শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও)-র ২০১৮ সালের শীর্ষসম্মেলন চীনের ছিংতাও শহরে অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষ্যে চীনে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মাসুদ খালিদ বেইজিংয়ে চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই)-কে বিশেষ সাক্ষাত্কার দিয়েছেন। সাক্ষাত্কারে তিনি আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এবং অভিন্ন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় এসসিও-র ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং সংস্থাটিতে যোগদানের এক বছরে পাকিস্তানের অনুশীলনের স্বীকৃতি দেন। তিনি বলেন, তাঁর দেশ অন্য সদস্যদেশের সঙ্গে 'শাংহাই স্পিরিট' অনুসরণ করে সংস্থাটির উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, "শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা আগে বেশ সাফল্য অর্জন করে। নিরাপত্তা, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এসসিও কষ্ট কাটিয়ে উঠে অগ্রগতি অর্জন করেছে। সার্বিক দিক থেকে সংস্থাটি একটি নীতির কাঠামো তৈরি করে এবং সদস্যদেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করে"।
এর মধ্যে রাষ্ট্রদূত খালিদ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সংস্থাটির সহযোগিতার প্রশংসা করেন। তিনি মনে করেন, এসসিও সবসময় আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষাকে অগ্রাধিকার হিসেবে মনে করে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও শান্তি রক্ষায় প্রয়াস চালায়।
তিনি বলেন, আমরা জানি বিচ্ছিন্নতাবাদী, চরমপন্থী এবং সহিংস ও সশস্ত্র এ অঞ্চলের প্রধান হুমকি। যদি আমরা একসাথে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করি তাহলে সাফল্য অর্জন করতে পারি। যেমন তাসখন্দ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত এসসিও-র সন্ত্রাসদমন কেন্দ্র এতদাঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। তা ছাড়া, এসসিও-র সদস্যদেশগুলোর মধ্যে দীর্ঘকালীন সুপ্রতিবেশীসূলভ বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির কাঠামোতে সদস্যদেশগুলোর মধ্যে প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক, মৈত্রী ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক জোরদার হয়।
রাষ্ট্রদূত খালিদ মনে করেন, এসসিও নানা হুমকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাথে সাথে সদস্যদেশের স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন বজায় রাখে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন একটি পদ্ধতি সৃষ্টি করে। তিনি মনে করেন, সংস্থাটি নিরাপত্তা ও অর্থনীতির উন্নয়নে দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে যা খুবই ভাল।
তিনি বলেন, এসসিও-র আশা হলো সদস্যদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং এ অঞ্চলের সমৃদ্ধি বাস্তবায়ন করা। এ উদ্দেশ্য পূরণে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা দরকার। তাই এসসিও এ দুটি বিষয় নিয়ে একই সময়ে প্রচেষ্টা চালায়।
এসসিও-তে চীনের ভূমিকা নিয়ে খালিদ বলেন, চীন শান্তি উন্নয়ন বাস্তবায়ন করার সাথে সাথে আঞ্চলিক অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাবার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন আমরা আন্তঃযোগাযোগ, যুক্ত পরিবহন ও বাণিজ্যের কথা বলি তখন আমরা আবিষ্কার করি যে, চীন ছাড়া এ সবকিছু বাস্তবায়ন হবে না।
গেল বছর পাকিস্তান ও ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এসসিও-র সদস্যে পরিণত হয় এবং তাদের দৃষ্টিও আগের চেয়ে ভিন্ন হয়ে ওঠে। এসসিও-র ভবিষ্যত উন্নয়ন নিয়ে আস্থাশীল খালিদ। তিনি বিশ্বাস করেন, সদস্যদেশগুলো পারস্পরিক আস্থা, কল্যাণ, সমান ও সমন্বয়, বৈচিত্র্য সংস্কৃতিকে সম্মান করা এবং যৌথ উন্নয়নের 'শাংহাই স্পিরিট' অনুসরণ করে অব্যাহতভাবে অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এবং অভিন্ন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
তিনি বলেন, এসসিও-তে যোগ দেওয়ার এক বছরে, পাকিস্তান সার্বিকভাবে সংস্থাটির ব্যবস্থা ও পরিচালনা পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয় এবং নানা অভিযানে অংশ নেয়। পাকিস্তান ও ভারত সংস্থাটিতে যোগ দেওয়ার পর এসসিও বিশ্বে জনসংখ্যা ও আয়তনে বৃহত্তম একটি আঞ্চলিক সংস্থা হয়ে ওঠে। 'শাংহাই স্পিরিট' আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উন্নত একটি ধারণা। তিনি এসসিও-র ছিংতাও শীর্ষসম্মেলন স্বতস্ফূর্তভাবে আয়োজনে মঙ্গল কামনা করেন। (শিশির/টুটুল)