায় লিচু, লঙ্গন ইত্যাদি ফল রফতানির জন্য দরকষাকষি করছে।

চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ভিয়েতনাম ফল ও সবজি রফতানি করে প্রায় ১৭০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে, যা গত বছরের একই সময়ে চেয়ে ১৯.৬ শতাংশ বেশি।

৬. বাংলাদেশের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যাশিত স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। উন্নয়ন পরিকল্পনার সঠিক তদারকি ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নে নজরদারি বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট কৌশলগত পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছে সংস্থাটি।

সম্প্রতি এক বিবৃতিতে টিআইবি বাজেটে সরকারি আয় বৃদ্ধিতে বর্ধিত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আরোপের প্রস্তাবের প্রভাব এবং সংকটাপন্ন ও অনিয়মে জর্জরিত ব্যাংক খাত সংস্কারে প্রতিশ্রুত উদ্যোগ না-থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। পাশাপাশি বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের সংখ্যা ও মাসিক ভাতার হার বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের নারী উন্নয়নে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অন্যায় যোগসাজশের ফলে ধুঁকতে থাকা ব্যাংক খাত সংস্কারে বাজেট প্রস্তাবে কোনো উদ্যোগ না-থাকা, আমানতকারীদের আস্থার সঙ্গে সরকারের প্রতিশ্রুতির অন্যায্য বরখেলাপ। ব্যাংকব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ ও যোগসাজশের সঙ্গে দুর্নীতিবাজ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনার উদ্যোগ না-নিয়ে বিদ্যমান করপোরেট কর হার কমানোর প্রস্তাবও অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক। বিশেষ কৌশলে কালোটাকা সাদা করার সুযোগও অসাংবিধানিক, অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতির সহায়ক।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাজেট প্রস্তাবনায় সরকারি আয় বৃদ্ধির জন্য নেওয়া বেশির ভাগ মৌলিক চাহিদার ওপর কর আরোপের ফলে আদতে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষের ওপর এর তীব্র প্রভাব পড়বে, যা সার্বিকভাবে সমাজে আয়বৈষম্য ও অসাম্য-বিভেদ বৃদ্ধিতেই ভূমিকা রাখবে। উদ্বেগজনক মাত্রায় বাড়তে থাকা বেকার তরুণদের কর্মসংস্থান নিয়ে বাজেট প্রস্তাবনায় উল্লেখযোগ্য ও দিকনির্দেশনামূলক কোনো উদ্যোগ বা পরিকল্পনা না-থাকাটা দুঃখজনক ও হতাশাজনক।

৭. বিদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য-ঘাটতি ১৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, যা অতীতের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক ব্যালেন্স অব পেমেন্টের হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে পণ্য-বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৫৩৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ের প্রায় দ্বিগুণ।

৮. ২০১৬–১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় ২০০০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী। সম্প্রতি জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ-তথ্য জানান।

মন্ত্রী জানান, ২০১৬–১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের নিট লোকসান ছিল ১৮৫২ কোটি ৯৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। ওই অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ১২৮৯ কোটি ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকা এবং ব্যয় ছিল ৩১৪২ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

রেলমন্ত্রী আরও জানান, ২০১৩–১৪ অর্থবছরে রেলের যাত্রী ছিল ৬ কোটি ৪৯ লাখ, ২০১৪–১৫ অর্থবছরে ছিল ৬ কোটি ৭৩ লাখ, ২০১৫–১৬ অর্থবছরে ৭ কোটি ৮০ হাজার এবং ২০১৬–১৭ অর্থবছরে যাত্রী ছিল ৭ কোটি ৭৮ লাখ।

৯. বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০১৯ সালে ৬.৭ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে আরও জানায়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশ হতে পারে। অভ্যন্তরীণ ভোগ ও রফতানি বৃদ্ধির ফলে ২০২০ সালে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলেও প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040