মিয়ানমারে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস গতকাল (সোমবার) দেশটির উত্তর-পশ্চিম রাখাইন রাজ্যের পুরাতন শহর মারুক ইউ-এর গ্রামীণ অঞ্চলে সেতু নির্মাণের জন্য ডক্টর সো ম্রা আং ফাউন্ডেশনকে অনুদান দেয়। চীন আশা করে, রাখাইন রাজ্যের সমাজ ও অর্থনীতিতে সহায়তা দেওয়ার মধ্যমে স্থানীয় সমস্যা সমাধান হবে।
মিয়ানমারে চীনা রাষ্ট্রদূত হং লিয়াং এদিন অনুষ্ঠিত অনুদান অনুষ্ঠানে বলেন, ২ কোটি কিয়াত (প্রায় ১ লাখ ইউয়ান) অর্থ মারুক ইউ-এর দু'টি সেতু নির্মাণে বরাদ্দ করা হবে। হং লিয়াং বলেন, মারুক ইউ মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ একটি পুরাতন নগর এবং রাখাইন রাজ্যের সাংস্কৃতিক প্রতীকের অন্যতম। মারুক ইউয়ের উন্নয়ন সারা রাখাইন রাজ্যের উন্নয়নের জন্য অর্থবহ এবং এতে চলমান অনেক সমস্যাও সমাধান হবে।
ঐতিহাসিক কারণে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থিত রাখাইন রাজ্যে ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসী মানুষের মধ্যে দীর্ঘকালীন দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ ছিল। কখনও কখনও ঘটে যাওয়া সংঘাত যেমন স্থানীয় মানুষের উত্পাদন ও জীবনযাপনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে, তেমনি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ শান্তি প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে বলে আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
গেল বছরের নভেম্বর মাসে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই মিয়ানমার সফরকালে রাখাইন রাজ্য বিষয় নিয়ে চীনের 'তিন পর্যায়' সমাধান পরিকল্পনার পরামর্শ তুলে ধরেন। পরামর্শে স্থানীয় দারিদ্র বিমোচন কাজে আন্তর্জাতিক সমাজকে সমর্থন ও বিনিয়োগের আহবান জানানো হয়। দারিদ্র বিমোচনের মাধ্যমে উন্নয়ন বাস্তবায়ন হবে এবং তারপর স্থিতিশীলতা দেখা যাবে। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত হং লিয়াং বলেন, মিয়ানমারের সরকার ও নানা সামাজিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করে রাখাইন রাজ্যের দারিদ্র বিমোচন কাজে নিজের অবদান রাখার সিদ্ধান্ত নেয় চীন।
ডক্টর সো ম্রা আং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান টিন মে আং অনুষ্ঠানে জানান, চীনের অনুদান একটি নতুন সেতু নির্মাণ এবং একটি সেতুর পুনরায় নির্মাণে ব্যবহার করা হবে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের ১৪টি রাজ্যের মধ্যে রাখাইন সবচেয়ে দরিদ্র এবং এখানে নদীর সংখ্যা বেশি। যারা এখানে বাস করে তাদের জন্য সেতু প্রয়োজন। অনেক স্কুল ও ছাত্রছাত্রীদের বাসা নদীর দু তীরে অবস্থিত বলে শিক্ষার্থীদেরকে স্কুলে যেতে চাইলে সেতুর মাধ্যমে যেতে হয়। সেতু ছাড়া, নৌকা ব্যবহারের কারণে ঝড় ও বৃষ্টিতে নৌকা সহজে ডুবে যাওয়ায় প্রতি বছর অনেক শিশু প্রাণ হারায়। তাই এ অঞ্চলে আমরা যত বেশি সম্ভব সেতু নির্মাণ করতে চাই। আমরা খুব খুশি যে চীনা দূতাবাস আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক এবং এটা আমাদের প্রথম প্রকল্প।
টিন মে আং আরো জানিয়েছেন, তারা এখন চীনা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সহযোগিতা করে রাখাইন রাজ্যে একটি পানি পরিশোধন প্রকল্প শুরু করবে। তাছাড়া, চীনের সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগ ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ তহবিলের সঙ্গে সহযোগিতা করে মারুক ইউকে ইউনেস্কোর বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নামতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করাতে চেষ্টা চালিয়েছেন।
ডক্টর সো ম্রা আং ফাউন্ডেশনের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, চীনা বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তিগত সহায়তা দেন। চীনের ৫৩টি বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে এবং আবেদনের বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা বেশি। তাছাড়া, চীনা বিশেষজ্ঞদের উন্নত সরঞ্জাম ও প্রচুর তথ্য আছে, তারাও মারুক ইউ শহরের উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরিতে সাহায্য দেন। চীনা বিশেষজ্ঞদের সহায়তা দেখে আমি খুব খুশি এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।(শিশির/টুটুল)