বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান : সাফল্য ও সমালোচনা
  2018-06-03 19:01:24  cri
বাংলাদেশে গত দুসপ্তাহেরও বেশি সময় ধর মাদক-বিরোধী অভিযান চলছে। ১৯ দিন ধরে চলা এ অভিযান সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ১২৯ জন। গ্রেপ্তার হয়েছে হাজারের বেশি সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি নিহত ও গ্রেপ্তার সকলেই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। কিন্তু বন্দুকযুদ্ধের নামে সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীদের হত্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশেষ করে ২৬ মে কক্সবাজারের পৌর কাউন্সিলর ও সাবেক যুবলীগ নেতা একারামুল হকের নিহত হওয়ার পার দেশ জুড়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। র‌্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, গোপন খবর পেয়ে র‌্যাবের একটি টিম নোয়াখালিয়া পাড়ায় ওই দিন অভিযানে গেলে ইয়াবা পাচারকারীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় বন্দুকযুদ্ধে একরামুল নিহত হন।

কিন্তু একরামুলের স্ত্রীর দাবি, একটি গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকে কিছু লোক শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার স্বামীকে ডেকে নিয়ে যায়। রাতে বিভিন্ন সময় তার সঙ্গে মোবাইলে কথাও হয়েছে তাদের। পরে তাকে মেরিন ড্রাইভে গুলি করে হত্যা করা হয়। একরামুলের স্বজন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। শত্রুতাবশত কেউ ভুল তথ্য দিয়ে তাকে ক্রসফায়ারে দিয়েছে।

বন্দুকযুদ্ধে একরামুলের নিহত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটি ভাইরাল হয়ে। দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা দেয়। র‌্যাবের দাবি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় একরামুলের নাম ছিল। কিন্তু পুলিশ বলছে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলার মধ্যে মারামারির মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। আর মাদকের মামলায় তার সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

মাদকবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে প্রথম দিকটায় দেশবাসীর সমর্থন ছিল। কিন্তু কথিত বন্দুকযুদ্ধে অনেক মানুষ নিহত হওয়ায় এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। আর একরামুলরে মৃত্যুর পর এটি গোটা অভিযানকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়। মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালসহ অনেকে এর তীব্র সমালোচনা করেন। বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহলে।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করে বন্দুকযুদ্ধে নিহতে ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের বিচারের আওতায় আনার তাগিদ দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জানান, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। এতে নিরীহ কোনো মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে না। যদি নিরপরাধ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হলে তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি দেয়া হবে।

পরবর্তীতে একরামের মৃত্যুর ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একজন ম্যাজিস্ট্রের নেতৃত্বে একরাম হত্যার তদন্ত হচ্ছে। তবে মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মাদকবিরোধী অভিযানের মতো একটা ভালো কাজে দুএকটি ভুল হতেই পারে। কোনো ধরনের চাপের মুখেই এ অভিযান বন্ধ করা হবে না। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কথা বলেছেন মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে। ৩০ মে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গডফাদারই হোক কিংবা ডন- কাউকেই ছাড়া হবে না ।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানসহ ১০ বিশিষ্টজন ২ জুন এক বিবৃতিতে মাদকবিরোধী অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যার সমালোচনা করেছেন। তারা বলেন কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এ ধরনের হত্যাকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধ এবং এর বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন তারা।

বাংলাদেশের মাদকবিরোধী অভিযানের প্রতি নজর রাখছে জাতিসংঘও। ভিয়েনা থেকে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিোধী সংস্থা ইউএনওডিসর মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তিনটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও বিশ্বে মাদক সমস্যা নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে গৃহীত নীতিমালার আলোকে মানবাধিকার রক্ষা করে মাদক নিয়ন্ত্রণে সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মান ও রীতিনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনি নিরাপত্তার মাধ্যমে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানাবো হয় বিবৃতিতে।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040